উইশ
রুমেলা দাস
স্কুল পরিদর্শক দেবদুলালবাবু একের পর এক চিঠিগুলো খুলছেন। বাঁকাচোরা হাতের অক্ষর, মোটা পেন্সিলে লেখা হয়েছে চিঠিগুলো। কাগজগুলোও খুব একটা পরিষ্কার নয়। কোনওটায় হলুদের ছোপ, কোনওটায় রাবার ঘষে ঘষে কালো হয়ে গেছে পাতাটা। মেয়েটা কি পাগল নাকি! সুনীলবাবু খুব অনুরোধ করেছেন, তাই এসব খুলে দেখতে হচ্ছে। নাহলে স্কুল থেকে ফিরেই উপরমহলে ওঁর ভার্বালি রিপোর্ট জানিয়ে ফোন করে দিতেন। কী ঝামেলার কাজ!
খুব বিরক্তি-ভরা মেজাজ নিয়ে দেবদুলালবাবু পড়া শুরু করলেন।
প্রথম চিঠি—‘আমি খিচুড়ি খেতে ভালোবাসি না।’
উফ্, এই কথাটার জন্য চিঠি!
দ্বিতীয় চিঠি—‘রতন পাশে বসলেই চিমটি কাটে।’
তৃতীয় চিঠি—“পড়া দিয়েছেন মাস্টারমশাই। বইটা মা সেদিন ভাইকে মারতে গিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছে!’
চতুর্থ চিঠি—‘আমি বই ভালোবাসি। অনেক গল্পও।’
পঞ্চম চিঠি—‘মাস্টারমশাই আমাদের গল্প বলেন, পড়া পারলে!’
মেয়েটা কি রচনা লিখতে শিখেছে? নাহ্, আর সময় নষ্ট করা যাবে না। সুনীলবাবু ‘সাবিত্রী প্রাথমিক’-এ বহাল হবেন এমনটা আপাতত ভাবা হয়েছে। কাগজগুলো টেবিলের উপর জড়ো করে সবেমাত্র ফোনটা করতে যাবেন ভাবছেন। হঠাৎ পাতলা একটা হাওয়া হুড়মুড়িয়ে জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ল ছেলেমানুষের মতো। আর ঠিক তখনই লাল রং করা কাগজটা উড়ে এসে পড়ল দেবদুলালবাবুর পায়ের কাছে। এটায় আবার রং করেছে! কী এক কৌতূহলবশত খুলে ফেললেন পাতাটা। আর তাতেই স্পষ্ট হয়ে উঠল গোটা কয়েকটা অক্ষর, ‘আমি খিচুড়ি খেতে ভালোবাসিনা। ক্লাসের পড়াগুলোও ঠিকঠাক বাড়িতে করতে পারি না। বাবা-মা যে সারাদিন কাজে থাকে, রাতেও অনেক দেরি করে ফেরে। ভাইকে সব করে দিতে হয় আমাকে। খুব ঝগড়া হয়। আমি মাস্টারমশাইয়ের গল্পগুলো ভাবি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। সেই গল্পটা, জাপানের… অনেকগুলো সারস তৈরি করলে মনের আশা পূরণ হয়। তাই আমি চিঠি লিখেছি। অনেক চিঠি। যদি সব ঠিক হয়ে যায়! আমি যে এখানে থাকতেই ভালোবাসি। ওই বিটকেল রতন, মাস্টারমশাইয়ের গল্প আর সবাই মিলে বসে আনন্দ করে থালায় খাওয়ার মজা না থাকলে আমার খুব কষ্ট লাগবে। আমাদের স্কুলটা বন্ধ করো না!’
কোথা থেকে তেতো ভাব দলা পাকিয়ে এল দেবদুলালবাবুর গলায়। ঝাপসা চোখে পাতাটা বন্ধ করলেন। রিপোর্টটা অন্যরকম লিখতে হবে। পনেরো নয়, ছাত্রসংখ্যা একশো ছাড়িয়েছে, এমনটা তো লেখাই যায়!
অলঙ্করণঃ অংশুমান
বাঃ খুব ভালো লাগল
LikeLike
ধন্যবাদ
LikeLike
বাহ! ভালো গল্প। কিন্তু আর কি নাম খুঁজে পাওয়া গেলপরিদর্শকের? শেষ পর্যন্ত দেবদুলাল বাবু!!!
LikeLike
বাহ! ভালো গল্প। কিন্তু আর কি নাম খুঁজে পাওয়া গেল না পরিদর্শকের? শেষ পর্যন্ত দেবদুলাল বাবু!!!
LikeLike
অনেক ধন্যবাদ দাদা। হা হা হা
LikeLike
অনেক ধন্যবাদ দাদা। হা হা হা
LikeLike