আগের পর্বগুলো
বাসের জানালা দিয়ে মাউন্ট আবু
বন্ধুরা আজ আমরা চলন্ত বাস থেকে ফটো তুলব। সামনেই পুজোর ছুটি। অনেকেই তোমরা বেরাতে যাবে বা শীতের ছুটিতে বেড়ানোর প্ল্যান করছ। ভ্রমণপিপাসু বাঙালি এমন কেউ বোধহয় নেই যাঁরা মাউন্ট আবু যাননি। মাউন্ট আবু রাজস্থানের সিরোহী জেলাতে অবস্থিত। এটি একটি শৈল শহর। আরাবল্লী পাহাড়ে ঘেরা ১,২১৯ মিটার (5,650 ফিট)উচ্চতায় অবস্থিত রাজস্থানের একমাত্র শৈলশহর মাউন্ট আবুতে সারাবছরই বেড়াতে যাওয়া যাবে।
শহরের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে টলটলে জলের নাক্কি লেক। যাত্রা পথের একদিকে বিচিত্র আকারের গ্রানাইট পাহাড় আর সবুজ বনানীতে ছাওয়া প্রকৃতির অসাধারণ সৌন্দর্য মাউন্ট আবুকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আবু রোড থেকে ৩২ কিলোমিটার পাহাড়ি রাস্তা চলে গাছে মাউন্ট আবুর দিকে। সাধারণত রাতে বেশিরভাগ ট্রেন আবু রোড স্টেশনে এসে পৌঁছয়। ভোর বেলা থেকে সব বাস আর গাড়ি পাহাড়ি রাস্তাতে রওনা দেয়।
আমি আগেও বলেছি বেড়াতে যাওয়ার আগে সেই জায়গা সম্বন্ধে ভালো করে পড়াশুনা করা চাই। আজকে তো আমরা চলন্ত গাড়ি থেকে ছবি তুলব।
এবার যদি না জানি যে পুবদিক কোনদিকে, মানে বাসে ড্রাইভারের ডানদিকে বসবে নাকি বাঁদিকে এটা না জানলে ভালো ভিউ পাওয়া যাবে না। গাড়িতে নিজেদের মতন করে জানলার ধার বদলানো যাবে বা গাড়ি দাঁড় করিয়ে ফটো তোলাও সম্ভব। কিন্তু বাসে তা করা যাবে না। তাই টিকিট কাটার
সময়ে খেয়াল রাখতে হবে। ড্রাইভারের ডানদিকের জানালাটাতে বসতে হবে। ঐদিকেই সূর্যোদয় হবে।
জানালার কাচ যদি খোলা যাই ভালো না হলে কাচের ভেতর দিয়েই ফটো তুলতে হবে। পরে এডিটিং এর সময় লাইট বাড়াতে হবে। এবার তোমার যদি লেন্স চেঞ্জিং ক্যামেরা হয় তাহলে সেটিং এ গিয়ে ISO বাড়াবে আর স্পিডও বাড়াতে হবে। কারণ মুভিং গাড়ি থেকে ফটো নেওয়া হচ্ছে হাত তো একটু শেক করবেই।
গাড়ির গতি কম থাকলে মোবাইলেও ভালো ফটো তোলা যাবে। যেহেতু রাস্তা পাহাড়ের গা বেয়ে এঁকে বেঁকে উঠছে তাই গাড়ির গতি কমই থাকবে। কোথাও কোথাও রাস্তা বেশ খারাপ, বাস প্রায় থেমেই যাবে। এই সুযোগের সদ্বব্যবহার করে নিতে হবে।
ভোরের আলোতে গাছপালা, পাহাড় ছাড়াও আরো অনেক দৃশ্য পাওয়া যাবে। রাস্তার দুই ধরে হনুমানদের দেখা মিলবেই। ওরা খাবারের লোভে বসে থাকে। যেখানে গাড়ি ধীরে চলবে, কোনো বাঁক আছে সেখানেই এরা দল বেঁধে থাকে। ওরা জানে গাড়ি থেকে হয়তো কেউ খাবার ছুঁড়ে দেবে। সূর্যোদয় এর লাল আভাতে ওদের দার্শনিক ভঙ্গিতে বসে থাকার ছবি অবশ্যই পাওয়া যাবে। কোনো দুঃসাহসী পর্যটককে টিলার উপর বসে থাকতেও দেখা যেতে পারে।
শৈল শহরটির যত কাছে পৌঁছনো যাবে, খেজুর গাছের সারি মুগ্ধ করবে। সঙ্গে জলের ধারা বয়ে চলেছে। হাত যেন না কাঁপে সেই দিকে মনোযোগ রাখবে। ক্যামেরা খুবই শক্ত করে ধরে রাখতে হবে।
মাউন্ট আবু খুবই ইন্টারেস্টিং একটি দ্রষ্টব্য স্থান। নাক্কি লেক, অচলগড়, গুরুশিখর এবং আরো অনেক কিছু দেখার আছে। দেশবিদেশ থেকে মানুষ ছুটে আসেন দেলওয়াড়া টেম্পলে এর অসাধারণ শিল্পবৈশিষ্ট্য দেখার জন্য। এখানকার সানসেট পয়েন্ট পৃথিবী-বিখ্যাত। নেট দেখে সব কিছুর খোঁজ নিয়ে নেবে। আমার আজকের উদ্দেশ্য এটাই যে আমরা যখন লম্বা ট্রাভেল করি তখন ও একটু মনোযোগী হলে আশেপাশের সুন্দর দৃশ্যগুলি কে ফ্রেম বন্দি করা যায়। গাড়ি দাঁড় করে ফটো তুলতে পারলে তো খুবই ভালো। সেই সুযোগ না পেলেও জানলা দিয়ে প্রকৃতিকে ধরার চেষ্টা করো।