জাগরী
কৌশিক ভট্টাচার্য
— ট্রেনে ঘুম হয় না আপনার?
— নাঃ।
এক কথাতে উত্তরটা দিয়ে ক্যুপের সহযাত্রীর দিকে তাকালাম। লম্বা ছিপছিপে চেহারা, সরু কোমর, চওড়া কাঁধ, দৃঢ় পেশীবদ্ধ চোয়াল — কিন্তু নজরটা যেন কেমন। একদৃষ্টে আমাকে দেখে যাচ্ছে লোকটা। আঠার মতন চোখ লেগে আছে আমার শরীরে। মাছের মতো ঠাণ্ডা চোখ। মেয়েদের দিকে এভাবে যারা তাকায় তারা কি খুব স্বাভাবিক?
জানি, দুজনের এসি ফার্স্ট ক্লাস ক্যুপ একলা কোনো মেয়ের পক্ষে সেফ নয়। আমার ইচ্ছে ছিলো না ট্রেনে যাবার। কিন্তু এবারে যে শহরে কনফারেন্স হচ্ছে তার আশেপাশে কোনো এয়ারপোর্ট নেই।
–একদম ঘুম হয় না? সারারাত জেগেই কাটান তাহলে, অ্যাঁ?
বিপদের গন্ধ পাচ্ছি। লোকটার মুখে একটা দেঁতো হাসি। শিকারী বেড়ালের হাসি। এ হাসি আমার চেনা। বেড়ালের সারা দেহটা হাসে, জ্বলজ্বলে দুটো চোখ কিন্তু সেই ইঁদুরের দিকে।
— আমারও একফোঁটা ঘুম আসে না ট্রেনে। তাই ভাবলাম আপনাকে একটু বিরক্ত করি।
বিরক্ত করা? উদ্দেশ্যটা কি? টিটি কই? কোনো পুলিশ নেই কামরায়?
— দেখলাম আপনি না খেয়ে না দেয়ে রোবো নিয়ে পড়েই চলেছেন, পড়েই চলেছেন। তাই কৌতূহল হলো আর কি!
কৌতূহল কি সত্যিই আমার পড়াশুনো নিয়ে?লোকটার এই গায়ে পড়া ভাবটা একটুও ভালো লাগছে না আমার। ধান্ধাটা কি?
— আপনি কি গবেষণা করেন রোবো নিয়ে?
— কেন বলুন তো?
— না, জার্নাল পড়ছিলেন তো!
আচ্ছা নজর তো। কোথায় নিজের চরকায় তেল দিবি তা না …
— আচ্ছা আপনার কি মনে হয়? এই যে রোবোদের বেশি বুদ্ধি দিতে নেই বলা হয়, সেটা কি ঠিক?
— কেন? রোবোরা বুদ্ধিমান হলে আপনার বুঝি লাভ নেই?
— বাঃ, আমরা যন্ত্র চালাবো না যন্ত্র আমাদের চালাবে?
— কেন? এ তো সোজা উত্তর! যন্ত্রই চালাবে আপনাদের। চালাচ্ছে তো, টের পান নি বুঝি?
— মানে? কি বলছেন একদম বুঝতে পারছি না।
— বুঝতে পারছেন না? যা বলছি সেটা খুব মন দিয়ে শুনুন তাহলে …
তর্জনীদুটো একটু ভাঁজ করে আস্তে আস্তে গাইতে থাকি, “আয় ঘুম, আয় ঘুম, বদ্যিপাড়া দিয়ে।”
দেখতে দেখতে গভীর ঘুমে ঢলে পড়ে লোকটা।
বড্ড বেশি গায়ে পড়ছিলো। অকারণে বেশি বকা পছন্দ নয় আমার।
মুস্কিল হলো আঙুল ভাঁজ করে সমনো ওয়েভ চালু করলে ব্যাটারির চার্জ ভীষণ কমে যায়। মাথাটা খুলে গলার ভিতর থেকে তারসমেত মেল প্লাগটা বের করে কামরার প্লাগ পয়েন্টে লাগিয়ে দেই চার্জ করতে।
অলঙ্করণঃ অংশুমান দাশ
ranju,
darun,chamatkar.
boromama ghum chokhe toke bujhte pareni
LikeLike