কেলেঙ্কারি
রাজীবকুমার সাহা
ক্লাস সেভেন তখন। হাফ-ইয়ারলির প্রথম পরীক্ষা। নিঝুম হলে আচমকা এক নাকি কান্নামতো কানে আসতে হতচকিত আমরা খাতা থেকে মাথা তুলে দেখি, দরজায় দাঁড়িয়ে এক ভদ্রমহিলা। জিজ্ঞেস করছেন, “একটু ভেতরে আসি, স্যার?”
অঙ্কস্যার সামান্য ভড়কে গিয়ে জানতে চান, “আ-আপনাকে তো ঠিক… হাতে ওটা কী?”
“দুটো রুটি আর এট্টু গুড়, স্যার। রঞ্জুটা সকালে এই একমুঠোটি খেয়েই চলে এসেছে। ইংরেজি পরীক্ষা তো, পেট নাকি গুড়গুড় করছিল।”
“দেখুন, এটা পরীক্ষার হল। গাঁয়ের স্কুল হলেও এভাবে হুট করে…” স্যারের গলা সামান্য কঠিন।
হাউমাউ করে উঠলেন ভদ্রমহিলা। “রঞ্জুটা আমার খিদে একদম সহ্য করতে পারে না। ওই দেখুন না, কেমন মাথা গুঁজে বসে।”
মুহূর্তে অন্তত পঞ্চাশ জোড়া চোখ গিয়ে পড়ে রঞ্জুর ওপর। মুখ লাল।
“দিই স্যার কৌটোটা ওকে? একটা রুটি অন্তত… ও তো স্যার আপনারই ছেলে। ওকে আপনার হাতেই দিলাম।”
বলেই ফোঁত ফোঁত করতে করতে মুখে আঁচল চেপে ছেলের দিকে ধেয়ে যান রঞ্জুর মা। অঙ্কস্যার সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারে বসে পড়লেন থপ করে। হেডস্যারকে একটা খবর পাঠানোর প্রয়োজনটাও মনে এল না তাঁর। প্রথম বেঞ্চে সিট পড়ায় আমার কানে এল স্যারের অস্ফুট গলা, “শোভনবাবু সেই যে গেলেন পান খেতে…”
রঞ্জুর মা ততক্ষণে একটুকরো রুটিতে গুড় পুর দিয়ে অনিচ্ছুক ছেলের মুখে পুরে দিয়েছেন। স্যার ফ্যালফ্যাল করে একটুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলেন, “এ নিয়ে ক’নম্বর?”
রঞ্জুর মা পালটা জিজ্ঞেস করেন, “কী, স্যার?”
“স্কুল। ক’দিন আগেই ছেলে টিসি নিয়ে এল কিনা।”
রঞ্জুর মা জবাব দিলেন না। ছেলেকে রুটি গিলিয়ে বেরিয়ে গেলেন। চোখমুখ পরিতৃপ্ত। পাক্কা আট মিনিট এক্সট্রা টাইম পেয়েছিলাম আমরা সেদিন।
অলঙ্করণঃ অংশুমান দাশ
এই তাহলে অণুগল্প! ছোট্ট কিন্তু বেশ মজার।
LikeLike