অরিন্দম দেবনাথ-এর সমস্ত লেখা
ফ্রাঙ্কলিন সাহেবের ট্রেন
১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ রাজত্বকালের এক ব্রিটিশ এজেন্ট মিস্টার ফ্রাঙ্কলিন প্রেস্টেজ, শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত ট্রেন চালানোর জন্য ব্যক্তিগত মালিকানাধীনে গড়ে তুলেছিলেন দার্জিলিং স্টিম ট্রামওয়ে কোম্পানি – অরিন্দম দেবনাথ ।
মেঘ ভেদ করে হিমালয়ের গভীর খাদের কিনারা ঘেঁষে হিল কার্ট রোডকে ডাইনে বাঁয়ে রেখে, রংবেরঙের অর্কিডের ঝোপে দোলা লাগিয়ে, দুলকি চালে ঝিক ঝিক করে যাত্রীসহ দুটো বগিকে টেনে নিয়ে ক্রমশ পাহাড়ের উঁচু থেকে আরও উঁচুতে উঠতে থাকা ছোটো ডিজেল ইঞ্জিনটা আচমকা বিকট আওয়াজ করে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে গেল। ড্রাইভার লাফ দিয়ে নেমে এঞ্জিনের পাশের ঢাকনা খুলতে পাহাড়ি পাইন আর দেওদার গাছের সুবাস ছাপিয়ে পোড়া তেলের গন্ধ ও কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেল চারপাশ। ঘটনাটা ২০১৮র মে মাসের।
কার্শিয়ং থেকে সকাল সাতটায় ছেড়ে আসা দু’কামরার ৫২৫৮৭ আপ রিভার ভিউ পাসেঞ্জার ট্রেনের পেছনের দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরা জুড়ে বসে থাকা আমাদের কুড়ি সদস্যের দলের সবাই নেমে পড়ল ট্রেন থেকে। দেড়শো বছরের বেশি সময় ধরে ‘টয় ট্রেন’ নামে পরিচিত দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের খুদে ট্রেনের এই এক মজা। নামতে উঠতে কোন সমস্যা নেই। ঠিক যেন কলকাতা শহরের ট্রাম। প্রথম কামরাটা প্রথম শ্রেণীর। একটিও যাত্রী নেই। কার্শিয়ং থেকে দার্জিলিং দ্বিতীয় শ্রেণীর ভাড়া ষাট টাকা, সেখানে প্রথম শ্রেণীর ভাড়া সাতশো টাকার কাছাকাছি। বসার আসনে সামান্য পার্থক্য ছাড়া আর সেরকম কোন তফাত নেই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর মধ্যে। বরং পেছনের কামরায় বসে সামনের কামরা সহ এঞ্জিনের দৃশ্য প্রতিটি বাঁকে দেখা যায়।
আমাদের ট্রেনটা যেখানে দাঁড়িয়ে তার পাশে বড় একটা বোর্ডে লেখা ‘জোরখোলা সাইডিং’। দু’ফুট চওড়া রেল লাইনের ডান দিকে উঠে গেছে গাছপালায় ঢাকা খাড়া পাহাড়। আর বাঁ দিকে লাইন ঘেঁষে চলে গেছে হিল কার্ট রোড। দু’লেনের হিলকার্ট রোডের কিনারার পর পাহাড়ের ঢাল থাকে থাকে চা গাছে ঢেকে সবুজ হয়ে নেমে গেছে নীচের উপত্যকায়। পাহাড়ের ঢালে রয়েছে বেশ কিছু ঘরবাড়ি। গুটিকয়েক বাড়ি জোরখোলায়। রাস্তার ধারে রয়েছে কয়েকটি দোকান। চিপস, বিস্কুট, লজেন্স এরকম ছোটখাটো খাবার মেলে এই দোকানে। প্রতিটি বাড়ি যেন এক একটি ফুলের বাগান। মৌমাছি আর প্রজাপতির ঝাঁক উড়ে বেড়াচ্ছে ফুলের ওপর। গাছের পাতার আড়ালে বসে খুদে পাখিরা ডেকে যাচ্ছে। শুধু মেঘের জন্য কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।
খানিক বাদে ড্রাইভার সাহেব জানালেন জলের ট্যাঙ্ক থেকে যেই পাইপ দিয়ে জল গিয়ে ইঞ্জিন ঠাণ্ডা করে সেটি ফেটে গিয়ে জল বেরিয়ে যাচ্ছে, ফলে ইঞ্জিন ঠাণ্ডা হচ্ছে না। পাইপ না ঠিক করলে ট্রেন আর যাবে না। চেষ্টা হচ্ছে পাইপটিকে কোন রকমে রাবারের টুকরো দিয়ে বেঁধে কাজ চালানোর মত মেরামত করে ট্রেনকে দার্জিলিং পর্যন্ত নিয়ে যাবার। এতে কাজ না হলে শিলিগুড়ি থেকে পাইপ নিয়ে মেকানিক এসে পাইপ পালটালে তবেই ট্রেন যাবে। কিন্তু এঞ্জিন এত গরম হয়ে আছে যে ইঞ্জিন খানিক ঠাণ্ডা না হলে মেরামতির কাজে হাত লাগানো যাবে না। ট্রেন কখন আবার যাত্রা শুরু করবে তার নিশ্চয়তা নেই। আমরা ইচ্ছে করলে গাড়ি করে দার্জিলিং চলে যেতে পারি। আমরা ঠিক করলাম আমরা ট্রেনেই যাব।
দার্জিলিং আগে ছিল সিকিমের একটি অংশ। ১৮৩৫ সালে সিকিম ব্রিটিশ শাসকদের হাতে আসে। সে সময় মাত্র কুড়িটার মত কুঁড়েঘর আর একটা বৌদ্ধ মন্দির ছিল দার্জিলিংএ। জনসংখ্যা ছিল মেরেকেটে একশোর মত। দার্জিলিং জায়গাটা ব্রিটিশদের এত ভালো লেগে গেছিল যে দার্জিলিংকে শৈল শহর বানানোর জন্য তদানন্তিন সরকার উঠে পড়ে লেগেছিলেন।
১৮৪০ সালের মধ্যে দার্জিলিংএ কয়েকটি হোটেল ও বেশ কিছু বাড়িঘর তৈরি হয়ে গেল। চীন দেশ থেকে চা গাছ এনে লাগানো হল পাহাড়ে। অনুকুল আবহাওয়ায় চা চাষ দ্রুত অর্থকরী আবাদে পরিণত হল। চা বাগানের দৌলতে দার্জিলিং পাহাড়ে আর্থিক উন্নতি শুরু হল। সরকার পরিকল্পনা করলেন সমতলের শহর শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত প্রায় আশি কিলোমিটার শক্তপোক্ত রাস্তা বানাবেন। শুরু হল হিল কার্ট তৈরির কাজ। পাথর ফাটিয়ে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে তৈরি হল রাস্তা। সে সময় পরিবহন বলতে ছিল মূলত পশুতে টানা গাড়ি না হলে পাল্কি। তাই রাস্তার নাম হল হিলকার্ট রোড। অর্থাৎ পাহাড়ে পশুতে টানা গাড়ির রাস্তা। খাবার দাবার থেকে যাবতীয় প্রায় সব জিনিস সমতল থেকে বয়ে নিয়ে যেতে হত বলে দার্জিলিংএ সব কিছুর দাম হত সমতলের প্রায় তিনগুণ।
দার্জিলিং ভারতভুক্তির প্রথমদিকে কলকাতা থেকে দার্জিলিং পৌঁছতে প্রায় দশ বারো দিন সময় লাগত। প্রথমে বাষ্প ইঞ্জিন চালিত ট্রেনে যেতে হতো সাহেবগঞ্জ। তারপর স্টিমার করে গঙ্গা পার হয়ে কারাগোলা। সেখান থেকে গোরুর গাড়ি চেপে অনেক রাস্তা পাড়ি দিয়ে আবার নদী পার হয়ে পৌঁছতে হত ডিংরাঘাট। নতুন করে শুরু হতো পূর্ণিয়া , কিষানগঞ্জ, তিতালিয়া হয়ে শিলিগুড়ি যাবার জন্যে গোরু গাড়ির যাত্রা। শিলিগুড়ি থেকে ডুলি, পাল্কি কিম্বা গোরু বা ঘোড়ার গাড়ি করে দার্জিলিং পৌঁছতে লাগত আরও তিনদিন। পরবর্তী সময় সরকারি মালিকানাধীন নর্দার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রেল লাইন পাতলো ও ১৮৭৮ সালে কলকাতা শিলিগুড়ি রেল যোগাযোগ শুরু হয়ে গেল। মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা সময়ে কলকাতা থেকে ট্রেনে শিলিগুড়ি পৌঁছে যাওয়া শুরু হোল।
কিন্তু শিলিগুড়ি গিয়ে থেমে গেল রেল যাত্রা। খরচ ও কারিগরি জটিলতার কারণে পাহাড়ে ট্রেন চালানোর কথা নর্দার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে বা ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে স্বপ্নেও আনলেন না। পাহাড় যেন রেলের জন্য জন্য নিষিদ্ধ।
১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ সরকারের ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের এক এজেন্ট, মিস্টার ফ্রাঙ্কলিন প্রেস্টেজ দার্জিলিং ঘুরতে গিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর মেঘের লুকোচুরি দেখতে দেখতে ভাবলেন দাজিলিংকে ঠিক ভাবে গড়তে গেলে আগে জিনিসপত্রের দাম কমান দরকার। দরকার দ্রত গতির পরিবহন। উনি সরকারকে প্রস্তাব দিলেন যেহেতু নর্দার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে বা ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কেউই পাহাড়ে রেল পাততে রাজি নয়, তাই ওনাকে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন একটি রেল কোম্পানি স্থাপন করে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত হিলকার্ট রোডের পাশ দিয়ে দু’ফুট চওড়া রেল লাইন পেতে সাত হাজার ফুট উঁচুতে দার্জিলিং সহর পর্যন্ত বাষ্পচালিত যাত্রী তথা মালবাহী ট্রেন চালাতে অনুমতি দেওয়া হোক।
সরকার এই প্রস্তাব পাবার সাথে সাথে লুফে নিলেন। সেই সময়কার বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার আসলে ইডেন, এই প্রস্তাবকে সমর্থন করে দ্রুত সরকারি অনুমতি আদায় করে দিলেন। ১৮৭৯ সালে হিমালয়ের বুকে ট্রেন চালাতে তৈরি হল দার্জিলিং স্টিম ট্রামওয়ে কোম্পানি। যদিও এর দু’বছর পর কোম্পানির নাম পাল্টে হয়ে গেছিল দার্জিলিং হিমালায়ান রেলওয়ে কোম্পানি। পরবর্তী কালে ১৯৪৮ সালের ২০ অক্টোবর ভারত সরকার এই রেল কিনে নেন।
কিন্তু কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। পাহাড়ের আঁকা বাঁকা খাড়া ঢাল বেয়ে সমতল থেকে ট্রেনকে টেনে তুলতে হবে সাত হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত। নিত্য নতুন চিন্তা ভাবনা নিয়ে প্রযুক্তিবিদরা উঠে পড়ে কাজে লাগলেন। গিলেণ্ডারস আরবুথনট অ্যান্ড কোম্পানি, দার্জিলিং হিমালায়ান রেলওয়ে কোম্পানির সহযোগী সংস্থা হিসেবে তিনধারিয়া ও কারসিয়াংএ অফিস খুলে রেল লাইন পাতার কাজ শুরু করল।পাশাপাশি গিলেণ্ডারস কোম্পানির কলকাতা অফিস সমস্ত আইন কানুন, অর্থ সংক্রান্ত ব্যাপার দেখতে লাগল। রেল লাইন পাততে পাততে চুনাভাটি পৌঁছে জটিল সমস্যা দেখা দিল। কিছুতেই আর তীক্ষ্ণ বাঁক ও ঢাল বেয়ে ট্রেনকে পাহাড়ের ওপরে টেনে তোলার উপায় করে উঠতে পারছেন না প্রযুক্তবিদরা। ইংল্যান্ডের পাহাড়ে রেল লাইন পেতে হাত পাকানো তথা বাগডোগরায় এক চা বাগানের মালিক, দার্জিলিং রেল লাইন পাতার সাথে যুক্ত হারবার্ট গরডন রামসে নামের এক অতি উৎসাহী ব্রিটিশ প্রযুক্তিবিদ একদিন স্ত্রীর কাছে বলে ফেললেন সমস্যার কথা। দার্জিলিং পাহাড়ে ঘাঁটি গেড়ে বসা হোটেল ব্যবসায়ী রবার্ট এর কন্যা রামসের স্ত্রী এলিজাবেথ সব শুনে বললেন “যদি সরাসরি এগোতে না পার তবে পিছিয়ে এসো!”
স্ত্রীর কথায় রামসের মাথায় এলো রিভার্স জেড বা উল্টো লাইন-এর ভাবনা। যেখানে ট্রেন দুরারোহ খাড়াই ও বাঁকের জন্যে সরাসরি পাহাড়ে উঠতে পারছে না তাকে পাশাপাশি অন্য লাইন পেতে সেই লাইন ধরে খানিক পিছিয়ে নিয়ে গিয়ে গতি সঞ্চয় করে টেনে তোল। পাশাপাশি শুরু হল খাড়া উচ্চতায় লুপ লাইন বা দড়ির ফাঁসের মতো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লাইন তৈরির পরিকল্পনা।
পুরু কাঠের পাটাতনের ওপর প্রতি গজে প্রায় সাড়ে আঠারো কেজি লোহার লাইন বসাতে বসাতে কার্শিয়ং পর্যন্ত লাইন বসানোর কাজ শেষ হয়ে গেল ১৮৮০ সালের আগস্ট মাসে। ১৮৮১ সালের এপ্রিল মাসে কার্শিয়ং থেকে সোনাদা হয়ে ৭৪০৭ ফুট উঁচুতে ঘুম পর্যন্ত উঠে গেল ট্রেন। ওই বছরের ৪র্থ জুলাই ট্রেন পৌঁছল দার্জিলিংএ। ছোট আকৃতির জন্য এই ট্রেন পরিচিত হয়ে উঠল টয়ট্রেন নামে।
মোট চারধাপে চলেছিল এই ট্রেন। ১৮৮০ সালের ২৩ অগাস্ট শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়ং পর্যন্ত চালু হয়েছিলো ট্রেন যাত্রা। তারপর ২ ফেব্রুয়ারি ১৮৮১ সালে কার্শিয়ং থেকে সোনাদা, ৫ এপ্রিল ১৮৮১ সালে সোনাদা থেকে ঘুম ও অবশেষে ৪ জুলাই ১৮৮১ সালে ট্রেন পৌঁছেছিল দার্জিলিং।
দেখে নেওয়া যাক টয় ট্রেনের যাত্রা পথের উচ্চতা।
ট্রেন চালু হবার পর প্রথম বাধা এল ১৮৮২ সালে। সে বছর এত তুষারপাত হয়েছিল যে ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার লোকোমোটিভ ইঞ্জিনের আগে বরফ পরিষ্কার করার জন্য ‘স্নো প্লাগ’ লাগাতে হয়েছিলো। দ্বিতীয় বিপত্তিটা দেখা গেল ১৮৯০ সালে। প্রবল বৃষ্টিতে পাগলাঝোরায় ভেসে গেছিলো ৮০০ ফুট রেল লাইন। বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় ধ্বস নেমে রেললাইন উপড়ে গেছিলো ফলে রেললাইন বাঁচানোর জন্য রেললাইনের ধার বরাবর খরচ বহুল পাথরের উঁচু প্রাচীর তৈরি করতে বাধ্য হল কর্তৃপক্ষ। জুলাই ১৮৮১ সালে ফ্রাঙ্কলিন সাহেবের কোম্পানি এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল যে সেই সময় দার্জিলিং পর্যন্ত রেল পাততে খরচ হয়েছিলো ৩১,৯৬,০০০ টাকা। ১৮৮২ সালে মোট ৮০০০ যাত্রী ও ৩৮০ টন মাল বহন করেছিল দার্জিলিং হিমালয়ান রেল। আর ১৯১৬ সালে যাত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিলো ২,৩৯,৬৯৬ জন। মাল বহন করেছিল ৫৯,৭৪০ টন। ফ্রাঙ্কলিন সাহেব ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগ না নিলে দার্জিলিং পর্যন্ত হয়তো ট্রেন চালুই হতো না। সৃষ্টি হতো না প্রযুক্তিবিদ্যার এক অসাধারণ নিদর্শন। দার্জিলিং টয়ট্রেনের স্রষ্টা ১৮৯৭ সালের ১৮ অক্টোবর সিমলা শহরে মারা যান। ১৯৯০ সালে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়েকে ইউনিস্কো (UNISCO) হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি প্রদান করে।
এক ঝলকে টয় ট্রেনের যাত্রা পথ
ফিরে আসা যাক জোরখোলায়। প্রায় দু’ঘণ্টা কেটে গেছে। ফাটা জলের পাইপ খুলে রাবারের টুকরো দিয়ে বেঁধেও জল বেড়িয়ে যাওয়া বন্ধ করা যাচ্ছে না। আমার সহযাত্রী বন্ধু রেল কর্মচারী সুব্রত ভৌমিক সব দেখে শুনে ড্রাইভার সাহেবকে বললেন “ফাটা টিউবটা ইঞ্জিন থেকে খুলে বাইরে নিয়ে আসুন। তারপর ওটা ভালো করে গাড়ির রাবারের টিউব দিয়ে বেঁধে ফাটা অংশটা ওপরের দিকে করে লাগিয়ে দেখুন। মনে হয় জল বেরোবে না।”
পাইপটা খুলে আবার রাবার দিয়ে শক্ত করে বেঁধে ফাটা দিকটা ওপরের দিকে করে লাগিয়ে জলের ট্যাঙ্কে জল ঢালতে দেখা গেল ফাটা পাইপ দিয়ে জল আর বাইরে আসছে না। ড্রাইভার ইঞ্জিন চালু করে পোঁ পোঁ করে বাঁশি বাজিয়ে ট্রেন ছেড়ে দিলেন। একরাশ মেঘ ঠেলে ৭৪০৭ ফুট উঁচু ঘুম স্টেশানে আমাদের ট্রেনটা দাঁড়ালো ১৮৮০ সালে প্রস্তুত ‘বেবি সিভক’ ইঞ্জিনের পাশে।
দার্জিলিং থেকে আসা বাষ্প চালিত ইঞ্জিন টানা একটি দুই কামরার টয় ট্রেন থেকে নেমে একরাশ পর্যটক ভিড় জমালেন দেড়শ বছরের পুরনো বেবি সিভকের চারপাশে। সেলফি তুলতে হবে তো!
ছবি- অরিন্দম দেবনাথ