ইতিহাসের খণ্ডচিত্র আগের পর্বগুলো
সুকুমার সেন ও ভারতীয় নির্বাচন
অতনু প্রজ্ঞান বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রতিবার ভোটের মরশুম এলেই ব্যালট পেপার, ভোট দেওয়া, কাউন্টিং, ইলেকশন কমিশন ইত্যাদি শব্দগুলো আমাদের চারপাশকে সরগরম করে তোলে। ভারতবর্ষের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে স্বাধীন ও স্বচ্ছ ভোটপর্বের মূল কান্ডারী হল ইলেকশন কমিশন দপ্তর।
১৯৯০-৯৬ সালের দিনগুলোতে ফিরে গেলে একটি নাম আমাদের জাতীয় স্তরে শোরোগোল ফেলে দিয়েছিল। টি এন সেশন। দুর্নীতিমুক্ত নির্বাচনের জন্য দায়বদ্ধ এই চীফ ইলেকশন কমিশনার তার সাহসী নানা পদক্ষেপে রাজনৈতিক মহলে সাড়া ফেলেছিলেন।
কিন্তু এসবের অনেক আগে, যে মানুষটির হাত ধরে ইলেকশন কমিশন দপ্তর বৃহত্তম এই গণতান্ত্রিক দেশ ভারতবর্ষে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ভিত স্থাপন করেছিলেন তিনি হলেন উজ্জ্বল এক বঙ্গসন্তান শ্রীযুক্ত সুকুমার সেন।
সাতচল্লিশ সালে দেশ স্বাধীন হবার পরে এই ক্ষুরধার প্রশাসক মনোনীত হন বাংলার চীফ সেক্রেটারি হিসেবে। এই পদে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও রাজনৈতিক টালমাটালে আকীর্ণ বাংলায় তিন বছর কাটাতে কাটাতেই যেন উনি প্রমাণ করে দিয়েছিলেন উনি আরও অনেক কিছু দিতে এসেছেন এ দেশের প্রশাসনকে।
আর ঠিক তা প্রমাণ করতেই যেন এই সিভিল সার্ভেন্ট-এর কাছে চলে এল আরও এক বৃহৎ চ্যালেঞ্জ। উনি মনোনীত হলেন গণতান্ত্রিক স্বাধীন ভারতের প্রথম চীফ ইলেকশন কমিশনারের পদে। (২১ মার্চ১৯৫০ থেকে ১৯ ডিসেম্বর ১৯৫৮)
কীভাবে নির্বাচন প্রতিনিধিরা দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকবেন, নির্বাচনের প্রতীক চিহ্নই হয়ে উঠবে রাজনৈতিক প্রতিনিধির প্রতীক, কীভাবে গণনা হবে, কীভাবে পুরো ব্যাপারটা পরিচালনা হবে এসব পুরো খুঁটিনাটি ব্যাপারটাই ছিল এই দুঁদে প্রশাসনিক কর্তার ভাবনায়।
এভাবে শ্রীযুক্ত সুকুমার সেনের হাত ধরেই এশিয়া মহাদেশ পেয়ে গেল নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মতো এক কর্মযজ্ঞ।
কিছু তথ্যঃ
জন্ম ১৮৯৯। তিন ভাই। মেজ পরবর্তীকালে ভারতের আইনমন্ত্রী অশোক সেন। ছোটো অমিয়কুমার সেন ডাক্তার ছিলেন-রবীন্দ্রনাথকে জীবিত অবস্থায় শেষদেখেছিলেন এই অমিয়কুমার। প্রেসিডেন্সি কলেজ ও লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুকুমার সেন-এর শিক্ষা। দ্বিতীয়টি থেকে গণিতবিদ্যায় স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। ১৯২১ সালে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগদান। ১৯৪৭ এ বাংলার চিফ সেক্রেটারি। ১৯৫০ থেকে ভারতের প্রথম দুটি সাধারণ নির্বাচনের কর্ণধার।
কতটা কঠিন ছিল তাঁর মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাজ? সাড়ে সতেরো কোটি ভোটার। তার মধ্যে পঁচাশি শতাংশ নিরক্ষর। আগে থেকে তৈরি কোন ভোটার তালিকা নেই। দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল টেলিযোগাযোগের বাইরে। এই অবস্থায় প্রায় একা হাতে গণতান্ত্রিক ভারতের গণতন্ত্রের ভিৎ কেটেছিলেন এই প্রণম্য মানুষটি।
পরবরতী সময়ে সুদানের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর হন।