উত্তরাধুনিক
অরুণাচল দত্ত চৌধুরী
“আপনার বাড়ি কি এদিকেই?”
“হ্যাঁ, কেন বলুন তো?”
“না, মানে আমার বাড়িটা খুঁজে পাচ্ছি না।”
“নিজের বাড়ি খুঁজে পাচ্ছেন না মানে তো স্মৃতিভ্রংশ। মাথায় চোট-টোট লেগেছিল নাকি? চিন্তার কিছু নেই। সামনে মোড়ের মাথায়ই জগবন্ধু ডাক্তারের দোকান। দু’পা হেঁটে যান না।”
“জগবন্ধু, ইয়ে ওই ডাক্তার জগবন্ধু কি আমার বাড়ি চেনেন?”
“আরে না না, তা বলিনি তো। আপনি নিজেই যাতে নিজের বাড়ি চিনতে পারেন তার ব্যবস্থা করে দেবে।
হরবখত স্মৃতি মেরামত করছে সে। তবে জগবন্ধু বোধ করি বাড়িতে খেতে গেছে। গেলেও চিন্তা নেই। ওর ছোকরা টেকনিশিয়ানটা আছে। স্মৃতির ছোটোখাটো সমস্যা হলে ওই সারিয়ে দেবে এখন। কিন্তু সার্কিট পাল্টাতে হলে দেরিই হবে। জগবন্ধু ওর আলমারির চাবিটা সাথে নিয়ে যায় কিনা।”
“ধুত, আমি কোনও সার্কিট খুঁজছি না। গিন্নির জুতো কিনতে বেরিয়েছি। জুতোটা কিনে ভাবলাম ওর আর আমার পায়ের সাইজ তো একই। নতুন জুতোটা পড়ে একটু হেঁটে দেখি। হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেলাম। আর তারপর থেকেই বাড়ি যাবার রাস্তাটা খুঁজে পাচ্ছি না।”
“ওহ্, প্রণাম নিন মহাপূর্বপুরুষ। তবে তো আপনি ঠিক জায়গায়ই পৌঁছেছেন।”
“বললেই হল ঠিক জায়গা? আমার বাড়িটা…”
“আরে সেই কথাই তো বলছি। ঠিক জায়গা মানে ঠিক এইসময়ে এখানে আমার সাথে দেখা হওয়াটা। আমিও তো এই জন্যেই এখানে এসেছি। সঠিক প্রমাণ না পেলে কাজটা কঠিন হয়ে যেত বেজায়।”
“যাহ্ বাবা! কী সব উলটোপালটা কথা…”
“আজ্ঞে, বুঝতে পারলে উলটোপালটা কিছুই না। আমি হলাম সময়-ইঞ্জিনিয়ার। রিপোর্ট পাচ্ছিলাম, এই পয়েন্টে এসে সময়ের চাদরটা সামান্য কুঁচকে গিয়ে ভূত-ভবিষ্যৎ বদলে দিচ্ছে। সলিড প্রমাণ না পেলে কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছিল না। আপনাকে পেয়ে গেলাম। নিশ্চিন্ত হলাম। এবার মাপজোক করে চাদরটা টানটান করে বিছিয়ে দিলেই কাজ শেষ। আপনি পৌঁছে যাবেন অতীতে নিজের সময়ে। আর বাড়ি ফেরার রাস্তাটাও পেয়ে যাবেন।”
“বুঝিনি। পুরোটা না বুঝলেও তাই একটু করুন মশাই। এমনিতেই বাড়িতে ফিরে বকুনি খাব। গিন্নি বলেছিল আল্ট্রামডার্ন জুতো কিনতে। তেমন কোনও কিছুই পেলাম না দোকানে। তাই কাজ চালানো এটাই।”
“ইয়ে, বলছিলাম কী, আমার গিন্নিরও খুব শখ ওই জুতোর। যে সে জুতো নয়, যত ভিন্টেজ আদ্যিকালের। আপনারটা আমাকে দিয়ে আমার গিন্নির সদ্য কেনা জুতোজোড়া নিয়ে যান না কেন। আমার উনি বড্ড খুশি হবেন পুরনো দিনের এই নতুন জুতোজোড়া পেয়ে। আপনার উনিও।”
“মানে, আপনার গিন্নির জুতোটা আল্ট্রামডার্ন হবে বলছেন?”
“ধুত, আধুনিক ঠিক নয়, একেবারে উত্তর আধুনিক। বুঝিয়ে বলবেন দু’হাজার তিনশো তেপ্পান্ন বছর পরের।”
অলঙ্করণঃ অংশুমান
অল্প কথায় বেশ সুন্দর কল্প বিজ্ঞান
LikeLike
এ যে আইনস্টাইনকে ধরে টান। যা হোক্। টেকনিকটা ভালো লাগলো। দেখি গৃহিনীর উপর প্রয়োগ করা যায় কিনা। ভয় একটাই বুমেরাং হয়ে, আমার দিকেই না ফিরে আসে !
LikeLike