এই লেখার আগের পর্বগুলো তাপস মৌলিকের সব লেখা
আকাশ ঘন নীল, এত গাঢ় নীল যে একটু চেষ্টা করলেই মনে হয় তারা দেখা যাবে। উষ্ণ নরম রোদ পরম মমতায় আমাদের স্নান করিয়ে দিচ্ছে। শ্যাজের আবির্ভাবে অন্যরা উল্লাসে হইচই করছিল। আমি শান্তভাবে শুয়ে ছিলাম। মায়ের মতো স্নেহে ওর দড়িটা আমার কোমরে পেঁচিয়ে দিতে দিতে শ্যাজ বলল, “ওঠো মরিস, এবারে নামতে হবে যে!”
শ্যাজের গলায় এমন কিছু ছিল যা আমি অমান্য করতে পারলাম না, বাধ্য ছেলের মতো ওর সাহায্যে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম। দড়িটা টান করে ধরে আগে আগে শ্যাজ নামা শুরু করল। পায়ে কোনও সাড় নেই, মনে হচ্ছিল কাঠের দুটো লাঠিতে ভর করে নেমে চলেছি। তুষারের ওপর প্রখর সূর্যালোকের প্রতিফলনে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছিল। মাথা ঘুরিয়ে অন্যদের দিকে দেখার সাহস হল না, পাছে ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাই!
দু’শো গজ মতো নামার পরেই একটা বরফের দেওয়ালের পেছনে হঠাৎ একটা তাঁবুর সামনে হাজির হলাম। শিবির থেকে মাত্র দু’শো গজ দূরে আমরা বিভোয়া করতে বাধ্য হয়েছিলাম। বোঝো! তাঁবু থেকে বেরিয়ে এল কোজি, কোনও কথা না বলে জড়িয়ে ধরল আমায়। টেরে টেন্টে ঢুকেই জুতো খুলে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ল প্রথমে। ওর পায়েও তুষারক্ষত বাসা বেঁধেছে। একটু পরেই উঠে বসে পা’দুটো মালিশ করতে শুরু করল সে, নির্দয়ভাবে রগড়াতে লাগল। এ ছাড়া বেশি কিছু করার নেই আমাদের। একমাত্র ভরসা এখন অডট, ঠিকঠাক চিকিৎসা করে সেই শুধু আমাদের হাত-পা বাঁচাতে পারে!
এই শিবিরটার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ক্যাম্প ইভা’, রোমান হরফে চার-এর ‘এ’ অর্থাৎ IV-A যেহেতু ‘ইভা’ মনে হয়। এর নিচে আসল চার নম্বর শিবিরে শেরপারা ফের তাঁবু লাগিয়েছে। শ্যাজ বলল আমাদের এক্ষুনি ওই নিচের ক্যাম্পে নেমে যাওয়া উচিত। আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি। টেরে বলল সে আজ এখানেই থাকবে। সর্বশক্তি দিয়ে পাগলের মতো পা মালিশ করতে করতে বলল, “হয় গোটা হাত-পা নিয়ে বাঁচব, নয়তো নয়! দরকার মনে করলে কাল আমায় নামিয়ে নিয়ে যেও।”
রেবুফতের পায়েও তুষারক্ষত হয়েছে। সে কিন্তু নেমে যাওয়াই স্থির করল। ল্যাচেনাল আর কোজির সঙ্গে নামা শুরু করল সে। শ্যাজ রইল আমার সঙ্গে, দড়ি ধরে ধরে খুব সতর্কভাবে নামিয়ে নিয়ে চলল আমায়। এখানে ঢালটা খুব খাড়াই। কঠিন বরফঢালের গায়ে তুষারের আস্তরণটা এতই পাতলা যে পায়ের আঘাতে ধাপ তৈরি করা যাচ্ছে না। নামা খুবই বিপজ্জনক। বেশ কয়েকবার পিছলে পড়লাম। ভাগ্য ভালো যে শক্ত হাতে দড়ি ধরে রাখা সদাসতর্ক শ্যাজ প্রতিবারই সামলে নিল।
ঢালটার নিচের দিকে একদম চার নম্বর শিবির অবধি বেশ চওড়া একটা নালা তৈরি হয়েছে। কোনও সন্দেহ নেই আমাদের সামনের তিন বন্ধু নিচে ক্যাম্প দেখতে পেয়েই ঢাল বেয়ে গ্লিসেড করে নেমে গেছে, এবং তার ফলে ছোটোখাটো একটা তুষারধ্বস নেমে কঠিন বরফঢালের গা থেকে পাতলা তুষারের চাদরটা খসে গেছে। আমার পক্ষে নামাটা আরও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াল তাই। ক্যাম্পের কাছাকাছি আসতেই শেরপারা আমাদের দিকে এগিয়ে এল। ওদের চোখে করুণার দৃষ্টি দেখে আমার অবস্থা যে কতটা শোচনীয় বুঝতে পারলাম। ল্যাচেনালদের তৈরি তুষারধ্বসের ফলে তাঁবুগুলো সব তুষারে ঢেকে গেছিল। শেরপারা তাড়াতাড়ি সেই তুষার সরাতে শুরু করল। তাঁবুর এক কোনায় বসে ল্যাচেনাল তার পা মালিশ করে চলল। পানসি ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল, “দেখবেন, ডাক্তার সাহেব ঠিক সব সারিয়ে দেবেন।”
সবাইকে ফের তাড়া লাগালাম। আরও নিচে নেমে যেতে হবে আমাদের, যত দ্রুত সম্ভব। সেটাই একমাত্র লক্ষ্য এখন। সাজসরঞ্জাম, মালপত্র, তাঁবু যদি পড়ে থাকে তো থাক, কিচ্ছু করার নেই! বর্ষার পরবর্তী আক্রমণের আগেই যে করে হোক এই ভয়ঙ্কর জায়গা ছেড়ে পালাতে হবে। বিশেষত যারা তুষারক্ষতে আক্রান্ত, তাদের কাছে প্রতিটি ঘন্টা এখন অত্যন্ত মূল্যবান। রেবুফত, ল্যাচেনাল আর আমায় নামতে সাহায্য করার জন্য আয়লা আর সরকিকে বেছে নিলাম। ওদের খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিলাম, আমার অবস্থা খুব খারাপ, সবসময় যেন সতর্ক নজর রাখে আর দড়ি দিয়ে শক্ত করে ধরে রাখে। ল্যাচেনাল আর রেবুফত কিছুতেই রোপ আপ করতে, অর্থাৎ দড়ি বেঁধে নামতে রাজি হল না। কেন কে জানে!
নামতে শুরু করলাম আমরা পাঁচজন। ওদিকে আংথারকে আর পানসিকে সঙ্গে নিয়ে শ্যাজ ফের ওপরে গেল টেরেকে নামিয়ে আনার জন্য। একাই পুরো পরিস্থিতির দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে শ্যাজ। ওকেই অভিযানের দলনেতা বলা উচিত এখন। আর কারও কোনও উদ্যোগ নেবার ক্ষমতাই নেই! আবার প্রচণ্ড পরিশ্রম করে ক্যাম্প ‘ইভা’-য় পৌঁছে টেরেকে বলল শ্যাজ, “নামতে হবে, তৈরি হও, আমি আসছি এখনই।”
“হুমম, আমার পায়েও ফের সাড় ফিরে পাচ্ছি,” বলল টেরে, মনে হল সুবুদ্ধি হয়েছে।
“আমি একবার ওপরে যাচ্ছি। কাল রাতে তোমরা যে গর্তে ছিলে সেটা একবার খুঁজে দেখতে হবে, মরিসের ক্যামেরাটা পাওয়া যাচ্ছে না। ওতে শৃঙ্গজয়ের সমস্ত ছবি আছে।”
টেরে কিছু বলল না। ব্যাপারটা ওর মাথাতে ঠিক ঢোকেনি। শ্যাজ সেদিন যে দুঃসাহসী কাজটা করেছিল আমরাও বহুদিন পর তার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। আরও দু’শো গজ ওপরে উঠে সেই ফাটলের মধ্যে নেমে অনেকক্ষণ সে তুষারের মধ্যে হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে চলল। এদিকে তার দেরি দেখে টেরে অস্থির হয়ে উঠেছে, দুশ্চিন্তা করছে। অবশেষে ক্যামেরাটা নিয়ে বিজয়ীর মতো ফিরল শ্যাজ। ওতে সত্যিই শৃঙ্গের ওপরে তোলা ছবিগুলোর ফিল্মটা লোড করা ছিল। আমার আইস অ্যাক্সটাও শ্যাজ উদ্ধার করেছিল, তবে সিনে ক্যামেরাটা আর পাওয়া যায়নি। তাই আমাদের ভিডিও ছবি ২৩,০০০ ফিটের ওপরে আর নেই।
এরপর শুরু হল নামা। সবার আগে আংথারকে, টেরের সুবিধের জন্য বরফে বড়ো বড়ো ধাপ কেটে দুর্দান্ত এগোতে থাকল সে। সকলের ওপর সতর্ক নজর রেখে সবশেষে চলল শ্যাজ। এদিকে আমাদের প্রথম দলটাও ধীরে ধীরে নেমে চলেছিল। নরম তুষারে হাঁটু অবধি ডুবে যাচ্ছিলাম আমরা। ল্যাচেনালের অবস্থা আরও খারাপ এখন, বারে বারে থেমে পড়ে পা ব্যথায় কাতরাচ্ছিল সে। আমার কয়েক গজ পেছন পেছন নামছিল রেবুফত।
ইদানীং সবসময়ই একটা দুশ্চিন্তা আমায় কুরে কুরে খাচ্ছিল, শেষটায় খারাপ আবহাওয়ার পাল্লায় পড়ে আমাদের এই সর্বাঙ্গসুন্দর অন্নপূর্ণা অভিযানের অকাল পরিসমাপ্তি না ঘটে! বলা হয়, পর্বতারোহীদের একটা ষষ্ঠেন্দ্রিয় থাকে যা ওঁত পেতে থাকা বিপদ সম্পর্কে তাদের আগাম সতর্ক করে দেয়। হঠাৎ আমার সেই ষষ্ঠেন্দ্রিয় সজাগ হয়ে উঠল! দেহের সমস্ত রোমকূপ দিয়ে যেন অনুভব করলাম… বিপদ আসছে! চারদিকের আবহাওয়ায় এমন একটা কিছু ছিল যা অগ্রাহ্য করা যায় না। প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম। গতকাল প্রচুর তুষারপাত হয়েছে, আর আজ সকাল থেকে প্রখর সূর্যালোক ঢালের ওপর পুরু হয়ে জমে থাকা সেই তুষারের আবরণকে গরম করে তুলেছে। যে কোনও সময় এই তুষারের স্তর ঢাল থেকে আলগা হয়ে পিছলে নিচে নামা শুরু করতে পারে। হিমালয়ের তুষারধ্বসের যে কী অকল্পনীয় ধ্বংসাত্মক শক্তি তা আল্পসের কোনওকিছুর উপমা দিয়ে বোঝানো যাবে না। এখানে একেকটা বড়ো তুষারধ্বস মাইলের পর মাইল নেমে চলে, আর পথে যা কিছু পড়ে তা ভেঙে গুঁড়িয়ে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।
তুষারে প্রতিফলিত সূর্যের আলো এতই প্রখর যে স্নো গগলস ছাড়া চোখ খোলাই অসম্ভব। ভাগ্য ভালো যে আমাদের দলের একেকজনের মধ্যে ব্যবধান অনেকটা, তাই ঝুঁকি একটু কম। সব একসঙ্গে দলবেঁধে নামলে আমাদের ভারেই হয়তো ধ্বস শুরু হয়ে যাবে! তুষারপাতের ফলে রাস্তার সমস্ত চিহ্ন মুছে গেছে। শেরপারা সঠিক রাস্তা চিনতে পারছে না। খুব অসুবিধে হলেও প্রায়ই আমাকে সামনে থেকে রাস্তা চেনাতে হচ্ছিল তাই। কোমরে বাঁধা দড়ি শক্ত করে ধরে রেখে ওরা আমায় সামনে এগিয়ে দিচ্ছিল! আমার না আছে পায়ে ক্র্যাম্পন, না ঠিকঠাক ধরতে পারছি আইস অ্যাক্সটা!
খুবই ধীরে ধীরে নামছিলাম আমরা। মোটেই পছন্দ হচ্ছিল না আমার। শেরপারা ধাপ কাটতে কাটতে এতই টুকুস টুকুস করে নামছিল যে অধৈর্য লাগছিল। আসলে কিন্তু যথেষ্ট তাড়াতাড়িই এগোচ্ছিল ওরা। এতটাই অধৈর্য হয়ে পড়েছিলাম আমি যে ওরকম মনে হচ্ছিল।
ল্যাচেনাল অনেক পেছনে পড়ে গেছে। যতবারই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাই দেখি সে ঢালের ওপর বসে আছে। ওর চোখেও তুষার-অন্ধতা বাসা বেঁধেছে, তবে টেরে বা রেবুফতের মতো অতটা করুণ অবস্থা ওর নয়। রাস্তা দেখে চলতে অবশ্য অসুবিধে হচ্ছে। রেবুফত কিন্তু খুব সতর্কভাবে আন্দাজে আন্দাজে ঠিক নেমে চলেছে, থামছে না। সেই তুষারধ্বসপ্রবণ বিপজ্জনক নালাটা আমরা নিরাপদেই পেরিয়ে গেলাম। যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম… যাক, সবচেয়ে বিপৎসংকুল এলাকাটা তাহলে পেরিয়ে আসা গেল! নিজেকে নিজেই অভিনন্দন জানালাম।
সূর্য তখন এক্কেবারে মাথার ওপর। অসাধারণ আবহাওয়া। চারদিক ঝকঝক করছে। আগে কখনও হিমালয়কে এত রাজসিক মনে হয়নি, যা আজ এই বিপদের মুহূর্তে মনে হচ্ছিল।
আচমকা আমার সঙ্গী দুই শেরপার ঠিক পায়ের তলায় তুষারে একটা ফাটল তৈরি হল, দেখতে না দেখতে সেটা লম্বা-চওড়ায় বেড়ে চলল। বিদ্যুৎচমকের মতো আমার মাথায় এল – এক্ষুনি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমায় পেছন ফিরে ওপরে উঠতে হবে, কোনও নিরাপদ পাথুরে জায়গায় পৌঁছোতে হবে। এক অতিমানবিক শক্তি যেন আমার ওপর ভর করল। মুহূর্তের মধ্যে আমি পিছিয়ে ওপরে উঠে গেলাম। শেরপা দু’জন আমার চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে গেল। তাদের সঙ্গে কোমরে বাঁধা দড়ির হ্যাঁচকা টানে আমি মুখ থুবড়ে পড়লাম। কী হচ্ছে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। মাথাটা শক্ত বরফে ঠুকে গেল। চারদিক তুষারে ছেয়ে গেল। চেষ্টা করেও শ্বাস নিতে পারছি না আর। বাঁ পায়ের থাইয়ে একটা প্রচণ্ড আঘাতে সারা শরীর যেন অবশ করে দিল। পুতুলের মতো গড়গড় করে নিচে গড়িয়ে চললাম আমি। চারপাশ দিয়ে নেমে চলা তুষারকণার ফাঁক দিয়ে মুহূর্তের জন্য একবার সূর্যের আলোর তীব্র ঝলকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে গেল। সরকি, আয়লা আর আমার মধ্যে বাঁধা দড়িটা আমার ঘাড়ে পেঁচিয়ে গেছে। আমার বেশ খানিকটা নিচে ওরা গড়িয়ে চলেছে। দড়ির প্যাঁচটা ধীরে ধীরে চেপে বসছে। একটার পর একটা শক্ত বরফখন্ডে ধাক্কা খেতে খেতে আমি নিচে নেমে চললাম। শরীরের ওপর তুষারের ওজন যেন পিষে দিচ্ছে। হঠাৎ কেমন করে জানি না আটকে গেলাম। একটা হ্যাঁচকা দিয়ে দড়িটা ঘাড়ের ওপর যেন কেটে বসে গেল। কীভাবে কী হল কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি আতঙ্কে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলেছি!
চোখ খুললাম। দেখি নিচের দিকে মাথা করে ঝুলে আছি। দড়িটা ঘাড়ে আর বাঁ পায়ে পেঁচিয়ে আছে, দড়িতে আটকে পেন্ডুলামের মতো দুলছি আমি। জায়গাটা শক্ত নীল বরফের একটা খোঁদল মতো। দু’পাশে হাত বাড়িয়ে দেয়াল ধরে দুলুনিটা আটকানো গেল। নিচে দেখা যাচ্ছিল সেই বিপজ্জনক নালাটার ঢালের শেষ প্রান্ত। ধীরে ধীরে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে এল। দড়িটা যে এই হ্যাঁচকা টান সইতে পেরেছে তার জন্য মনে মনে ওটাকে ধন্যবাদ দিলাম।
এখন এই খোঁদল থেকে বেরোই কী করে? হাত-পা পুরো অসাড় হয়ে গেছে। দু’হাতে দু’পাশের দেয়াল আঁকড়ে ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে দিয়ে কোনওরকমে বাঁ পা-টা দড়ির প্যাঁচ থেকে ছাড়ালাম, তারপর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারলাম। দেওয়ালের গায়ে বুটের ডগা রাখার মতো খাঁজ অন্তত পাওয়া গেল! সেই খাঁজে পা রেখে রেখে অতি কষ্টে এক-দুই গজ উঠলাম। শরীরে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। প্রতি পদক্ষেপেই মনে হচ্ছিল এই হয়তো শেষ, আর বোধহয় পারলাম না!
আর একটা বেপরোয়া চেষ্টা, আরও কয়েক ইঞ্চি ওপরে উঠলাম। তারপর দড়ি ধরে টেনে দেখলাম। মনে হল দড়ির অন্য প্রান্তে কিছু রয়েছে! নিশ্চয়ই আমার শেরপা বন্ধুরা। চিৎকার করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু গলা দিয়ে ফিসফিসে আওয়াজ ছাড়া কিছুই বেরোল না। চারিদিকে মৃত্যুর নিস্তব্ধতা। রেবুফত কোথায়?
এই সময় একটুকরো একটা মেঘ সূর্যকে আড়াল করল। ছায়া পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওপরদিকে তাকালাম। দেখি গাঢ় নীল আকাশের পটভূমিতে আতঙ্কগ্রস্ত কালো কালো দুটো মুখ! আয়লা আর সরকি। ঠিকঠাকই আছে ওরা। সঙ্গে সঙ্গে দু’জন আমায় উদ্ধার করার কাজে লেগে পড়ল। আমার কোনও কথা বলার ক্ষমতা ছিল না। আয়লা কোথায় যেন চলে গেল, গর্তের মুখটায় দাঁড়িয়ে রইল শুধু সরকি। দড়িতে টান পড়ল। যাতে কোথাও চোট না লাগে সেভাবে ধীরে ধীরে দড়ি টেনে ওরা আমায় ওপরে তুলতে লাগল। অবশেষে খোঁদলটা থেকে মুক্তি পেলাম। ওপরে উঠে তুষারের ওপর হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লাম।
দড়িটা একটা শক্ত বরফের গিরিশিরায় আটকে গেছিল, আমি আর শেরপা দু’জন গিরিশিরার দুই বিপরীত দিকে ঝুলছিলাম। ভাগ্য ভালো যে আমার আর শেরপা দু’জনের মোট ওজন প্রায় এক, তাই দাঁড়িপাল্লা সমান সমান হয়ে গেছে। এভাবে আটকে না গেলে আমরা আরও ১৫০০ ফিট নিচে গড়িয়ে পড়তাম।
চারদিকে ধ্বংসের চিহ্ন। রেবুফত কোথায় গেল? ওর কোমরে তো দড়িও বাঁধা ছিল না! প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা নিয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখি আমাদের মাত্র একশ গজ ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে ব্যাটা।
“হাড়গোড় ভেঙেছে কোনও?” চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল সে।
যাক বাবা! একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। তবে ওর কথার উত্তর দেবার শক্তি আমার ছিল না। অর্ধচেতন অবস্থায় চিত হয়ে শুয়ে ভ্যাবলার মতো চারপাশের লন্ডভন্ড অবস্থা দেখে যাচ্ছিলাম। প্রায় ৫০০ ফিট গড়িয়ে পড়েছি আমরা! শুয়ে থাকার পক্ষে জায়গাটা মোটেই নিরাপদ নয়। যদি আবার তুষারধ্বস নামে? তাই শেরপাদের বললাম, “চলো, এক্ষুনি চলো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার সাহিবের কাছে নিয়ে চলো আমায়।”
আকারে ইঙ্গিতে ওদের বুঝিয়ে বললাম খুব শক্ত করে যেন দড়ি ধরে টেনে রাখে আমায়। সেটা করতে গিয়ে দেখি বাঁ হাতটা একেবারে বেকার হয়ে গেছে, আর নাড়াতেই পারছি না। বাঁ কাঁধ থেকে পুরো অসাড় হয়ে গেছে। ভাঙল নাকি? দেখা যাবে পরে! এখন যত শীঘ্র সম্ভব অডটের কাছে পৌঁছোতে হবে।
রেবুফত নেমে এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দিল। খুব ধীরে ধীরে হাঁটছে ও। পরখ করে করে আন্দাজে পা ফেলে খুব সাবধানে নামতে হচ্ছে। ওকে এভাবে হাঁটতে দেখে আমার হৃদয় সমবেদনায় ভরে উঠল। বেচারা! তুষারধ্বসের কবল থেকে রেবুফতও রেহাই পায়নি। সেও গড়িয়ে পড়েছে। শক্ত কোনও কিছুর সঙ্গে নিশ্চয়ই ওর চোয়ালে ঠোক্কর লেগেছে, কারণ দেখলাম, ঠোঁটের দু’পাশ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আমার মতো সেও স্নো গগলসটা খুইয়েছে, তাই বাধ্য হয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। আয়লার কাছে একটা বাড়তি গগলস ছিল, সেটা আমার কাজে লেগে গেল, আর বিন্দুমাত্র ইতস্তত না করে সরকি তার নিজের গগলস খুলে রেবুফতকে দিয়ে দিল।
তাড়াতাড়ি নামতে হবে আমাদের। শেরপাদের সাহায্য নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম আমি, তারপর যতটা দ্রুত সম্ভব নামতে শুরু করলাম। তুষারধ্বসে লন্ডভন্ড জায়গাটা এড়িয়ে একটু নিচে ফের আমাদের পুরোনো রাস্তায় ফিরে এলাম। খানিক পরেই এল ফিক্সড রোপ লাগানো শক্ত বরফের সেই ওভারহ্যাংওয়ালা দেয়ালটা। এবারে নামি কী করে? শেরপা দু’জনকে আবারও বললাম, “খুব শক্ত করে দড়ি ধরে টেনে রাখবে আমায়, কেমন? কারণ…,” এই বলে আমার হাত দুটো দেখালাম ওদের।
“হ্যাঁ, স্যার,” বাধ্য ছেলের মতো ঘাড় নাড়ল ওরা।
পিটন-এর সামনে এসে দাঁড়ালাম। ফিক্সড রোপ এই পিটনেই বাঁধা, দেয়াল বেয়ে খাড়া নিচে নেমে গেছে। হাত দিয়ে দড়িটা ধরেই নামতে হবে, অন্য কোনও রাস্তা নেই। জঘন্য একটা কাণ্ড হল! অসাড় পা দুটো বারবার শক্ত বরফের দেয়ালে পিছলে যাচ্ছে, সরু দড়িটা হাত দিয়ে ভালো করে আঁকড়ে ধরতেও পারছি না! বাধ্য হয়ে দড়িটা হাতে কয়েকবার পেঁচিয়ে নিলাম যাতে ফসকে না যায়। কিন্তু জায়গাটা বেশ ফুলে আছে, জায়গায় জায়গায় চামড়া কুঁচকে গেছে। নামা শুরু করতেই দড়ির ঘষায় তুষারক্ষত বাসা বাঁধা হাতের সেই অংশ থেকে চড় চড় করে চামড়া উঠে গিয়ে দড়ির গায়ে লেগে গেল, হাতের মাংস বেরিয়ে গেল। কিছু করার নেই, এভাবেই নামতে হবে। মাঝপথে তো থামা যায় না! চিৎকার করে বললাম, “আয়লা, সাবধান! সাবধানে দড়ি ধরে থাকো।”
এবারে তুষারক্ষত বসা জায়গাটা বাঁচিয়ে দড়িটা হাতের স্বাভাবিক অংশে প্যাঁচালাম, তারপর ঝাঁকুনি দিয়ে দিয়ে নামতে থাকলাম। মাটিতে পৌঁছোবার তিন ফিট আগে দড়ি থেকে পিছলে পড়ে গেলাম। অসাড় পা দুটোয় জোর ঝটকা লাগল। এক পায়ে খটাস করে একটা আওয়াজ হল, মনে হয় ভাঙল কোনও হাড়! অসাড় থাকায় কোনও ব্যথা অনুভব করলাম না।
রেবুফত আর শেরপা দু’জন নেমে আসার পর ফের চলা শুরু হল। চলা যেন আর শেষই হয় না! দু’নম্বর শিবিরের তুষারপ্রান্তর এখনও বহু দূর। শারীরিক ক্ষমতার শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি আমি। প্রতি মুহূর্তে মনে হতে লাগল, ধুর, ছেড়ে দিই, আর কষ্ট করে লাভ কী? অন্তত আমার আর কোনও আশা নেই। মনের দিক থেকে আমি পরিষ্কার। বাকি সবাই মোটামুটি সুস্থই আছে, নিরাপদেই নিচে নেমে যাবে সকলে। আমার দায়িত্ব শেষ! অনেক দূরে নিচে দু’নম্বর শিবিরের তাঁবুগুলো দেখা যাচ্ছে। আর মাত্র এক ঘন্টা! আমি নিজেকে আর এক ঘন্টা সময় দিলাম। তারপর যেখানে যে অবস্থাতেই থাকি না কেন, তুষারে শুয়ে পড়ব। যা হয় হোক! ঘুমিয়ে পড়ব। ঘুম… ঘুম… চিরশান্তির ঘুম!
এক ঘন্টার এই সময়সীমা ঠিক করার পর মন একটু শান্ত হল। খাড়াই ঢাল বেয়ে নামতে গিয়ে বার বারই পিছলে পড়ে যাবার উপক্রম হচ্ছিল, কী করে শেরপারা আমায় বাঁচিয়েছে প্রতিবার জানি না! এরপর রাস্তা এসে থামল খাড়া বরফের দ্বিতীয় দেয়ালটার ওপর। এই দেয়ালটা আরও উঁচু, এখানেও আমরা ফিক্সড রোপ লাগিয়েছিলাম। মন শক্ত করার চেষ্টা করলাম আমি, কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না কী করে দড়ি ধরে এই খাড়া দেয়াল বেয়ে নামব! এক হাতে গ্লাভস পরা ছিল, আরেক হাত লাল রঙের একটা সিল্কের স্কার্ফ দিয়ে জড়ানো। স্কার্ফটা রক্তে মাখামাখি। গ্লাভস আর স্কার্ফ দুটোই খুলে ফেললাম। হাতের কথা চিন্তা করে আর লাভ নেই। যা হয় হবে! আয়লা আর সরকিকে একটা পছন্দমতো নিরাপদ জায়গায় দাঁড় করালাম। ওখানে দাঁড়িয়ে বিলে করলে দু’জন মিলে আশা করি দড়ির টান সামলে আমার পতন রোধ করতে পারবে ওরা। দু’হাতের বুড়ো আঙুল আর তর্জনীর মধ্যে ফিক্সড রোপটা আঁকড়ে ধরে নামার জন্য প্রস্তুত হলাম। দু’হাত থেকেই রক্ত পড়ছে। নামা শুরু করতেই হাতে এত যন্ত্রণা বোধ হল যে ভাবলাম দড়ি ছেড়ে দিই! কিন্তু এখন দড়ি ছেড়ে দিলে আমি, সরকি আর আয়লা তিনজন মিলেই হয়তো নিচে আছড়ে পড়ব! আর না ছাড়লে আমার হাত দুটোর যে কী দশা হবে কে জানে! দাঁতে দাঁত চেপে দড়ি ধরে থাকাই ঠিক করলাম।
চামড়া উঠে মাংস বেরিয়ে গিয়ে হাতদুটোর একেবারে বীভৎস অবস্থা। দড়ি রক্তে লাল! হাতের ওপর যথাসম্ভব কম নির্যাতন করে কাঁধ, পেট ইত্যাদি যাবতীয় জায়গা কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে দড়ি ধরে নামতে থাকলাম। কোমরে বাঁধা বিলে রোপটায় টান পড়ল, তাহলে কি পৌঁছে গেলাম নিচে! কিন্তু পা দিয়ে অনুভব করে শক্ত বরফের দেয়াল ছাড়া কিছু পেলাম না। অর্থাৎ এখনও পৌঁছইনি! চিৎকার করে সরকি আর আয়লাকে তাড়াতাড়ি আরও বিলে রোপ ছাড়তে বললাম। ওরা একসঙ্গে অনেকটা দড়ি দিল ছেড়ে। ফলে ফিক্সড রোপ বেয়ে নামার গতি গেল বেড়ে! হাত দুটোর সমস্ত মাংসই দড়ির ঘষায় খুলে না আসে! অবশেষে পায়ের নিচে ঠেকল কিছু। যাক, পৌঁছে গেছি! গজ তিনেক এগিয়ে নরম তুষার ঢাকা অঞ্চলে পৌঁছে কোমর অবধি ডুবে যাওয়া তুষারে শরীর ছেড়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম।
অর্ধচেতন অবস্থায় কতক্ষণ শুয়ে ছিলাম জানি না। চেতনা ফিরলে অল্প চোখ ফাঁক করে দেখি রেবুফত আর শেরপা দু’জন আমার পাশে। নিচে দু’নম্বর শিবিরের কাছে ছোটো ছোটো কালো বিন্দুর মতো লোকজনের নড়াচড়া দেখতে পাচ্ছিলাম। সরকি দুটো কালো বিন্দুর দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, দু’জন শেরপা দু’নম্বর ক্যাম্প থেকে আমাদের দিকে আসছে। এখনও অনেক দূরে ওরা, তাও মনটা খুশিতে ভরে গেল।
নাহ, মনটা চাঙ্গা করতেই হবে। নইলে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। তুষারক্ষত ক্রমে আরও জাঁকিয়ে বসছে। পায়ের কাফ মাসল অবধি আর হাত দুটোর প্রায় কনুই অবধি কোনও সাড় নেই। আবহাওয়া মেঘলা হয়ে গেছে। তাও সরকি আমার চোখে স্নো গগলসটা পরিয়ে দিল, এক হাতে গ্লাভসও পরিয়ে দিল। কিন্তু বাঁ হাতটার অবস্থা এমনই ভয়াবহ যে দেখেই আঁতকে উঠল সে, তাড়াতাড়ি লাল সিল্কের স্কার্ফটা বেঁধে ঢেকে দিল।
ফের আমাদের সেই বিচিত্র অবতরণ শুরু হল, আর প্রতি পদক্ষেপেই আমার মনে হতে থাকল যেন এই শেষ! ছেঁড়া ছেঁড়া কুয়াশার ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে নিচ থেকে কাছে এগিয়ে আসতে থাকা কালো বিন্দু দুটো চোখে পড়ছিল। নালা বেয়ে নামা তুষারধ্বস জমে জমে তৈরি বরফস্তূপটার গোড়ায় এসে থেমে গেল ওরা। দুত্তোর! থামল কেন?
তুষারপাত শুরু হল। তার মধ্যে একটা বড়ো এবং বিপজ্জনক তুষারঢাল আড়াআড়ি পেরোতে হল আমাদের, সেখানে বিলে রোপের সাহায্যে একে অন্যকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। আরও পঞ্চাশ গজ নেমে বরফস্তূপটার মাথায় পৌঁছলাম। এবারে কালো বিন্দু দুটোকে চিনতে পারলাম – ফুথারকে আর আংদাওয়া। নাঃ, থেমে নেই, ঐ তো ওরা উঠে আসছে আমাদের দিকে! ওদের চিন্তিত মুখচোখ দেখে মনে হল কোনও নিদারুণ দুঃসংবাদের আশঙ্কায় ছিল ওরা। আংদাওয়া নিশ্চয়ই ওর দুই ভাই আয়লা আর পানসির জন্য দুশ্চিন্তা করছে! আয়লা তো আমাদের সঙ্গেই আছে। আংদাওয়া স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছে ওকে, কিন্তু পানসির কী খবর? দূর থেকেই ওদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়ে গেল, চলল খবর আদানপ্রদান। যখন ওপর আর নিচের দুই দল মিলিত হল, ততক্ষণে সবার সবকিছু জানা হয়ে গেছে!
একটা গভীর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি। বিশাল এক বোঝা যেন ঘাড় থেকে নেমে গেল! বোঝাটা আরেকটু হলে আমায় পিষেই ফেলছিল আর কি!! ফুথারকে কাছে এসে সুন্দর করে হাসল। কী নির্মল হাসি ওর! দু’চোখে মায়ের মতো মমতা। কে এদের ‘অশিক্ষিত’ ‘অমার্জিত’ বলে? কে বলে প্রতিদিনের অসম্ভব কষ্টকর জীবন এদের মানবিক গুণগুলো কেড়ে নিয়ে যন্ত্র বানিয়ে দেয়?
শেরপা দু’জন দৌড়ে এল আমার কাছে। রুকস্যাক নামিয়ে ফ্লাস্ক খুলল তাড়াতাড়ি। গরম কফি… আহ! কয়েক চুমুক গরম কফি। আর কী চাই জীবনে? আ…হ… কতদিন পর…!!
ফুথারকের চোখ পড়ল আমার হাত দুটোর ওপর। করুণা ভরা চোখ দুটো তুলে আমার চোখে তাকাল সে। নরম স্নেহঝরা কন্ঠে বলল, “বেচারা বড়া সাহিব!! আহা রে…”
ওদের পেয়ে মনে আবার একটু সাহস এল। দু’নম্বর শিবির আর খুব দূরে নয়। ফুথারকের সাহায্যে উঠে দাঁড়ালাম, আংদাওয়া পেছন থেকে দড়ি ধরে আমাদের বিলে করতে লাগল। ফুথারকের চেহারাটা আমার চেয়ে ছোটোখাটো। আমি পেছন থেকে ওর গলা জড়িয়ে ধরে পিঠে ভর দিয়ে ছোটো ছোটো পদক্ষেপে চলতে শুরু করলাম। ওর শরীরের উত্তাপ পেয়ে খুব আরাম বোধ হল। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলাম ওকে, শরীরের প্রায় পুরো ওজনই ছেড়ে দিলাম ওর ওপর। এভাবেও কি শেষ অবধি পৌঁছোতে পারব দু’নম্বর ক্যাম্পে? শরীরের শেষ শক্তিটুকু জড়ো করে ফুথারকের কাছে প্রায় ভিক্ষে চাওয়ার মতো বললাম, আরেকটু সাহায্য করো আমায়। ও আমার স্নো গগলসটা চোখ থেকে খুলে নিল, তুষারপাতে আবছা হয়ে গেছিল ওটা। এবার দেখলাম, আর মাত্র কয়েক পা… পৌঁছে গেছি…।
(এরপর আগামী সংখ্যায়)
amar proyo series..
LikeLike