জয়ঢাকের বিপুল ভূতের আড্ডা
দেশি ভূত
ঝোলাভূত
গল্পটা বিনায়ক নামে এক ছোকরার
বছর দুয়েক আগের ঘটনা। আমার তখন পনেরো বছর বয়েস। আমাদের বাড়িতে বেশ তাড়াতাড়ি খাওয়া হয়। সেদিন সন্ধে সাড়ে আটটা নাগাদ রাত্তিরের খাওয়া সেরে বেসিনে হাত ধুতে গেছি তখন হঠাৎ খেয়াল করলাম, বেসিনের মাথায় টাঙানো ঘড়িটার কাঁটা চলছে না। হয়ত ব্যাটারি ফুরিয়েছে এই ভেবে মুখ নিচু করে ধুয়ে ফের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি উঁহু চলছে। তবে খুব আস্তে আস্তে ওর মিনিটের কাঁটাটা উল্টোদিকে ঘুরছে।
সেদিকে তাকিয়ে খানিক অবাক হয়েছিলাম আমি। কিন্তু কাউকে কিছু বলিনি কারণ তখন আমার বেজায় ঘুম পাচ্ছে। ভাবলাম ঘড়ি তার ইচ্ছেমত ঘুরুক গে, আমি এখন শুতে যাই।
আমার শোবার ঘরের দরজাটা গিয়ে খুলতেই হঠাৎ দু’কানের ভেতর একটা জোরালো শব্দ হল আমার। যেন কানের পর্দা ফেটেই যাবে এমন তার জোর। তাইতে ঘাবড়ে গিয়ে ঘন ঘন মাথা নাড়তে গিয়েই ওপরের দিকে চোখ পড়ে আমি জমে যেন কাঠ হয়ে গেলাম। দেখি সেখানে ফ্যানের ঠিক নীচে দুটো পা দুলছে।
আমি প্রথমে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছে না। হাত পাও চলছে না মোটে। খানিক বাদে কেউ যেন জোর করে আমার মাথাটা ওপরের দিকে তুলল। যেন ওপরের দিকে না তাকিয়ে আমার রক্ষা নেই।
এইবারে দেখি সেখানে একজন বউ ঝুলে আছে। তার চোখদুটো কুচকুচে কালো। ঠোঁটের রঙ লালচে কালো। এলোমেলো চুল আর পরণে শাড়ি। তার চোখদুটো আমার দিকে ধরা ছিল। কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারি না সেদিক থেকে। ওরকমভাবে দাঁড়িয়ে থাকতেথাকতেই হঠাৎ পায়ের পাশে দাঁড়ানো চৌকিটার ওপর লুটিয়ে পড়লাম আমি। প্রাণপণে চোখ বুঁজে খানিকক্ষণ পড়ে থেকে চোখ খুলতে দেখি বউটার শরীর খানিক ঘুরে গেছে, ঘাড়টা বেঁকিয়ে চোখদুটো ফের আমার চোখের দিকে ধরা। আমায় দেখছে!! আর তখনই খেয়াল হল, ও ফ্যান থেকে ঝুলছে না। ফ্যানের সঙ্গে কোনো দড়িদড়া বাঁধা নেই। ও ফ্যানের গায়ে মাথাটা ঠেকিয়ে আমার ওপরে ভেসে…
তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। সকালে ঘুম ভেঙে দেখেছিলাম কোথাও কিচ্ছু নেই। আমার দিদি আমার সঙ্গে সে ঘরে শুতো। সে বলল রাতে শুতে এসে সে দেখে আমি অঘোরে ঘুমোচ্ছি।
কেন যে বউটা ওভাবে আমায় এসে দেখা দিয়ে গেল কে জানে!
বিদেশী ভূত রাশিয়ান ভূত
মাতৃহারা
এ গল্পটা এক রাশিয়ান ছোকরার বলা
তখন আমার বয়েস দশ বছর। ঘুমিয়ে আছি রাত্তিরে, তখন হঠাৎ টের পেলাম, দরজা খুলে কে যেন অন্ধকারের মধ্যে ঘরে এসে ঢুকল। তারপর পায়ের কাছে এসে সে বসল চুপচাপ। পায়ে তার ছোঁয়া পেলাম। বিছানাটা সেখানটা একটু দেবে গেছে বলে টেরও পেলাম।
ভাবলাম মা এসেছে বুঝি। সেই ভেবে চোখ খুলতে দেখি একটা বাচ্চা ছেলে আমার পায়ের কাছে বসে আছে। তার চোখদুটোর জায়গায় দুটো গর্ত। আমায় তাকাতে দেখে সে আমার দিকে একটা হাত বাড়িয়ে ধরল। দেখি তাতে ছোট্ট একটা বাক্স ধরা। আমি একটু ঘাবড়ে গীছিলাম প্রথমে। তারপর বাক্সটা নেবার জন্য যেই হাত বাড়িয়েছি ওমনি সে হাত পিছিয়ে নিল। আমি চেঁচিয়ে উঠে বললাম, “দে বলছি!” বলে একবার চোখের পলক ফেলতেই দেখি কেউ কোথাও নেই। উঠে বসে দেখি জায়গাটা তখনো হালকা গরম আর বিছানাটা একটু দেবে আছে, যেন এক্ষুণি কেউ সেখানটা বসে ছিল এসে।
এর বছর পাঁচেক পরের কথা। আমাদের ক্লাশের একটা মেয়ে সেদিন আমাদের বাড়িতে তার হোমওয়ার্ক করতে এসেছে। খানিক বাদে তার কাজ শেষ হয়ে গেল। কিন্তু তখনো তার বাবা তাকে নিতে আসেনি দেখে সে দিব্যি শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
খানিক বাদে তার বাবা তাকে নিতে এলে আমি ঘরে গিয়ে তাকে ডাকলাম। সে ডাক শুনে চোখদুটো খুলে হঠাৎ ছাদের কাছাকাছি দেয়ালের একজটা কোণের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইল। আমি এবার তাকে জোরে জোরে ঝাঁকুনি দিতে ঘুমটা পুরোপুরি ভেঞে গিয়ে সে বলে, “দেয়ালের গায়ে একটা ছোট্ট ছেলে ঠিক স্পাইডারম্যানের মত সেঁটে বসে বসে আমার দিকে দেখছিল। কিন্তু ওর চোখদুটো নেই। শুনে আমি বেজায় উত্তেজিত হয়ে তাকে পাঁচ বছর আগের ঘটনাটার কথা হড়বড় করে বলে ফেললাম।
আরো দশ বছর পেরিয়েছে। সেই মেয়েটা এখন আমার বউ। আমাদের একটা দু বছরের মেয়ে আছে। সে ঘরটা এখন আমাদের শোবার ঘর। মেয়ে কথা বলতে শেখবার পর আমরা খেয়াল করলাম, রোজ মাঝরাত্তিরে সে জেগে উঠে আধো আধো বুলিতে কার সঙ্গে যেন কথা বলে। একদিন ওর মা ওকে জিজ্ঞেস করল, “কার সঙ্গে কথা বলিস রে তুই রাত্তিরে?”
তাতে সে হাত নেড়ে বলল, “একটা ছোট্ট দাদা। জানো বাবা,ও না অন্ধ। ওর মা হারিয়ে গেছে। ও তাই মা’কে রোজ রোজ খোঁজে।”
বাড়ি পালটে এখন আমাদের নিজেদের অ্যাপার্টমেন্ট হয়েছে। আমাদের মেয়ে এখন আর রাত্তিরে জেগে উঠে কারো সঙ্গে কথা বলে না।
বেড়ে লাগল!
LikeLike