বিশ্বাস
উপাসনা কর্মকার
“বুল্টি, অ্যাই বুল্টি! কোথায় গেলি সব?”
“আরে, মনুদা! এসো এসো। ভেতরে এসো। বাবা-মা, জেঠু-জেঠিমা সবাই ভালো আছে?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, সব্বাই ভালো আছে। নে, মা এটা তোর জন্য দিল।”
“জেঠিমা দিয়েছে? কই, দাও দেখি!”
“দাঁড়া! তোর হাত ধোয়া আছে তো? কাচা কাপড় পরেছিস? নইলে কিন্তু ঘরে ঢুকব না। এই অবেলায় স্নান করলে আর রক্ষে নেই আমার।”
“উফ্ বাবা, কী শুচিবাই গো তোমার! তুমি আসবে জেনেই কাচা জামাকাপড় পরেছি। এখন নৈবেদ্যর থলিটা দাও তো। এ কী, আজ আবার হলুদ শার্টটা পরেছ? আমার বিয়ের সময় কেনা। সাতবছর হল। এখনও ছাড়তে পারলে না?”
“ও আমার পয়া জামা রে। এটা পরে যে কাজে গেছি তাতেই সফল হয়েছি। আর শোন, ঠাকুর-দেবতা নিয়ে হাসাহাসি করিস না, বুল্টি। মায়ের কাছে সবসময় শুদ্ধ মনে ভক্তিভরে যেতে হয়। তাছাড়া তোর মনে নেই, সেবার মামাবাড়ি গিয়ে আমায় সাপে কাটল? মায়ের কৃপা না থাকলে এই দাদাটাকে আজ চোখের সামনে দেখতে পেতিস?”
“মোটেও না। আমি আর দৃপ্ত তোমায় সঙ্গে সঙ্গে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলাম, তাই।”
“আহা, সে তো তোরা করেইছিস। কিন্তু হাসপাতাল অবধি যে প্রাণটা ছিল সেটা তো মায়ের আশীর্বাদ ছাড়া হয় না।”
“ছাড়ো সেসব কথা। শোনো মনুদা, তোমার শরীর কিন্তু আগের মতো আর ফিট নেই। বিসর্জনের সময় জলে নেমো না। সাঁতার-টাতার না জেনে…”
“ওই যে বললাম, এই জামাটা পরে আছি। কিচ্ছু হবে না। আজ আসি রে। মায়ের গয়না খুলতে দেরি হয়ে যাবে। বাড়ির বড়ো ছেলেরই দায়িত্ব যখন…”
“সেখানে তো আবার কারোর থাকাও চলবে না। আচ্ছা ঠিক আছে, এসো। এ-বাড়িতে অশৌচ বলে আর আমার শাশুড়ি-মা যেতে দিলেন না ও-বাড়ি।”
“হ্যালো, বুল্টি? খবরটা শুনেছিস?”
“কী খবর টুনু? তোর গলাটা এমন লাগছে কেন? ঠিক আছিস তো তোরা?”
“কাল রাতে মনুদা জলে ডুবে মারা গেছে।”
“ক্-কী!”
“হ্যাঁ, গয়না খোলার সময় সোনার নথটা জানালা গলে জলে পড়ে গিয়েছিল। সেটা উদ্ধার করতে গিয়েই… সেই হলুদ জামাটা জলের নিচে গাছগাছড়ার সঙ্গে আটকে গিয়েছিল, আর মাথা তুলতে পারেনি। হ্যালো! হ্যালো বুল্টি…”
অলঙ্করণঃ অংশুমান