চড়ুই
নন্দিনী চট্টোপাধ্যায় (দাস)
পুরনো ধাঁচের রেল কোয়ার্টারের সিলিংয়ে বাসা বেঁধেছে চড়ুই আর চড়ুইনি। তাদের ছোট্ট ছানাটার এখনও চোখ ফোটেনি। তাই মা-বাবা পালা করে তাকে পাহারা দেয়। নিজেদের ঠোঁটে মিহি করা খাবার গুঁজে দেয় ছানার হাঁ করা ঠোঁটের ফাঁকে। আর দেখে নিচের বাসাটাকে। সে বাসায় আছে ছোট্ট মানুষ-ছানা পুটুস। আর তার মা-বাবা। পুটুস হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে হাঁটে, মায়ের সাথে লুকোচুরি খেলে। চড়ুই-চড়ুইনি ভাবে কবে তাদের ছানার চোখ ফুটবে, সেও পুটুসের মতো হাঁটতে শিখবে। ছোট্ট ছানাকে তার ডানার মধ্যে মুড়ে নিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে চড়ুইনি—আকাশের বুকে উড়ে বেড়াচ্ছে তারা দু’জন, মাঝখানে অপটু ডানায় উড়ছে তাদের ছানা।
একদিন সত্যি-সত্যিই ছানার চোখ ফুটল, ডানায় মিহি পালক গজাল। মা আর বাবা চড়ুই তখন ছানাকে নিয়ে নামল মেঝেতে যেখানে পুটুস মায়ের কোলে বসে ছবির বই নিয়ে ছবি দেখছে। পুটুস ছোট্ট দু’হাত ভর্তি করে দানা ছড়িয়ে দেয়, চড়ুই-চড়ুইনি খুঁটে খায়। দেখে ছানাও তাদের মতো খাবার খুঁটে ঠোঁটে তুলছে। আনন্দে চড়ুই-চড়ুইনি দু’পাক নেচে নেয়।
ছানা এখন বেশ উড়তে শিখেছে। একদিন তাই তার মা-বাবা তাকে নিয়ে এল পুটুসদের শোবার ঘরের জানালায়। তারপর দু’জনে উড়ে গিয়ে বসল সামনের টগরগাছের ডালে। দেখাদেখি ছানা-চড়ুইও। বেশ মজা! ছানা-চড়ুই একবার জানালায় বসে তো একবার টগরগাছের ডালে। পুটুস আর তার মা দেখে চড়ুইছানার খেলা।
পাশের কোয়ার্টারের সাদা বেড়ালটা কখন নিঃশব্দে গুঁড়ি মেরে গাছে উঠেছে কেউ টের পায়নি।
মুহূর্তে সব শেষ। টগরগাছের চারপাশে চড়ুই-চড়ুইনি পাখা ঝাপটে আর্তনাদ করে, বেড়ালটা তখন ঠোঁট চাটতে চাটতে সীমানা পাঁচিলের ওপারে। পুটুসের মায়ের দু’চোখে ভয়, বুকের মধ্যে পুটুসকে জড়িয়ে ধরে প্রাণপণে।
অলঙ্করণঃ অংশুমান
ইস, কী ভয়ংকর পরিণতি!
LikeLike
ধন্যবাদ। কী করা যাবে, জীবজগতের নিয়ম!
LikeLike
আহা, দারুণ
LikeLike
ধন্যবাদ
LikeLike