দেশ ও মানুষ সব পর্ব একত্রে
চন্দ্রবন্ধন
অরিন্দম দেবনাথ
সামান্য বেতনে বাংলাদেশের এক এন.জি.ও তে চাকরি শুরু করা, স্বপ্ন দেখতে জানা এক উদ্যোগী মানুষের কাহিনি।
ত্রিপুরার ইতিহাস অতি পুরোন। প্রাচীনকালে সূর্য ও চন্দ্রবংশীয় রাজাগণ এখানে রাজত্ব করতেন। এঁরা ছিলেন প্রজাবৎসল। সাধারণ মানুষের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি এই সব রাজারা ছিলেন মনযোগী। পাশাপাশি লড়াই করা বা সহজে হাল না ছেড়ে দেবার মানসিকতা ছিল দুর্দম।
পরবর্তীতে মাণিক্যবংশ দীর্ঘদিন ত্রিপুরায় রাজত্ব করেন। গড়ে ওঠে একের পর এক নগর, রাজভবন, গড়। ত্রিপুরার এরকমই একটি শহর বিশালগড়। বিশালগড় বা দুর্গ থেকে এই গ্রামের নাম বিশালগড়। যদিও সে গড় বা দুর্গের কোন অস্তিত্ব এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু লড়াকু মানসিকতা রয়ে গেছে গ্রামের জল-হাওয়ায়।
বিশালগড়ের একটি গ্রাম ভট্টাপুকুর। সেই গ্রামের একটি বালক ছোট থেকেই স্কুলে যাবার আগে ও স্কুল থেকে ফিরে বাবা হরিপদ ঘোষেকে তাঁর মিষ্টির দোকানে মিষ্টি বানাতে ও বিক্রিতে সাহায্য করত। সঙ্গে পড়াশুনোয় চালিয়ে যেত।
তাদের পরিবারটাও ছোট ছিল না। চার ভাই দু’বোন। স্কুলের পাঠ শেষে করে বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছিল কিশোরটি উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ নেবার জন্য। আর্থিক অনটনের জন্য ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চমাধ্যমিক পড়া চলাকালীন তাঁর আর্থিক দায়ভার বহন করেছিলেন। তারপর ভারতে ফিরে স্নাতক হবার পর আবার ফিরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাশিবিজ্ঞানে বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের জন্য। তীব্র আর্থিক দুরবস্থায় স্নাতকোত্তর পড়াশোনার জন্য দ্বারস্থ হয়েছিলেন ব্রজানন্দ মন্দির কর্তৃপক্ষের। হতাশ হতে হয়নি। তাঁরাই যুবকটিকে আশ্রয় দিয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন।
এই যুবকটির আদি বাস ছিল একসময় বাংলাদেশের ঢাকাতে। তখন ব্রিটিশরাজ চলছে। দাদু নবীন চন্দ্র ঘোষের মিষ্টির ব্যবসা ছিল ঢাকার সোনারগ্রামে। তারপর দাদু ঢাকা থেকে চলে এসেছিলেন কুমিল্লাতে। কুমিল্লা একসময় ত্রিপুরার অংশ ছিল।
দেশভাগের পর ঘোষ পরিবার চলে এলেন ত্রিপুরার ভারতের অংশ আগরতলা শহরে। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক অবিচ্ছিন্ন ছিল। বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশের সোনারগ্রামে বাল্যকালের অনেকটা কাটানো বালকটিকে চলে যেতে হয়েছিল কাকা সদানন্দ ঘোষের কাছে যোরহাটে। কাকা যোরহাট স্টেশনে চা ও খাবার বিক্রি করতেন। সেখান থেকে আবার চলে যেতে হয়েছিল শিলিগুড়ি শহরে। বালকটির বাবা শিলিগুড়ি শহরে একটি খাবারের দোকান চালাতেন। তীব্র আর্থিক অনটনে বালকটির শৈশব বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। পড়াশোনার পাঠ শেষ হতে বসেছিল প্রায়। দারিদ্র্যের যন্ত্রণা বুঝতে শিখেছিলেন সেই ছোট বয়সে।
বালকটির মা সে-সময় একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। চারটি গোরু কিনে দুধের ব্যাবসা শুরু করেছিলেন বিশালগড়ের গ্রামে। বালকটি ফিরে এসেছিল মায়ের কাছে। আবার শুরু হয়েছিল পারবারিক মিষ্টির ব্যবসা।
১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পাঠকালীন হারিয়েছিলেন বাবাকে। বাড়ির জ্যেষ্ঠপুত্র হবার জন্য পরিবার চালনা করার গুরুদায়িত্ব এসে পড়েছিল ওঁর ওপর। বাংলাদেশের একটি এন.জি.ও.তে BRAC (Bangladesh Rehabilitation Assistance Committee) তে তাই ৮৬০ টাকা বেতনে চাকরি নিয়েছিলেন। এই সংস্থা বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচী নিয়ে কাজ করে।
এই সংস্থায় কাজ করতে করতে শিখে গিয়েছিলেন কী করে ছোট ঋণ দিয়ে মানুষকে ওপর টেনে তোলা যায়। সাইকেলে ঘুরে ঘুরে সকাল বিকেল মহিলা ও পুরুষদের দলের সঙ্গে শিখেছিলেন গ্রাম্য বিবাদ মীমাংসার কৌশল। জেনেছিলেন মানবতা আদতে কী। আরও জেনেছিলেন গরিবদের কখনও অর্থ বিলোনো উচিৎ না। বরং উচিৎ অর্থ দিয়ে আবার সে অর্থ খানিক বৃদ্ধি করে ফেরত নেওয়া। এতে গরিবদের অসম্মান করাও হয় না আর দরিদ্র মানুষগুলো অর্থের কদর বা সঠিক ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়।
কিন্তু চাকরি ছেড়ে তাঁকে অচিরেই চলে আসতে হয়েছিল দেশে। যোগ দিয়েছিলেন একটি অন্তর্বাস তৈরির সংস্থায়। সেখানে কাজ করতে করতে পশ্চিমবাংলায় একটি এন.জি.ও. Village Welfare Societyতে কাজ করার ডাক পেয়েছিলেন। এখানে কাজ করতে করতেই দেখেছিলেন গ্রামীণ ও শহরতলির সাধারণ দিন আনি দিন খাই মানুষের আর্থিক সংগ্রামের জীবন।
একদিন ঘুরে ঘুরে কাজ করতে গিয়ে লক্ষ করলেন সকালে বাইকে করে এসে একজন মানুষ সবজিওয়ালাকে ৫০০ টাকা ধার দিয়ে প্রথমেই দৈনিক ধারের সুদ ৫ টাকা নিয়ে নিলেন। তারপর দুপুরে এসে ফেরত নিলেন মূল ধার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ আধবেলার জন্য সব্জিওয়ালাকে দিতে হল ১% সুদ। মানে বছরে ৩৬৫%।
সাধারণ দৃষ্টিতে দিনে ৫০০ টাকার খাটিয়ে ৫ টাকা লাভের ভাগ দেওয়া, ঠিকই তো আছে। কিন্তু একজন পরিসংখ্যানবিদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি সুদের হারের খেলাটা। আধবেলার জন্য ৩৬৫%, তার মানে পুরোদিন ধরলে ৭৩০% বাৎসরিক সুদ!
যখন এই দৈনিক ধার নিয়ে দিন গুজরান করা মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলা শুরু করলেন, টের পেলেন এঁরা জানেন না, এঁই সুদখোররা ছাড়া আর কে এঁদের টাকা দিয়ে ‘সাহায্য’ করতে পারে! ধার নেওয়া ও ধার শোধ দেওয়াটা এঁদের কাছে সাহায্যের সামিল বৈকি। তাছাড়া এই ধারটা এঁরা পাচ্ছেন যে জায়গায় প্রয়োজন সেখানে দাঁড়িয়ে। এর জন্য এঁদের কোন সময় নষ্ট হচ্ছে না। কোথাও দৌড়দৌড়ি করতে হচ্ছে না। কাগজপত্রের ঝামেলা নেই। কোন বন্ধক রাখার প্রয়োজন নেই। একহাতে নাও আর এক হাতে দাও। এরজন্য ১০০ টাকায় ১ টাকা সুদ প্রতিদিন দেওয়াই যায়।বিষয়টা ভাবিয়ে তুলল গ্রামেগঞ্জে কাজ করা মানুষটিকে।
সময়টা ১৯৯৯। লড়াকু মানুষটির মাসিক বেতন ৫০০০ টাকা। এই বেতনে স্ত্রী-পুত্র-মাকে নিয়ে সংসার চালান কষ্টকর। তিনি ঠিক করলেন চাকরি ছেড়ে দেবেন। ওই দিন-ধারি মানুষগুলোকে কী করে আরও একটু সস্তায় ঋণ দেওয়া যায় সে চেষ্টা করবেন। সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সময় নেননি। চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় বাড়িতে এসে স্ত্রীকে মনের কথা বলতেই আঁতকে উঠেছিলেন ওঁর সহধর্মিণী। বেতন সামান্য হলেও সংসার তো চলে যাচ্ছে! বেতনভুক পরিবারের কাছে মাসিক নিশ্চিন্ত আয় ছেড়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাটা অনেকটাই দুঃস্বপ্ন। এক্ষেত্রেও অন্যথা হয়নি। অন্য স্বপ্ন দেখা মানুষটি স্ত্রীকে নিশ্চয়তা দিলেন “দেখো আমি অন্তত ওই মাস মাইনের টাকাটা আমার নতুন উদ্যোগ থেকে প্রতি মাসে এনে দেব।”
সারারাত চোখের জলে ভেসে ওঁনার স্ত্রী ফোন করলেন ওঁর দাদাকে। শ্যালক ডেকে পাঠালেন। “আরে তুমি কি পাগল হয়ে গেছ? চাকরি ছেড়ে ভাসতে চাইছ অনিশ্চয়তায়?”
না দমে যাননি উদ্যোগপতি। তিনি বলেছিলেন, “এখন আমার বয়স ৪০। ছেলের বয়স ২। এখনও যদি ঝুঁকি নিয়ে অন্যকিছু না করতে পারি তবে আর কোনদিন করতে পারব না।”
ঝুঁকির পাশাপাশি মানুষটি দেখেছিলেন এটা ক্ষুধার্ত পেটে সবসময় হাসিমুখে থাকা মানুষগুলোর কাছাকাছি থাকার এক মোক্ষম উপায়। মানুষের নির্মল হাসির সান্নিধ্যে আসার সুযোগ অর্থের বিনিময়ে জোটে না। যেতে হয় তাদের প্রাণের কাছে।
২০০১ সালে মানুষটি শুরু করলেন নিজস্ব এন.জি.ও.। দু’লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে একটি অফিস খুললেন কলকাতার অদুরে কোন্ননগরে। এরমধ্যে দেড়লক্ষ টাকা জুগিয়েছিলেন এক আত্মীয়। তখনও পশ্চিমবঙ্গে এত অর্থলগ্নি সংস্থার রমরমা শুরু হয়নি। সাইকেলে চেপে গ্রামে গ্রামে গিয়ে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া শুরু করলেন দরিদ্র মানুষগুলোকে। কাউকে ৫০০ টাকা, কাউকে ১০০০ টাকা। কখনোই বেশি অর্থ নয়। অল্প ধার, অল্প সুদ। মাত্র দু’মাসে শেষ হয়ে গেল পুঁজি। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ধার চেয়ে শূন্য হাতে ফিরে আসতে হল। দমে থাকেননি মানুষটি। অনেক লড়াই করে তাঁর সংস্থার উদ্দেশ্য বুঝিয়ে একটি ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক থেকে ২০ লক্ষ টাকা ঋণ পেলেন।
টাকা ধার দিয়ে সময় মত ফিরিয়ে নিয়ে এসে সে অর্থ দিয়েছেন আরও আরও মানুষকে। টাকা ধার নিয়ে সময়ে ফেরত দেওয়ার গুরুত্ব বুঝেছিলেন মহাজনের কাছ থেকে বিপুল সুদে ধার নেওয়া হতদরিদ্র মানুষগুলো। কারণ সর্বদা হাসিমুখের এই মানুষটির সংস্থা থেকে ধার নিলে সুদ দিতে হত খুব সামান্য। ধার নেওয়া মানুষগুলো বুঝেছিলেন কম সুদে টাকা পাওয়ার অর্থ বেশি সঞ্চয়। আর বেশি সঞ্চয় মানে সন্তানের শিক্ষা, পুষ্টি খাতে বেশি খরচ করার ক্ষমতা।
দশ হাজার টাকার বেশি কখনই ঋণ দেয়নি এই সংস্থা। একবছরের মধ্যেই বাগনানে দ্বিতীয় শাখা খোলে এই সংস্থা। ২০০৬ সালে উদ্যোগী পুরুষটির সংস্থা ট্রাষ্ট থেকে ফিনান্সিয়াল কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। ধার নেবার চাহিদা বাড়তে নাবার্ডের মত সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে এই কোম্পানি ছোট ছোট ঋণের পরিমাণ বাড়াতে থাকে। বাড়তে থাকে সংস্থার শাখা অফিস। ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমবাংলা বাংলা সহ পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অংশে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এই সংস্থায় অর্থ লগ্নি করা শুরু করে। ২০০৭ সালে ফোর্বস পত্রিকা এই কোম্পানিকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাইক্রো ফাইনান্স কম্পানির তকমা দেয়। এই কোম্পানি থেকে ঋণ মেটাবার একটাই শর্ত থাকত। সপ্তাহের শেষে ধারের টাকার খানিক ফেরত দিতে হবে। এই টাকাটাও দিতে হত খুব কম। সপ্তাহে ১০০০ টাকায় ২২ টাকা মত। এই হারে টাকা ফেরত দিয়ে এক বছরে সুদ সহ টাকা শোধ হয়ে গেলে আবার ধার মিলত। আর যাতে প্রত্যেক ঋণগ্রহীতা সময়মত ঋণ শোধ করেন সে বিষয় লক্ষ রাখত কোম্পানির কর্মচারীরা। গ্রামে গ্রামে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হতেন এঁরা। ২০১৪ সালে এই কোম্পানি ৮০০০ কোটি টাকার ঋণ দিয়ে সঠিক সময়ে তা শোধ করেছিল। ২০০২-৩ সালে এই কোম্পানি থেকে ঋণ গ্রহিতার সংখ্যা ছিল ১১৪৩ জন। আর ২০১৪ সালে এই কোম্পানি থেকে ৬৭ লাখ লোক ঋণ নিয়েছিল।
সব কিছুর পেছনে কাজ করেছে এই সংস্থার নিজস্ব মনস্তত্ত্ব। এই সংস্থার লোকেরা বলল যারা সই করতে পারবে না তাদের টাকা দেওয়া হবে না। লিখতে পড়তে শেখাবার জন্য এঁরা গ্রামে অস্থায়ী স্কুল খুলে বাচ্চা ও গ্রামের লোকেদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। গ্রামে গ্রামে শিক্ষার ব্যবস্থা হয়েছিল। অনেক গ্রামের লোকেরা জুতো পরতে চাইত না। খালি পায়ে আসত, কোম্পানির লোকেরা বলল পায়ে চটি বা জুতো না পড়লে ঋণ মিলবে না। লোকেরা জুতো পরতে শুরু করল।
কিন্তু এই কোম্পানির বাজার থেকে টাকা তোলার কোন অধিকার ছিল না। কেউ সঞ্চয় করতে চাইলে এই সংস্থায় করতে পারতেন না। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিলে সেখানে গিয়ে টাকা ফেরত দিতে হত। আর এই কোম্পানির লোকেদের ঋণ গ্রহিতার কাছ থেকে ঋণের টাকা ফেরত নিয়ে আসতে হত। তাই সংস্থা চালানোর খরচ বেশি হত। তাই খরচ কমানো ছাড়া উপায় ছিল না। তাই কোম্পানির কোন অফিসেই বাহুল্য ছিল না। প্লাস্টিকের চেয়ার, একটা টিউব লাইট আর একটা ফ্যান ছিল কোম্পানির সজ্জা। পিয়ন বা এ ধরনের কোন পদ ছিল না। সবাইকে নিজের কাজ নিজে করে নিতে হত। এই ধরনের মাইক্রো ফাইনান্সিং কোম্পানির লোকেদের প্রশিক্ষণ দেবার কোন সংস্থা ছিল না। তাই উদ্যোগী পুরুষটি নিজে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সংস্থার কর্মচারীদের ট্রেনিং দিতেন। ঘুরে বেড়াতেন সাইকেল বা মোটর বাইকে। কিন্তু এতে করে এমন কিছু খরচ বাঁচত না যাতে করে আরও কম সুদে ঋণ দেওয়া যায়।
অতএব সংস্থা দেশের অর্থ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে অনুমতি চাইলেন ব্যাঙ্কের গ্রাহক তৈরি করে তাদের সঞ্চিত অর্থ বাজারে ঋণ হিসেবে পুনরায় খাটাতে। অনুমতি মিলল না। ফলে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে সেই অর্থ দেওয়া হতে লাগল ছোট ঋণ গ্রহিতাদের মধ্যে।
২০১০ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া কিছু ফাইনান্স কোম্পানিকে ব্যাঙ্কের মত আর্থিক লেনদেনের সুবিধা দেবে বলে ঘোষণা করল। ২৬টি কোম্পানি আবেদন জমা পড়ল। আদিত্য বিড়লা গ্রুপ, টাটা সন্স, ইন্ডিয়া বুল, রিলায়েন্স গ্রুপ, বাজাজ ফাইনান্স…। ২০১৩ সালে এই সংস্থাও তাঁদের আবেদন জমা দিলেন ব্যাঙ্কের লাইসেন্স পাবার জন্য।
২০১৫ সালের ১৫ জুন তাবৎ আর্থিক সংস্থাকে হারিয়ে মাত্র দুটো সংস্থা ব্যাঙ্ক গড়ার লাইসেন্স পেল। তার মধ্যে একটি ছিল মাত্র দু’লক্ষ টাকা মূলধন নিয়ে কাজ করতে থাকা পশ্চিমবঙ্গের কোন্নগরে ছোট ঘরে কাজ শুরু করা সংস্থাটি। ২৩ আগস্ট ২০১৫ সালে ৫০১টি শাখা খুলে পুরদস্তুর ব্যাঙ্ক রূপে আত্মপ্রকাশ করল সংস্থাটি। এখন এই ব্যাঙ্কটির প্রায় ১০০০ শাখা ছড়িয়ে আছে দেশময়।
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বিশালগড়ের অখ্যাত গ্রামের এক ছোট মিষ্টির দোকানের মালিকের পুত্র, দিনের পর দিন আর্থিক তাড়নায় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়ানো, মন্দিরের চাতালে বসে পড়াশোনা করা, ৮৭০ টাকা বেতনে চাকরি করা সত্ত্বেও গরিবের কথা ভাবা সেই উদ্যোগী পুরুষের ব্যাঙ্কের স্লোগান ‘আপকি ভালা,সবকি ভালাই।’
চলার পথে স্বীকৃতি ও পুরস্কার এসেছে অনেক। ইকনমিক টাইমসের এন্টারপ্রেনিয়র অব দ্য ইয়ার হয়েছেন ২০১৪ সালে। ২০১৭ সালে ব্যাঙ্কিং উৎকর্ষের জন্য এসেছে রঙ্গরাজন পুরস্কার। ২০১৯ সালে বিজনেস ওয়ার্ল্ড দিয়েছে ব্যাঙ্কার অব দ্য ইয়ার পুরস্কার। কিন্তু সেরা পুরস্কার তাঁর বোধ হয়, “এদেশের কিস্যু হবে না” এই বাঁধাগতের ভণ্ডামির পথে পা না রেখে নিজের শক্তিতে দরিদ্র মানুষের সেবার রাস্তা খুঁজে নিয়ে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া। আসলে, শেষপর্যন্ত, সাফল্যই একজন সফল মানুষের একমাত্র ও শ্রেষ্ঠ পুরস্কার হয়।
এই ব্যাঙ্ক জয়ঢাক প্রকাশনেরও ব্যাঙ্কার।
উদ্যোগী পুরুষটির নাম শ্রী চন্দ্রশেখর ঘোষ। আর তাঁর লড়াইয়ের আর এক নাম – বন্ধন। বন্ধন ব্যাঙ্ক।