দ্য ফিজিসিস্ট’স রেস্টুরেন্ট
বিভাবসু দে
আমাদের ধীমানদা, ছাত্র মন্দ ছিল না। ফিজিক্স নিয়ে বেশ মোটা মোটা নম্বর সমেত বি.এসসি, এম.এসসি পাশ করে পি.এইচ.ডি-তেও ঢুকেছিল ভুবনেশ্বরের কোন এক রিসার্চ ইনস্টিটিউটে যেন। কিন্তু হঠাৎ একদিন শুনলাম সে নাকি পি.এইচ.ডি ছেড়েছুড়ে দিয়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেছে, তাও আবার সেই রিসার্চ ইনস্টিটিউটেরই উলটোদিকে।
অবাক কাণ্ড! যদিও ব্যাপারটা শুনে আমার কিন্তু মন্দ লাগেনি, হাজার হোক ‘বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী’। কিন্তু তখন কি জানতাম যে এ বাণিজ্য যে-সে বাণিজ্য নয়, একেবারে জাত পদার্থবিদের বাণিজ্য!
সেবার পুরী যাবার পথে একদিনের জন্যে ভুবনেশ্বরে নেমেই সোজা চলে গেলাম ধীমানদার সেই রেস্তোরাঁয়। রাস্তার ওপাশে ‘ইনস্টিটিউট অফ ফিজিক্স’ আর এপাশে ঝাঁ-চকচকে সেই রেস্তোরাঁ। মাথার ওপর বিশাল বোর্ডে লেখা, ‘দ্য ফিজিসিস্ট’স রেস্টুরেন্ট’।
ভেতরে ঢুকলাম। ধীমানদাকে আগেই বলা ছিল, তাই প্রাথমিক আপ্যায়নের কোনও ত্রুটি হল না। তারপর নিজেই পাশে বসে মেনুকার্ড এগিয়ে দিয়ে বেশ একটা গর্বের হাসি-সহ বলল, “বল, কী খাবি।”
কিন্তু সেই মেনু কার্ড দেখতে গিয়েই তো আমি থ! মেইন কোর্সে আছে প্যাস্কেল’স তন্দুরি, নিউটন’স শাহী বিরিয়ানি, আইনস্টাইন’স পনির বাটার মসালা, আর এমনই সব বিজ্ঞানীদের নাম জুড়ে দেয়া আরও কতগুলো বিদঘুটে আইটেম। বুঝলাম, এই নামগুলোর জন্যেই রেস্তোরাঁর ওই নামখানা রাখা।
যাই হোক, শেষমেশ অনেক ভেবেচিন্তে সত্যেন’স জিরা রাইস আর হাইজেনবার্গ’স চিকেন কারি অর্ডার করলাম। মিনিট কুড়ির মধ্যেই খাবার হাজির। কিন্তু আসল ধাক্কাটা খেলাম মাংসের বাটির ঢাকনাটা তুলতে গিয়েই।
“এ কী! এতে মাংস কই? শুধুই যে ঝোল!”
একগাল চওড়া হেসে ধীমানদা বলল, “তাই বলেছিলাম, ফিজিক্সটা মন দিয়ে পড়। হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা সূত্র ভুলে গেলি? ঝোল থাকলে মুরগি থাকবে কি না কিংবা মুরগি থাকলে ঝোল থাকবে কি না, দুটোই অনিশ্চিত।”
হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম ধীমানদার দিকে। আমার চোখের সামনে তখনও পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে উঠছে গরমাগরম হাইজেনবার্গ’স চিকেন কারির ধোঁয়ার সুতোগুলো!
অলঙ্করণঃ অংশুমান
কাস্টমারকে এমন অপদার্থ বানানোটাই পদার্থবিদ কাস্টমাইজ করে ফেললেন!
LikeLike