বেস্ট ইনিংস
সুদীপ চ্যাটার্জী
কিছু বোঝার আগেই বলটা এসে সোজা হেলমেটের ওপর লাগল। মাথাটা টনটন করে উঠল অমিয়র। মাথা ঝাঁকিয়ে সে দেখল, বল প্যান্টে ঘষতে ঘষতে অবজ্ঞার হাসি হাসছে সমু।
জিততে গেলে পাঁচ বলে পাঁচ রান চাই।
স্টান্স নিয়ে দাঁড়াল অমিয়। একটা চার বা ছয় চাই। অন্যপ্রান্ত থেকে দৌড়ে আসছে সমু।
গুড লেন্থে ছোট্ট আউট-সুইঙ্গার। ফসকাল সে। ব্যাটে লাগলে নির্ঘাত সেকেন্ড স্লিপ ধরে ফেলত। চার বল বাকি। উত্তেজনায় কপালের রগ দপদপ করছে।
তৃতীয় বল আবার বাউন্সার। মাথা সরিয়ে না নিলে কী হত বলা যায় না। ভয় পেয়ে গেছে অমিয়। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখল সে। চোখ খুলতেই দেখল, নন-স্ট্রাইকিং এন্ড থেকে তার ভাই রিক এগিয়ে আসছে তার দিকে। তার সামনে এসে বলল, “অমিয়, সমু তোকে ভয় পাওয়াতে চাইছে। তিনটে বল বাকি আছে। অপেক্ষা কর। ও আবার বাউন্সার দেবে কিন্তু। আর তোর সেটাই চাই।”
অমিয় চুপ করে শুনল। চতুর্থ বল দুর্দান্ত ইয়র্কার। কোনক্রমে ব্যাট আটকে আটকাল মাটি ঘষটে আসতে থাকা গোলাটিকে।
দু’বলে পাঁচ রান চাই।
পঞ্চম বল ঠুকে দিয়েছে সমু। মাথা সরিয়ে নিল সে চকিতে, উইকেট কিপার বল হাতে হাসছে। অমিয় তাকিয়ে দেখল, নন-স্ট্রাইকিং এন্ডে শান্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে রিক। এক বল বাকি।
সমু ডেলিভারি দিতে দৌড়োচ্ছে। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে অমিয়। ডেলিভারির সময় হাতের অ্যাকশন দেখেই বুঝে গেল যা বোঝার। বাউন্সার।
নক্ষত্র বেগে ধেয়ে আসছে বলটা অমিয়র মাথা লক্ষ্য করে। শেষমুহূর্তে কাঁধটা বাঁকিয়ে ব্যাটটা আলতো ছুঁইয়ে হুক করল সে। প্রচণ্ড গতিতে বল বাউন্ডারি পেরিয়ে গেল। ছয়।
টুর্নামেন্টের কাপটা বাড়িতে এনে রিকের সামনে রাখল সে। আস্তে আস্তে বলল, “আগের বছর আনার কথা ছিল তোর, এই বছর আনলাম। তোর মাথায় বল লাগার যন্ত্রণাটা কমে যাবে এবার।”
ছবির ভিতর থেকে রিক হাসল। আজ তার বেস্ট ইনিংস, হোক না মৃত্যুর পর!
অলঙ্করণঃ অংশুমান
তার মানে নন স্ট্রাইকিং এণ্ডের রিক…তার মানে…ইয়ে!
LikeLike