ভুলো
প্রমনা চট্টোপাধ্যায়
রোববারের সন্ধে। পাড়ার ‘সেফটি দাদু’ তথা অভয়বাবু চলেছেন তাঁর সাপ্তাহিক গল্পের আড্ডায়, অর্কদের বাড়িতে। তিনি রিটায়ার্ড, নিঃসন্তান। মাস চারেক আগে স্ত্রী গত হওয়ায় এখন একাই থাকেন। কোথাও বেরোতে হলে ছোট্ট একতলা বাড়িটায় মোট গোটা সাতেক তালা লাগিয়ে যান। সাবধানী অভয়বাবু আজকাল জানালাতেও তালা লাগাবার ব্যবস্থা করেছেন বলে বয়স অনুযায়ী সেফটি দাদা বা কাকা বা দাদু হিসেবে তাঁর পরিচিতি। যাই হোক, তাঁর গল্পের লোভে এই আড্ডায় আট থেকে আশি সবাই আসেন। তা আজকের গল্পটার প্লট নিয়ে ভাবছিলেন অভয়বাবু। একটা ভূতুড়ে বাড়িতে স্মাগলারদের ডেরা খুঁজে পাওয়া নিয়ে বেশ থ্রিলিং গল্প।
ভাবতে-ভাবতেই অর্কদের বাড়িতে পৌঁছে গেলেন তিনি। এইবার চশমাটা লাগবে। আসলে চেনা রাস্তায় চলে এসেছেন, সমস্যা হয়নি। কিন্তু চশমা ছাড়া আড্ডার সদস্যদের মুখগুলো আর স্পষ্ট দেখতে পান না তিনি।
কিন্তু চশমা কই? পকেট তো ফাঁকা! ইস! নির্ঘাত ভুলে বাড়িতে ফেলে এসেছেন। চশমার খবর নেওয়ার জন্য বাড়িতে ফোন করতে গিয়েই হাতটা থেমে যায়, বাড়িতে তিনি কাকেই বা ফোন করবেন? আর তাছাড়া ফোনে তো চার্জই নেই। সত্যিই, কী ভুল! এত ভুলো তিনি কোনওদিনও ছিলেন না। আসলে কিছু বড়ো ঘটনা পরপর ঘটে গেছে তো জীবনে, তাই এখনও পর্যন্ত খুব থিতু হয়ে উঠতে পারেননি। একরাশ বিরক্তি আর মনখারাপ অভয়বাবুর মনে এসে ঢুকল। কলিং বেলটা টিপতে যাবেন, হঠাৎ থমকে গেলেন। আচ্ছা, পরশুদিন কী যেন হল না? সেই প্রচণ্ড বুকে ব্যথা, তারপর সব অন্ধকার হয়ে গেল…
হ্যাঁ হ্যাঁ, এইবার মনে পড়েছে! হাতটা কলিং বেল থেকে সরিয়ে নিলেন। তারপর ফিরতি পথ ধরলেন। আজকাল সত্যিই বড়ো ভুলো হয়ে গেছেন অভয়বাবু।
অলঙ্করণঃ অংশুমান