ভূত
নন্দিনী দাস চট্টোপাধ্যায়
ছুটির দুপুর।সকাল থেকেই আকাশটা ময়লা কাপড়ে মুখ ঢেকেছে।টিপ টিপ করে ঝরছে তো ঝরছেই। এমন সময় ফরমাশ হলো ভূতের গল্প বলার।এখন এই ভর দুপুরে ভূত পাই কোথায়?যদিও কথায় বলে ‘ঠিক দুক্কুর বেলা, ভূতে মারে ঢেলা’।কিন্তু ভূত তো গাছের পাকা ফলটি নয়, যে ঢিল মারলেই টুপ করে খসে পড়বে!
ভাবতে ভাবতেই মনে হলো ভূত মানে তো অতীত।সেই অতীতে খোঁজ করতেই দেখা পেলাম মঙ্কার।মঙ্কা অনেকদিন আগেই ভূত হয়ে গেছে।বহুদিন আগে,সেই যখন পাড়ার কারুর বাড়িতেই টি ভি ছিলনা,সেই শান্ত মফস্বলের রাস্তাঘাট ঝলমল করতনা ইলেকট্রিক আলোয়, তখন মঙ্কা আসতো নির্জন দুপুরে।মঙ্কার বন্ধু ছিলো একটা রোগা-সোগা ছোট্ট মেয়ে।দুপুর বেলায় বাবা কাকারা অফিসে,আর মায়েরা সারাদিন খাটুনির পর একটু যখন বিশ্রাম নিচ্ছে,তখনই মঙ্কা আর তার বন্ধুর আসর বসত—গল্পের কিম্বা কতোরকম খেলার!মঙ্কাকে কিন্তু কেউই দেখতে পেতোনা,ওকে জানতো শুধু সেই ছোট্ট মেয়েটা।আসলে ঐ লাজুক মেয়েটার তো বিশেষ বন্ধু-বান্ধব ছিলোনা।
তারপর একদিন মেয়েটার সকালের স্কুলের পাঠ চুকলো।দুপুরবেলা এখন তাকে বড়োদের স্কুলে যেতে হয়,কারণ এখন তো আর সে ছোট্টটি নেই!আর মঙ্কার সঙ্গে সেই দুপুরের আসরও ভেঙ্গে গেলো,অভিমানী মঙ্কাও আসা ছেড়ে দিলো।দিন যায়,মঙ্কা একদিন ভূত হয়ে গেলো,তবে সে খবরও কেউ রাখেনি।
সে দিনের সেই ছোট্ট মেয়েটা আজ চশমা আঁটা রাগী দিদিমণি,মাথার চুলে পাক ধরেছে।
নির্জন দুপুরে একলা পেয়ে মঙ্কা একদিন এলো,গায়ে আলতো ঠেলা দিয়ে সেই দিদিমণিকে বললো–‘আমি কিন্তু তোমায় ভুলিনি!’
তাই তো ;মঙ্কা সেই আগের মতো ছোটোই আছে যে!সে কথা বলতেই চিরুণী দাঁতে মঙ্কা হেসে ফেললো,’দূর তুমি তো আচ্ছা বোকা!আমি তো ভূত।আমি তোমার মতো বুড়ো হব নাকি!’
–‘তাই নাকি!তা এখন আছ কোথায়?’
–‘কোথায় আর যাব?তোমার সঙ্গেই থাকি!তূমি তো আর আমায় মনে করোনা, তাই দেখতেও পাওনা।’
চোখ কচলে তাকিয়ে দেখি মঙ্কা আমার সামনেই লাফিয়ে লাফিয়ে কুমীর-ডাঙা খেলছে সেদিনের সেই রোগা-সোগা ছোট্ট মেয়েটার সঙ্গে।
অলঙ্করণঃ অংশুমান দাশ
opurbo laglo
LikeLike