টাক ও চুরি
হীরক সেন
“বিদেশে শুনেছি এদেশের চুলের খুব কদর, গুচ্ছ গুচ্ছ চুল রোজ রপ্তানি হচ্ছে। তা বলে চুলের স্মাগলিং? কী বলছেন আপনি?” থানার বড়বাবু চোখ গোল গোল করে প্রশ্ন করলেন ভাদুড়িকে।
রজত ভাদুড়ি একটু মুচকি হাসলেন। “আমি সম্ভাবনার কথা বলছি। আমাদের কাজে প্রথম শর্তই হচ্ছে, কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। আপনি এবার কেসটা ডিটেইলে বলুন।”
“ডিটেইলের এর কিছু নেই। প্রথম ভিক্টিম, শুভময় হালদার। জানালা খোলা রেখে, সেই দিকে মাথা দিয়ে ঘুমুচ্ছিলেন। সকালে উঠে দ্যাখেন মাথা সাফ। যত্ন করে তেলও মাখিয়ে গেছে টাকে। দ্বিতীয়, কৌশিক মণ্ডল। রাতে ঘুম আসছিল না। বারান্দায় এসে বসেছিলেন। চোখ লেগে যায়। সকালে ময়দান সাফ। তৃতীয় বিশাল, পদবি মনে আসছে না। এরও জানালার ধারে খাট। তবে এর ঘুম ভেঙে যায়। তাই অর্ধেক মাথাই কামাতে পেরেছে।”
“কতদিনের গ্যাপ ঘটনাগুলোর?”
“এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটেই। আর শুনুন, আপনাকে যে সব জানাচ্ছি, তার একটা শর্ত আছে।”
“এলিমেন্টারি। কেসটা সলভ করে আপনাকে জানাতে হবে যাতে অফিসিয়াল ক্রেডিট আপনিই পান। তাই হবে। এবার বলুন এ-পাড়ায় টেকো লোক ক’জন আছেন?”
“এ পাড়ায়? একজন তো এখনই মনে পড়ছে, গলির মোড়ের ভটচাজবাবু। যত্নলালিত টাক। আর হ্যাঁ, মিষ্টির দোকানের উপরের সেন সাহেবও হঠাৎ করে চুল কামিয়েছেন, কোনও কারণ ছাড়াই। কিন্তু তাতে কী হবে?”
“প্রতিহিংসাও হতে পারে। বললাম না, কোনও সম্ভাবনাই… শুনুন। ফুল টেকো, হাফ টেকো, প্রায় টেকো এদের সবার একটা লিস্ট করে রাখবেন, লাগবে। এখন আমি আসছি।”
“হ্যালো বড়বাবু, আমি ভাদুড়ি। গত ক’দিন ছদ্মবেশে ভটচাজ আর সেনকে ফলো করলাম। গতিবিধি বেশ সন্দেহজনক। আর আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্র তো নিশ্চিতভাবে জড়িত এই কেসে। সব তথ্য জোগাড় করছি। কী বলছেন? কেস সলভড? কী? ভগবান ধরে ফেলেছে? এর মধ্যে ভগবান এল কী করে?”
“আরে, ভগবান মানে ওই ভগবান নয়। ভগবান পাঁড়ে। আমাদের হাবিলদার। রাতে রোঁদে বেরিয়েছিল। ব্যাটা সন্দেহজনকভাবে ঘুরছিল। ব্যস, ক্যাচ কট কট। আরে আমাদের হারু নাপিত। ওই তিনজনই ওর বাঁধা খদ্দের ছিল। গতমাস থেকে ওকে ছেড়ে পাড়ার মোড়ের নতুন পার্লারে যাচ্ছিল। তাই প্রতিহিংসা। আপনিই তো বলেছিলেন… আপনি তদন্ত চালিয়ে যান। তবে আমাকে আর জানাতে হবে না, আন্তর্জাতিক ব্যাপার তো। সি.আই.এ বা কে.জি.বিকে জানালেই হবে।”
অলঙ্করণঃ অংশুমান