শেষ ইচ্ছে
শুভ্রা ভট্টাচার্য
গভীর রাতে দরজায় ধাক্কা। হুড়মুড়িয়ে উঠে বিনয় মাস্টার জিজ্ঞেস করলেন, “কে?”
উত্তরের বদলে আবার কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা খুলতেই একটা ফ্রক পরা ছোট্ট মেয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল। কোলে কাপড়ে জড়ানো কিছু একটা। মাস্টারমশাই তেড়ে উঠলেন, “কে তুই? এভাবে দুম করে ঘরে ঢুকে পড়লি যে বড়ো?”
বছর দশেকের মেয়েটা ভয়ে তটস্থ। মনেই হচ্ছে, কোনও বস্তি-টস্তিতে থাকে।
“কাপড়ে জড়ানো কী এটা?”
মেয়েটা ফোঁপাচ্ছে। চোখের জল মুছে কাপড়ে জড়ানো বস্তুটা মেঝেতে নামিয়ে রেখে ঢাকা খুলতেই তো চোখ কপালে। একটা সদ্য জন্ম নেওয়া মনুষ্য শিশু, জীবিত কি মৃত কে জানে! মাস্টারমশাই আঁতকে উঠে দু’পা পিছিয়ে গেলেন। তিনি কিছু বলতে যাবেন, তার আগেই মেয়েটি কান্নাধরা গলায় বলল, “বাবুজি, ম্যায় বাবলি অউর ইয়ে মেরা বহিন। আপ ইসকো বাঁচা লো, বাবুজি। উও লোগ ইসে মার ডালেগা।”
এরপর মেয়েটি যা বলল তা হল, সামনের বস্তিতেই ও মায়ের সঙ্গে থাকত। মাত্র ক’দিন আগেই ওর বাবা মারা গেছে রোড অ্যাক্সিডেন্টে। এরপর জগু-গুণ্ডারা ওদের দু’জনকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় একটা খারাপ জায়গায়। মা অন্তঃসত্ত্বা ছিল। গুণ্ডাগুলো ঠিক করেছিল, মেয়ে জন্মালে ওরা অনেক টাকায় বিক্রি করে দেবে। ঠিক সেটাই ঘটল, মেয়ে হল। ওরা বাচ্চাটাকে বিক্রি করে দিত আরেকটু হলেই। কিন্তু তার আগেই বাবলি কোনওক্রমে সেখান থেকে বোনকে নিয়ে পালিয়ে আসে।
“উও মুঝে ভি বেচ দেতে। বহুত মারা মুঝে।”
মাস্টারমশাই কাঁপতে কাঁপতে শিশুটিকে হাতে তুলে নিলেন। কী আশ্চর্য! শিশুটির শরীরও থরথরিয়ে কেঁপে উঠল। তিনি আর এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে সাইকেলে চেপে দু’জনকে নিয়েই কাছের হাসপাতালে গিয়ে উঠলেন।
বাবলি বলল, “বাবুজি, মেরা এক কাম বাকি হ্যায়। উও খতম করকে ম্যায় অভি আয়ি।”
বলেই সে পেছন ঘুরে হাঁটা লাগাতেই মাস্টারমশাই চোখে অন্ধকার দেখলেন। অজ্ঞান হয়ে গেলেন।
ভোরের দিকে জ্ঞান ফিরলে জানতে পারলেন যে শিশুটিকে এ-যাত্রায় বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন ডাক্তাররা।
বস্তির দিক থেকে শোরগোল উঠেছে। একটা বাড়ির দরজা ভেঙে দুটো লোক আর এক মহিলার রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘরের পেছন থেকে পাওয়া গেছে বস্তায় বাঁধা একটা বছর দশেকের মেয়ের পিঠে ছুরিবিদ্ধ দেহ।
অলঙ্করণঃ অংশুমান
ভীষণ ভালো লেখা।
LikeLike