জয়ঢাকের খবরকাগজ–২০১৩ থেকে মনমতানো সমস্ত খবরের অর্কাইভ এইখানে
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
বিসমিল্লাহ্ খাঁ- একটি তীর্থযাত্রার গল্প
(এ’বছরের গোড়ার দিকে উস্তাদ বিসমিল্লা খাঁ-এর বাড়ি গিয়েছিলাম তিন জয়ঢাকি মিলে। আজ তাঁর একশো দুইতম জন্মদিনে সঙ্গে রইল তাঁকে নিয়ে কিছু কথা আর সেই তীর্থযাত্রার একটি প্রতিবেদন। সেইসঙ্গে লেখার শেষে রইল এনডিটিভি থেকে নেয়া তাঁর এক সুদুর্লভ সাক্ষাতকারের অডিও ভিশ্যুয়াল। এই সামান্য অর্ঘ্য দিয়েই জন্মদিনে ওস্তাদজিকে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানায় জয়ঢাক ~ সম্পাদক, জয়ঢাক)
কথনঃ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়
চিত্রগ্রহণঃ অরিন্দম দেবনাথ, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য
এক সাক্ষাতকারে একবার বিসমিল্লাহ খাঁ বলেছিলেন, জগত সুরময়। সুর আর ঈশ্বর সমার্থক। ছ’বছর বয়েসে বারাণসী চলে আসেন বিসমিল্লাহ। মামা আলি বক্স ছিলেন বিখ্যাত সানাইবাদক। বিশ্বনাথ মন্দিরে সানাই বাজাতেন। তার কাছেই শুরু হয় শিক্ষা। আমৃত্যু বারাণসীতেই কাটান উস্তাদজি। প্রকৃতপক্ষে বিসমিল্লাহ খাঁ ও বারাণসী প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছিল।
প্রপিতামহ উস্তাদ সালার হুসেন খাঁ, পিতামহ রসুল বক্স খাঁ, পিতা পয়গম্বর বক্স খাঁ সকলেই ছিলেন প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ। সঙ্গীতের সেই ধারা বহন করে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন উস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁ। উস্তাদজি ভৈরবী বাজাচ্ছেন, আর ক্রমশ বারাণসীর গঙ্গার ওপর ভোর হচ্ছে এমন দৃশ্য ভারতের কোন সংগীতপ্রেমী না তার মানসচক্ষে অন্তত একবার দেখেছেন!
২১ মার্চ ১৯১৬ সালে পূর্ব ভারতে বিহারের ডুমরাওতে এই মহান সাধকের জন্ম হয়। সানাইকে তিনি ক্লাসিকাল সঙ্গীতের জগতে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাধীনতার প্রাক্কালে ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী ভারত হিসেবে আত্মপ্রকাশের মুহূর্তে ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ সালে উস্তাদজির বাজনাই ছিল অন্যতম প্রধান অলংকরণ। এই ঘটনা এক অভূতপূর্ব নিদর্শন হিসেবে ইতিহাসে চিরকাল লেখা থাকবে। ২০০১ সালে ভারতসরকার তাকে ভারতরত্ন দিয়ে সম্মানিত করে।
২০১৮ এর জানুয়ারিতে এক শীতের সকালে বারাণসী শহর যখন কুয়াশায় মুড়ে আছে জয়ঢাকের তিন প্রতিনিধি খুঁজে খুঁজে গিয়ে হাজির হল উস্তাদজির বাড়ির সামনে। খুঁজতে বেশি হল না, কারণ যাকেই সে বাড়ির হদিশ জিজ্ঞাসা করা হল, তিনিই অত্যন্ত শ্রদ্ধায় পথ বাতলে দিচ্ছিলেন।
বারাণসীর বিখ্যাত সরু গলি দিয়ে এঁকে বেঁকে তার বাড়ির সামনে হাজির হয়ে দেখি দরজা বন্ধ। সামনে কেউ নেই জিজ্ঞাসা করবার মতো। এমনকী কলিং বেলও নেই। দেয়ালের ওপরে একটা পুরোনো কাঠের মলিন লেটারবক্স। তাতে লেখা ভারতরত্ন উস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁ। শুধু নামের কারণেই যেটা উজ্জ্বল।
দেয়ালের গায়ে লেখা আপনি সিসি ক্যামেরার নজরে আছেন। একটু বাদেই একজন লোক ঢুকছিলেন, কৌতূহলী আমাদের দেখে জিজ্ঞাসা করে আসার কারণ জেনে ভেতরে গিয়ে খানিক বাদে বসবার ঘরের দরজা খুলে দিলেন। আমরা জুতো খুলে ভেতরে প্রবেশ করলাম।
পবিত্র স্থানে প্রবেশের পর যেমন অনুভূতি হয় তেমনটা হচ্ছিল। ছোটো লম্বাটে ঘর। চওড়ায় বড়োজোর সাত ফুট। লম্বায় একটু বড়ো, আঠেরো কুড়ি ফুট মতো। পুরোনো দেওয়ালে রঙের পোঁচ পড়েছে। দেয়ালজোড়া নানান ছবি, অনুষ্ঠানের। ওস্তাদজি, তাঁর বাবা, ঠাকুর্দা, গুরু। কোথাও নাতিনাতনিদের নিয়ে বসে ওস্তাদজি। মুখে হাসি আর ভালবাসা উপছে পড়ছে। আমদের একটা অদ্ভুত শিহরণ হচ্ছিল। ঘরে একখানা চৌকি পাতা, বিসমিল্লাহ খাঁ এতে বসতেন এটা ভেবে স্পর্শেই রোমাঞ্চ হল।
খানিক বাদে ভেতর থেকে সিল্কের পাঞ্জাবি গায়ে চাপাতে চাপাতে বেরিয়ে এলেন নাসির আব্বাস। বিসমিল্লাহ খাঁ-এর নাতি। তার সঙ্গে কথা হল অনেকক্ষণ। নম্র মৃদুভাষী এই মানুষটিও শিল্পী। সানাই বাজান। দাদাজির কথা বলতে বলতে আবেগে ভালোবাসা শ্রদ্ধায় আপ্লুত হয়ে পড়ছিলেন ভদ্রলোক। বলছিলেন দাদাজির তো অর্থের প্রতি কোনো আকর্ষণ ছিল না! প্রকৃত অর্থেই একজন সাধক ছিলেন আমার দাদাজি। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত।
এখন তাদের অবস্থা পড়তির দিকে। বাড়ি সারাইয়ের যথেষ্ট অর্থ নেই। তাহলে কি, ভেঙে বাড়ি ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাবে? এমন আশঙ্কায় আমাদেরও মন ভার হল। আমরা বলে উঠলাম না না দেখবেন, কোনো না কোনো উপায় বার হবে ঠিক।
২১ আগস্ট ২০০৬ সালে চলে যান অসামান্য এই শিল্পী। অসংখ্য সন্তানসন্ততি আর অগণিত গুণমুগ্ধ মানুষ আজও তার অভাব অনুভব করেন। কথাবার্তা সেরে আমরা গলি দিয়ে বড়ো রাস্তায় এসে পড়লাম। এই রাস্তার নাম ভারতরত্ন উস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁ মার্গ। পেছনে সানাই বাজছিল বসন্ত রাগ-এর সুরে। আমাদের মনে মনেই বাজছিল হয়ত বা। শীতের কুয়াশা কেটে ক্রমশ চমৎকার রোদ্দুর এসে পড়ছিল আমাদের মাথায়। ওস্তাদজির আশীর্বাদের মতো।
তথ্য সমৃদ্ধ লেখা।খুব ভালো লাগলো।
LikeLike
Informative .
LikeLike
Amar bari benarase,Bismillah Khan ke bar bar bola sottweo chiktisar jonye anyo kothao giye thakte raji hoten na,benaraser jibonjatra take emon bhabe joriye rekhechiko.benraser Bhojpuri bhhasyay eke bole ‘banarsi alharpana’,sab dhormer sodbhab niye eto jibonto ar kono Shahar noy,ei Katha bar bar bolten..lekhata darun laglo
noy,bar bar ei Katha bolten…ei Lekha t
LikeLike
মন ভরে গেলো।জয়ঢাকি সাংবাদিক তিনজনকেই অভিনন্দন
LikeLike