গার্ড অফ অনার
প্রতীক কুমার মুখার্জি
কমিশনারেট থেকে আসা ফোনের প্রাথমিক অস্বস্তিটা কথা বলার পর অনেকটাই কাটল অরিজিতার। অরিজিতা দত্তগুপ্ত, কলকাতার অগ্রগণ্য বেসরকারি হাসপাতালের চিফ কার্ডিওলজিস্ট। কমিশনারের অশীতিপর বাবাকে আজই একটা স্পেশাল চেক-আপ করে দিতে হবে, সম্পূর্ণ তার তত্ত্বাবধানে।
সাথে আসা নাতি ও দু’জন কনস্টেবলকে বাইরে বসিয়ে হুইল-চেয়ারের ভদ্রলোকের সামনাসামনি হল অরিজিতা। ঘোলাটে নজর, জরাগ্রস্ত, তামাটে চেহারা ঢাকা দামি পোশাক বেশ খাপছাড়া। কার্ডিয়াক ছাড়াও নিউরোর প্রবলেম আছে, পোড় খাওয়া চোখে ধরতেই আরেকটা আবিষ্কারে চোখমুখ শক্ত হল। দুর্দম আবেগে কাপতে থাকল সে। সেই বাঁ কপালজোড়া বিশাল জড়ুল, অবিকল অস্ট্রেলীয় মানচিত্র!
“জড়ুলকাকা, তুমি!”
শুনে ন্যুব্জ শরীরে হড়পা বানের উত্তেজনা ক্ষণস্থায়ী হয়েই স্তিমিত হল। শূন্যতা হাতড়ানো শীর্ণ হাতটা জাপটে ধরল অরিজিতা, “আমি কবরেজমশায়ের মেয়ে গো জড়ুলকাকা!”
স্বভাবতই জরার হাতে স্মৃতি গো-হারা হল।
ঘণ্টা দেড়েক পর ম্যাডাম নিজের হাতে হুইল-চেয়ার ঠেলে পেশেন্টকে এগিয়ে দিচ্ছেন দেখে সেটা শশব্যস্তে কেড়ে নেওয়া হল। এ যে ‘গার্ড অফ অনার’ কেউ বুঝলে তো!
ওঁর যাত্রাপথের দিকে নির্নিমেষে তাকিয়ে থাকা ম্যাডামের মন তখন চন্দননগরের রাস্তায় জড়ুলকাকার রিকশা চেপে স্কুলে চলেছে, তাঁর ছেলের লেখাপড়ার সাফল্যের অনর্গল ধারাবিবরণী শুনতে শুনতে।
অলঙ্করণঃ ইন্দ্রশেখর