ডাইসেকশন
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়
– রক্তারক্তি কাণ্ড মশাই! আপনার ছেলে তো ডাকাত হবে দেখছি! সবে ক্লাস ওয়ান! আর পাঁচটা ছেলেও তো দেখছে স্কুলে, না কি? কী যে শিক্ষা দিয়েছেন আপনারাই জানেন।
-না মানে ম্যাম, ছেলেটা এমনিতে হাতে পায়ে দুরন্ত ঠিকই, কিন্তু ভায়লেন্ট না কখনোই। আমি কথা বলে দেখছি ওর সঙ্গে।
-কথা বলবেন মানে? এটা কি দুই দেশের মধ্যে বাইল্যাটেরাল ডিসকাশন নাকি? সাইকোলজিস্ট দেখান। রিপোর্ট জমা করুন স্কুলে। আমাদের এখানে একে আর রাখা যাবে না। অন্য বাচ্চাদের সেফটির দায়িত্ব কিন্তু আমাদেরই। কিছু একটা ঘটে গেলে তার দায় আপনারা নেবেন?
-আমরা অবশ্যই সাইকলজিস্টের সাথে কথা বলব ম্যাম। তবে বাচ্চা তো! ‘স্কুলে রাখব না’, এই কথাটা বললে বাচ্চার মনের উপর চাপ পড়বে। স্কুলকে কিন্তু অনি খুব ভালোবাসে।
– হুঃ, সে ভালবাসাটা যে কী বস্তু আমরা দেখে নিলাম তো! যান যান, এখন ছেলেকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে ক’ঘা দিন, সব ঠিক হয়ে যাবে। বায়োলজি টিচার তাই করতেই গিয়েছিল, আমি নেহাত বাধা না দিলে… আজকাল আবার কর্পোরাল পানিশমেন্ট দিলে থানা পুলিশ…কথায় বলে না – ‘স্পেয়ার দ্য রড এন্ড স্পয়েল দ্য চাইল্ড!’
অনি, অনির্বাণ দত্ত, ক্লাস ওয়ান-এ। চোখ দুটো দেখে মনে হয় সব সময়ে নিজের ভিতরে ডুবে আছে। প্রিন্সিপাল রুমের বাইরে এতক্ষণ চেয়ারে বসে বসে সামনের সবুজ ফুটবল মাঠে দুপুরের চড়া রোদে চড়ুই শালিকদের জল খাওয়া দেখছিল। এইমাত্র স্প্রিংফিল্ড পাব্লিক স্কুলের একমাত্র মালি লম্বা পাইপ লাগিয়ে ঘাসে জল দিয়ে গেল।
ঘাসহীন জায়গাটায় জমা জলে পাখিদের জলসত্র।
– চল অনি বাড়ি যাই। অনির বাবা অবনী দত্তর গলায় ক্লান্ত বিষণ্ণ সুর।
– প্রিন্সিপাল খুব বকল বাবা তোমায়?
– আগে তুমি বল, প্রাক্টিকাল রুমে গিয়ে একুয়ারিয়ামের মাছ বার করে কাটতে গেলে কেন?
-কাটতে চাইনি বাবা। রোজ প্র্যাক্টিকাল রুমে বড় ক্লাসের বাচ্চারা সবাই ব্যাং কাটে, আমি দেখেছি। নতুন একুয়ারিয়ামটা এসেছে তো, আমি শুধু উঁকি দিতে গিয়েছিলাম।
-উঁকি দিতে গিয়ে একেবারে কেটে ফেললে বাবা? মাছটার কত কষ্ট হয়েছে বল তো?
-তুমি যখন আমাকে বাজারে নিয়ে যাও তখন যে মাছ কেটে কেটে দেয়! আমি দেখি তো! আর হবে না বাবা। এই একবার একটু এক্সপেরিমেন্ট করেছি। আর করব না।
– আর যদি ওরা তোমাকে স্কুল থেকে বার করে দেয়?
– তবে অন্য একটা নতুন স্কুলে নাহয় চলে যাব। তবে সেখানে গিয়ে আর এমন করে তোমাকে কষ্ট দেব না, দেখো!
অবনী দত্ত ঠিক করে আজ ছেলেকে বিকেলে জুরাসিক ওয়ার্ল্ড দেখাতে নিয়ে যাবে। গুলি মারো সাইকলজিস্টকে!
অলঙ্করণঃ অংশুমান দাশ
Excellent! ফাটাফাটি লিখেছেন অরুপদা! এ তো এক্কেবারে আমি আর গুব্লু ….. হাহাহা…
LikeLike
Lovely. খুব অর্থপূর্ণ গল্প।
LikeLike
just fatafati,
LikeLike