আগের পর্বগুলো
মাঝ আকাশে ফটো শুট
আমরা যখন ছোট ছিলাম প্লেন চড়াটা একটা স্বপ্নের মতন ঘটনা ছিল। তোমরা এখন একদম ছোটবেলাতেই প্লেনে করে বেড়াতে যাচ্ছ। অনেক সময় ট্রেনের ভাড়ার থেকেও প্লেনে কম খরচা পড়ে। যাতায়াত এর সময়ও অনেক কম লাগছে। মধ্যবিত্তদের বাজেট লিস্টে তাই ফ্লাইট যাত্রা আর বড় ব্যাপার নয়। এখন অনেক ধরনের ফ্লাইটও বছরের নানান সময়ে সস্তা ভাড়ার সুবিধা মানুষের ভ্রমণকে অনেক সহজ করে তুলেছে।
ফ্লাইটে নানা জিনিস নেওয়ার বাধানিষেধ থাকলেও ক্যামেরার ব্যাগ নির্দিষ্ট ওজনের আওতার বাইরে পড়ে। তাই ফটোগ্রাফারদের প্লেনযাত্রাতে কোন অসুবিধা নেই। একটু সস্তার টিকিট কাটতে হলে বেশ কিছুদিন আগেই বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করতে হবে। ঘরে বসেই সিট নাম্বার ও বুক করা যাবে নেট এর মাধ্যমে। এবার একটু খেয়াল করে সিট বুক করতে হবে। রাতের ফ্লাইট হলে প্লেন ওঠার সময় বা নামার সময় কেবল ফটো তোলা যাবে।
এখানে দেয়া ফটোগুলো আমি ভোরবেলার ফ্লাইট থেকে নিয়েছি। আমার যাত্রাপথ ছিল দিল্লী থেকে লেহ্। ম্যাপ দেখলেই বোঝা যাছে যে প্লেন উত্তর মুখ যাবে। অর্থাৎ ককপিটের ডানদিকের জানালা দিয়ে সূর্যোদয় দেখা যাবে। আগে অনেকবার হয়েছে যে ঠিক ডানার ওপরে সিট পেয়েছি। ব্যাস তাহলে ফটো তোলার বারোটা বেজে গেল।
প্লেনের ১৪ বা ১৫ নম্বর সিটগুলো ডানার আগে বা পিছনে পড়ে। সামনের সিটের আবার দাম বেশি। আর এমারজেন্সি দরজার পাশের সিট মানে কোন জানালাই নেই। বোইং ফ্লাইট না হলে দুটি রো থাকবে।
এবার আসা যাক পেছনের সিটে। ২৪ নম্বর সিট সবদিক থেকে ভালো। কিন্তু পেছনে বলে ঝাঁকানি বেশি হবে। তবে ফটোগ্রাফাররা ঝাঁকানি নিয়ে মাথা ঘামাই না। অবশ্য প্রতিটি প্লেনের সিট নম্বর একই হয়ই না। আমি ইন জেনারেল বললাম।
মোবাইল ক্যামেরা দিয়েও প্লেন থেকে খুব ভালো ফটো তোলা যাবে। আর লেন্স চেঞ্জিং ক্যামেরা হাতে থাকলে তো কথাই নেই। 24-70 mm হলে খুব ভালো নয়ত 50 mm লেন্স দিয়েও অসাধারণ ছবি হতে পারে। এবার আসি এই ফটোগুলির কথায়। যেহেতু আমি দিল্লী থেকে লেহ্ যাচ্ছিলাম তাই হিমালয়ের উপর দিয়েই প্লেন উড়ছিল। হিমালয়কে ওপর থেকে দেখার সৌভাগ্য খুব কমই হয়। আবার বছরের বেশির ভাগ সময় বরফে ঢাকা থাকে। সেও নিশ্চয়ই অন্যধরনের সুন্দর।
তবে হিমালয় পর্বতমালার বর্ণবৈচিত্র্য মুগ্ধ হয়ে দেখলাম। প্লেনে তো সবসময় কিছুটা ঝাঁকানি থাকবেই। তাই ক্যামেরা বা মোবাইল শক্ত করে ধরে রাখতে হবে। যেন শেক না হয় সেই খেয়াল রাখতে হবে। জানলার কাচের গায় ঠেকিয়ে যতটা পারা যায় ক্লিয়ার ভিউ পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ক্যামেরার সেটিং হাই স্পিড রাখতে হবে। নয়ত ব্লার হতে পারে। বাসের জানালার কাচ যেমন অপরিস্কার হয় তেমন প্লেনের কাচও ভালই ধুলধুসরিত থাকে। বাইরেটা তো আর কিছু করার নেই। তাই ভেতরে নিজের দিকটা একটু মুছে নিতে হবে।
কলকাতা থেকে দিল্লী অনেকেই হয়ত গেছ। দিনের বেলাতে দূরে হিমালয় পাহাড় দেখা যায়। একবার বিদেশে যাওয়ার সময় গ্রিনল্যান্ড এর ওপর দিয়ে প্লেনটা যাচ্ছিল। সেই অপূর্ব ছবি আমি মোবাইলে ক্লিক করেছিলাম। এখানে সেই ছবি শেয়ার করলাম। শীত কালে খুব ভালো করে বেড়াও আর প্রাণভরে ফটো তোল।