নন্দিতা মিশ্র চক্রবর্তী
একটি সাক্ষাতকার
খুব ভোরে আজ বিম্বিসারের ঘুম ভেঙে গেছে। ঘুম ভাঙতেই আজ তাঁর ডান বাহু হঠাৎ কেঁপে উঠল, পরপর তিনবার। পরম শুভ কোনো সংবাদ আসতে চলেছে তাঁর জীবনে! কী সেই শুভ সংবাদ? রাজার মন প্রসন্ন হয়ে উঠল। প্রভাতী সঙ্গীত বাজছে রাজবাড়ির দুয়ারে। ভৈরব। সেই সুর শুনে মহারাজ অন্তরে এক অপূর্ব আনন্দ পেলেন। সকালে এমন সুর তিনি বহুবার শুনেছেন। তবে এমন আনন্দের অনুভূতি কখনও জাগেনি তাঁর মনে। তিনি স্নানঘরে গিয়ে নানা সুগন্ধীচূর্ণ মিশ্রিত উষ্ণ জলে স্নান করে নিলেন। তারপর প্রাসাদের সুবিশাল অলিন্দে এসে দাঁড়ালেন।
রাজপ্রাসাদটি একটি সুউচ্চ পাহাড়ের গায়ে নির্মিত। শ্বেত পাথরে তৈরি, এছাড়া স্থানে স্থানে আছে শ্বেতপঙ্খের প্রলেপ। রাজার শয়ন কক্ষের সামনের অলিন্দ থেকে বাইরের দিকটা বহুদূর পর্যন্ত দেখা যায়। রাজগৃহ একটি পার্বত্য শহর। পার্বত্য ঢালে দাঁড়ালে বহুদূর থেকে দেখা যায় নগরের দিকে আসা শত্রুদের। যা এই নগরকে অতিরিক্ত সুরক্ষা দেয়। আর সেই কারণেই হয়তো, বর্তমান মগধরাজ বিম্বিসারের পিতামহ রাজগৃহকে তাঁর রাজ্যের রাজধানী করেছিলেন। বিম্বিসার এই শিশুনাগ বংশের পঞ্চম রাজা। বিম্বিসার সুদর্শন ও অত্যন্ত প্রজাবৎল রাজা। তিনি ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অনুসরণকারী হলেও অন্যান্য প্রচলিত ধর্মাচারণ পদ্ধতির উপরও তিনি শ্রদ্ধাশীল।
এখন আষাঢ় মাস। তবুও প্রকৃতিতে আজ যেন বসন্তের আভাসটুকু থেকে গেছে বলে মনে হল বিম্বিসারের। আষাঢ় পূর্ণিমায় রাজবাড়িতে বিশেষ পুজো ও যজ্ঞের অনুষ্ঠান ছিল। তারপর কেটে গেছে প্রায় এক সপ্তাহ। একটু দূরে পাহাড়ের গায়ে সারিবদ্ধ শালগাছগুলিতে ফুল এসেছে। রাশি রাশি অশোক ফুল ফুটেছে রাজবাড়ির সামনের উদ্যানে, তার মৃদু সুগন্ধবাহী বাতাস বইছে। সূর্যের প্রখর তেজ এখনও শুরু হয়নি। দূরে গৃধ্রকূট পর্বতশ্রেণী দেখা যাচ্ছে। এই পাহাড়ের চূড়ার আকৃতি অবিকল শকুনের গলার মতো সরু আর চূড়ায় অসংখ্য শকুনের দেখা মেলে। তাই এই পাহাড়ের নাম গৃধ্র (মাগধী ভাষায় গিজ্ঝকু) বা শকুন পর্বত। এই পর্বতের অজস্র গুহাগুলিতে দেখা মেলে বহু ধর্মপ্রাণ মহাত্মাদের। বিচিত্র তাঁদের ধর্ম রীতি। বিচিত্র তাঁদের পালন পদ্ধতি।
দূরে একজন সন্ন্যাসী নগর দুয়ার দিয়ে প্রবেশ করলেন রাজগৃহে। অপূর্ব কান্তিময় এক মহামানব। তাঁর সর্বাঙ্গ থেকে যেন তেজ আর জ্যোতি ঠিকরে বের হচ্ছে। সন্ন্যাসী পুবদিকের দুয়ার দিয়ে নগরে এসেছেন। তাঁর হাতে ভিক্ষাপাত্র আর দণ্ড। মাথায় দীর্ঘ কেশ নেই, তবে সম্পূর্ণ মুণ্ডিতমস্তকও নন তিনি। বিম্বিসার আশ্চর্য হলেন এই সন্ন্যাসীকে দেখে। তিনি তাঁর সচিবকে ডেকে পাঠালেন। বললেন, “অবিলম্বে এই পরিব্রাজকের পেছনে চর নিযুক্ত করতে হবে। ইনি অত্যন্ত সুন্দর, ব্যক্তিত্বময় এবং মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ। দেখে অবশ্যই কোনও দেশের রাজপুত্র বলেই মনে হচ্ছে। এই ব্যক্তি নীচু জাতি হতেই পারেন না। দেখুন ওঁর দৃষ্টি সাধারণ পর্যটকের মতো এদিক-ওদিক ঘোরা ফেরা করছে না। ইনি সামনে চলার পথটুকুর বাইরে তাকাচ্ছেন না। ইনি কী করছেন? কোথায় যাচ্ছেন? সমস্ত খবর আমার চাই। সারাদিন এঁকে পর্যবেক্ষণ করে, দুপরের আগেই আমাকে খবর দিন।”
মহারাজের কথায় সঙ্গে সঙ্গে তিনচারজন গুপ্তচর নিযুক্ত হল সেই সন্ন্যাসীর পেছনে। তারা সন্ন্যাসীর প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে লাগলো সর্বক্ষণ।
নগরের লোকজনও সন্ন্যাসীর প্রসংশা করতে লাগলেন। সবার মনে এক প্রশ্ন কে ইনি? কেউ বলল, ইনি হলেন কোনও ছদ্মবেশী দেবতা। নাগরিকদের দানশীলতাঁর পরীক্ষা নিতে এসেছেন। কেউ বলল, ইনি জগৎ–গুরু। জনগণ প্রাণভরে ভিক্ষা দিল আগত অতিথিকে।
ভিক্ষা সংগ্রহের সময় সন্ন্যাসী ধনী দরিদ্র এইভাবে বিচার না করে, সব ঘর থেকেই ভিক্ষা সংগ্রহ করলেন। তারপর নগরের পুবদিকের দরজা দিয়েই আবার বেরিয়ে গেলেন। তিনি মুনি পণ্ডব (বা চলতি কথায় পাণ্ডব) পাহাড়ের একটি গুহায় এসে বসলেন ভিক্ষান্ন খাবেন বলে। সন্ন্যাসী মিশ্রিত খাবার সংগ্রহ করেছেন, তাঁর ভিক্ষাপাত্রে। তিনি হাত ধুয়ে এসে খাবার মুখে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে বিকৃত করলেন তাঁর মুখ। যেন তাঁর নাড়ি পাক দিয়ে উঠেছে। কদর্য ভিক্ষান্ন তাঁর বমির উদ্রক করেছে। তিনি বহুকষ্টে বমির উদ্রেক সামলে নিলেন।
তাঁর মনে পড়ে যাচ্ছে, তিনি তিন বছরের পুরানো সুগন্ধী পাহাড়ি শালিত চালের অন্ন বিভিন্ন তরিতরকারী সহযোগে সুদৃশ্য থালায় করে রোজ গ্রহণ করতেন। গৃহত্যাগ করার পর আজ অষ্টম দিবস। এতদিন তাঁকে ভিক্ষান্ন খেতে হয়নি। তিনি কিছুদিন দুজন ব্রাহ্মণী শাক্যা ও পদ্মার আশ্রমে ছিলেন। তারপর রৈবত ঋষির আশ্রমে কিছুদিন ছিলেন। আশ্রমের অন্ন বিশেষ পরিচ্ছন্ন ও সুস্বাদু। অনুপ্রিয় নামক সেই আমবাগান থেকে দিবারাত্রি প্রায় পঁয়তাল্লিশ মাইল পথ হেঁটে খুব ভোরে আজ তিনি এসে পৌঁছেছেন রাজগৃহ নগরে। কিছু খাদ্য গ্রহণ করা তাঁর এখন খুব প্রয়োজন। সারাদিন তিনি প্রায় কিছুই খাননি।
তিনি ভিক্ষাপাত্র হাতে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বসে থাকলেন। যেন নিজেকে কিছুক্ষণ সময় নিয়ে সামলে নিলেন। তারপর অবলীলায় সেই বাসি, সবরকমের মেলানো মেশানো, ঠাণ্ডা ও বিস্বাদ অন্ন খেয়ে নিলেন।
গুপ্তচরদের দলের মধ্যে কয়েকজন তাঁর কাছে থাকলেন। বাকিরা রাজবাড়িতে সন্ন্যাসীর গতিবিধির খবর দিতে বিম্বিসারের কাছে ছুটলেন। কী আশ্চর্য! রাজার চরদের মনে সন্ন্যাসীর প্রতি জেগে উঠেছে বিশেষ মমতা ও করুণা।
খবর পেয়ে বহুমূল্য রথে করে বহু খাদ্যসম্ভার সাজিয়ে নিয়ে মহারাজ বিম্বিসার রওনা হলেন, সন্ন্যাসীর সঙ্গে পরিচয় করতে। বিম্বিসারের মন কী এক অজানা কারণে, তরুণ সন্ন্যাসীটির প্রতি এক অদ্ভুত মায়ায় ও আকর্ষণে আচ্ছন্ন হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে রথ রেখে মহারাজ পায়ে হেঁটে গুহায় প্রবেশ করলেন।
বিম্বিসার গুহায় প্রবেশ করে তরুণ সন্ন্যাসীর সামনে এসে দাঁড়ালেন। তারপর অভিবাদন করে নিজের পরিচয় দিলেন। এরপর তাঁরা দুজনে মুখোমুখি আসনে বসলেন। বিম্বিসার অবাক হয়ে অনুভব করলেন, তাঁর অন্তরের অন্তঃস্থল এই তরুণটির জন্য হঠাৎ অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। তিনি জানতে চাইলেন এই তরুণ সন্ন্যাসীর পরিচয়। উত্তরে সেই পরিব্রাজক জানালেন, “মহারাজ! তুষারাবৃত হিমালয়ের পাদদেশের একটি রাজ্য থেকে আমি এসেছি। সেই রাজ্যের নাম কপিলাবস্তু। কোশলরাজ এই রাজ্যের অধিপতি। আমার পিতার নাম শুদ্ধোদন। তিনি কোশল রাজ্যের অধীন রাজ্য কপিলাবস্তুর রাজা। আমি সূর্য রাজবংশীয় এবং শাক্যবংশজাত ক্ষত্রিয়।”
বিম্বিসার বললেন, “কপিলাবস্তু? শুদ্ধোদন? আশ্চর্য! আপনার পিতা আমার বিশেষ বন্ধু হন! কপিলাবস্তু মগধের বন্ধু রাজ্য। আপনি আমার রাজ্যে এসে ভিক্ষান্ন খেয়ে থাকবেন এ অত্যন্ত অন্যায়। এখনই রাজপ্রাসাদে চলুন। দয়া করে আমাকে অতিথি সৎকার করার সুযোগটুকু অন্তত দিন! আপনি একজন সুদর্শন যুবক। সম্ভ্রান্ত, রাজবংশীয় এবং উচ্চকুলজাত। আপনার স্বাস্থ্য অতি চমৎকার। আপনি আমার হস্তিসহ সৈন্যদলের প্রধান হয়ে থাকুন।”
উত্তরে সন্ন্যাসী নীরব আছেন দেখে, বিম্বিসার বললেন, “আপনার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রক্তচন্দনের মতো সুগন্ধী ও সুগঠিত। এই কাষায় বস্ত্র এর যোগ্য নয়! আপনি কী কারণে সন্ন্যাস নিয়েছেন আমি জানি না। জ্ঞাতিদের সঙ্গে যদি কোনও মতান্তরের কারণে আপনি নিজের রাজ্যে ফিরে যেতে না চান, তাহলে আমার রাজ্যের, এই নগরেই থাকুন এবং আপনি আমার সৈন্যদলের হস্তীবাহিনীর অগ্রভাগে সেনাপতি হিসেবে থাকুন। আপনার সঙ্গ উপভোগ্য। আমি আপনাকে ধনসম্পদ দেব। এই রাজ্যে থেকে ভোগ করুন। অথবা আপনি চাইলে এখনই আমার রাজ্যের অর্ধাংশ আপনাকে দিতে চাই। আপনি কী চান বলুন!”
“রাজা আপনার মঙ্গল হোক। আমি আমার পরিবার ত্যাগ করেছি ঠিকই। তবে তা কোনো অভিমান বা মতান্তরের জন্য নয়। আমি আমার পিতা, পালনকারী মাতা গৌতমী, আমার জ্ঞাতি ভাইবোনদের, আমার স্ত্রী ও সদ্যোজাত পুত্র রাহুলকে ত্যাগ করে এসেছি। কারণ আমি এক বিশেষ জ্ঞানের খোঁজ করছি, যা বিষয়–ভোগের মধ্যে লাভ করা সম্ভব নয়। আমি আর কোনও কামসুখের প্রার্থী নই। কামনাসকলকে বিষতুল্য বলে আমি মনে করি। আমি সকল ভোগ উপকরণকে শ্লেষ্মাপিণ্ডের (পক্কখেট পিণ্ডম্) মত ত্যাগ করেছি। পার্থিব জগতের ভোগের জন্য আমার আর কোনো উৎসাহ নেই। আমি যে বিশেষ জ্ঞানের সন্ধান করে চলেছি, তাতেই এখন আমার একমাত্র আগ্রহ ও আনন্দ। রাজগৃহও আমি অচিরেই ত্যাগ করব, এই আমার মনোবাসনা।”
“বেশ। আপনি যদি আপনার কাঙ্খিত জ্ঞান লাভ করেন, অবশ্যই তবে রাজগৃহে আসবেন। এ আমার একান্ত অনুরোধ। তখন আমি আপনার শিষ্য হব, আর সেদিন আপনাকে আমার দেওয়া নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতেই হবে।”
“বেশ আমি আপনাকে কথা দিলাম। সেই মহাবোধ–স্বরূপ বোধিজ্ঞান পেলে, অবশ্যই এই নগরে আবার ফিরে আসব। তখন আপনার আতিথ্য নিশ্চয় স্বীকার করব।”
বিম্বিসারের সঙ্গে দেখা হওয়ার কিছুদিন পরেই নির্জন সাধনের উদ্দেশ্যে সিদ্ধার্থ রাজগৃহ ত্যাগ করে চলে গেলেন। রাজগৃহে সর্বদা এত বিচিত্র সাধক এসে পার্বত্য গুহাগুলিতে থাকেন, সেখানে নির্জনতার বড় অভাব। একদিন ভোর রাতে রাজগৃহ ছেড়ে সিদ্ধার্থ আবার এগিয়ে যেতে শুরু করলেন।
কে তিনি? কোন পথে কোন জ্ঞানের সাধনায় গিয়েছিলেন? কোন পথেই বা সে-জ্ঞানকে অর্জন করেছিলেন তিনি? কেমন করে তাঁর সেই জ্ঞান বদলে দিয়েছিল পৃথিবীকে? সে-কাহিনী শোনবার প্রস্তুতি নিতে আমরা প্রথমে ফিরে যাব এর বেশ কিছু বছর আগে। হিমালয়ের কোলে এক ছোটো পার্বত্য রাজ্যে…
২
শাক্যদের কথা
আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে নেপাল ও উত্তর বিহারের মাঝে খণ্ড খণ্ড কিছু অঞ্চল জুড়ে কয়েকটি রাজ্য ছিল। তাঁর মধ্যে একটি ক্ষুদ্র অঞ্চল কপিলাবস্তুতে শাক্য জাতির রাজ্য ছিল। শাক্যবংশের উৎপত্তি সম্পর্কে অম্বট্ঠ্ সূত্রে স্বয়ং বুদ্ধ বলেছেনঃ
এক সময় ক্ষত্রিয় রাজা ইক্ষ্বাকু তাঁর প্রিয়তমা রানির পুত্রকে রাজত্বে অভিষিক্ত করতে চান। অন্যান্য রানিরা যাতে এই কাজে তাঁকে বাধা দিতে না পারেন, সেই জন্য রাজা ইক্ষ্বাকু তাঁর চার পুত্রদের তাঁদের ভগ্নীদের সঙ্গে রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দেন। সেই চার পুত্ররা হলেন উক্কমুখ, করন্দক, হল্লিনিক এবং নিপুর। রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে বহুদূরে বনস্থল পেরিয়ে তাঁরা একসময় হিমালয় পর্বত সংলগ্ন একটি সরোবরের তীরে এসে পৌঁছান। সেই সরোবরের তীরে ছিল শক নামক বৃক্ষের বন। তাঁরা সেইখানে বনাঞ্চলের নির্জনে তাঁদের বাসস্থান গড়ে তোলেন। সেই অরণ্য-সন্নিহিত পার্বত্য অনার্য উপজাতীয় কন্যাদের বিবাহ না করে বংশের বিশুদ্ধতা বজায় রাখতে সেইসময় তাঁরা নিজেদের বৈমাত্রেয় সহোদরাদের বিবাহ করেছিলেন। এরপর সেই স্থানে তাঁরা তাঁদের রাজ্য গড়ে তোলেন।
হিমালয়ের সেই অঞ্চল ছিল মহাত্মা ও মহাঋষি কপিল মুনির আশ্রম। সেই অঞ্চলে রাজ্য স্থাপন করা হলে সেই রাজ্যের নাম হয় কপিলাবস্তু। রাজা ইক্ষ্বাকু তাঁর পুত্রদের সেই অঞ্চলে বসতি ও রাজ্য স্থাপনের ঘটনা জানতে পেরে তাঁর মন্ত্রীকে বলেন, “আমার পুত্রগণ রাজ্য স্থাপন ও পরিচালনে সবিশেষ সক্ষম (শাক্য)। এই শাক্য শব্দটি থেকে শাক্য বংশের উদ্ভব হয়েছে। অর্থাৎ মহারাজ ইক্ষ্বাকু হলেন শাক্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা। এরপর অন্যান্য ভ্রাতাদের মৃত্যুর পর কপিলাবস্তুর রাজা হলেন কুরু। তাঁর সিংহহনু নামে এক পুত্র ছিল। কুরুর মৃত্যুর পর পরম বীর যোদ্ধা সিংহহনু কপিলাবস্তুর রাজা হলেন। তাঁর পাঁচ সন্তান হলেন যথাক্রমে জ্যেষ্ঠ শুদ্ধোদন, দ্বিতীয় শুক্লোদন, তৃতীয় তুলোদন বা ধৌতাদন, চতুর্থ অমিতোদন এবং কন্যা অমিতা। এদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র শুদ্ধোদন সিংহাসনের উত্তরাধিকারী। সিংহহনুর মৃত্যুর পর শুদ্ধোদন কপিলাবস্তুর রাজা হলেন।
কপিলাবস্তু রাজ্যটি ছিল রোহিনী নদীর তীরে। নদীর অপর তীরে ছিল কোল রাজ্য দেবদহ। কোল আর শাক্যরা রোহিনী নদীর জল নিয়ে, ব্যবসা বাণিজ্য ও নানা কারণ নিয়ে নিজেদের মধ্যে সব সময় যুদ্ধবিগ্রহ করতো। সিংহাসনে বসে শুদ্ধোধন কোলরাজ দেবদহের ছেলে অঞ্জনের দুই মেয়ে মায়া ও মহাপ্রজাপতি গৌতমীকে বিয়ে করলেন। ফলত বহুযুগ ধরে চলে আসা সেই শত্রুতার অবসান হল।
অঞ্জনের ছোট মেয়ে গৌতমী সম্পর্কে জ্যোতিষীরা গণনা করেছিলেন যে তাঁর সন্তান সমগ্র বিশ্বের রাজা হবেন। এই গোপন খবর জানতে পারেন শুদ্ধোদন। তিনি জ্যোতিষীদের গণনায় সবিশেষ আগ্রহী হয়ে, তখনই গৌতমীকে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু যেহেতু বড় বোন মায়াদেবীর বিয়ে তখনও হয়নি, তাই শুদ্ধোদন দুজনকেই বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং সেইমত দেবদহ রাজ্যের দুই রাজকুমারীকেই তিনি বিবাহ করেন।
৩
মায়াদেবীর স্বপ্নকথা
কপিলাবস্তুর মহারানি মায়াদেবী আজ সুদৃশ্য শ্বেত অশ্ববাহী একটি রথে চড়ে পথ চলেছেন। মায়াদেবীর পরনে শুভ্র পট্টবস্ত্র। মাথায় সোনার মুকুট। সুবিশাল কেশরাশিতে মুক্তার কেশবন্ধনী। তিনি তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা। রানি বিষ্ণু মন্দিরে চলেছেন। তাঁর রথে আরও দুজন দাসী আছেন। তাঁদের হাতে আছে ফুল ও পূজার নৈবেদ্য ও অন্যান্য উপকরণ। রানির মুখে প্রসন্ন হাসি। নগরে উৎসব উপলক্ষে জনগণ সমবেত হয়েছে ক্রীড়া ময়দানে। সেখানে মল্লযুদ্ধ প্রতিযোগিতা চলছে। রানির রথ রাজ উদ্যানের সংলগ্ন ময়দান অতিক্রম করার সময়, জনগণ তাঁকে দেখে সমবেত স্বরে তাঁর জয়ধ্বনি করে উঠল। রানি জনতাকে প্রতি নমস্কার করে অভিবাদন করলেন। আজ উৎসবের শেষদিন।
প্রতিবছর কপিলাবস্তুতে হলকর্ষণ উৎসব ঋতু খুব সাড়ম্বরে পালিত হয়ে থাকে। এই উৎসবকাল হল আষাঢ় মাস। এইসময় রাজপরিবার থেকে শুরু করে দরিদ্র কৃষকও তাঁর জমির মাটি পুজো করে থাকে। রাজা স্বয়ং সোনার হল দিয়ে ভূমি কর্ষণ করে উৎসবের সূচনা করেন। ছয়দিনের উৎসবে দূরদূরান্ত থেকে বহু নট ও নর্তকীরা এসে উপস্থিত হন। চারিদিকের ছোট ছোট ব্যাপারীরা নানা রকম শৌখিন জিনিস বিক্রি করতে আসেন। সব মিলিয়ে এই কয়েকদিন যেন সারা কপিলাবস্তু রাজ্যে উৎসবের আমেজ থাকে।
উৎসব শেষের দিন রানি মায়াদেবী উপোস করে মন্দিরে গিয়ে দেবার্চনা করলেন। সেদিন রাতে ঘুমিয়ে রানি এক আশ্চর্য স্বপ্ন দেখলেন। এক অপূর্ব জ্যোৎস্নাময় রাত্রি। তিনি শোবার ঘরে তাঁর পালঙ্কে শুয়ে আছেন। জানলা দিয়ে ঘরের ভেতর দুধ সাদা জ্যোৎস্না এসে পড়েছে। এমন সময় চারজন দিব্যকান্তি দেবপুরুষ এসে, তাঁর পালঙ্কটি কোথায় যেন বহন করে নিয়ে চললেন। বহুদূর পথ পেরিয়ে তাঁরা মায়াদেবীকে নিয়ে এলেন এক সুউচ্চ পর্বতের ধারে। সেখানে এক সুবিশাল শাল গাছের তলায় তাঁর পালঙ্কটিকে নামিয়ে রাখলেন তাঁরা।
এমন সময় দিক দিগন্ত দিব্য আলোয় ভরে গেল, আর চারিদিকে বাদ্য বেজে উঠল। এরপর স্বর্গের পরমা সুন্দরী অপ্সরারা নেমে এলেন সেখানে। তাঁরা মায়াদেবীর হাত ধরে তাঁকে কোথায় যেন নিয়ে চললেন। তিনি চারিপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলেন। শালবনের পাশে এক বিশাল উঁচু পাহাড় দেখলেন, যা সম্পূর্ণ রূপার তৈরি বলে তাঁর মনে হল – কারণ তা অসম্ভব ঝলমল করছিল আর তাঁর পাশে সোনার খিলান, সোনার ছাদ যুক্ত একটি বিশাল অট্টালিকা দেখতে পেলেন তিনি। স্বর্গীয় কুমারীর দল তাঁকে পাহাড়ের কাছে একটি স্বচ্ছ নীল হ্রদের জলে স্নান করিয়ে দিলেন। মায়াদেবীর মনে হল তিনি যেন দেহ-মনে সম্পূর্ণ শুদ্ধ হয়ে গেলেন আর তাঁর মানবদেহের সমস্ত কালিমা যেন মুছে গেল।
তাঁকে দিব্য কাষায় বস্ত্র পরানো হল এবং সুগন্ধি প্রলেপ দিয়ে তাঁকে নানারকম ফুলের গয়নায় সাজানো হল। এমন সময় কোথা থেকে এক শ্বেত-শুভ্র বিরাট হাতি সেখানে এসে দাঁড়াল। হাতিটি তার শুঁড়ে করে একটি সাদা পদ্ম নিয়ে এগিয়ে এল তাঁর কাছে। চারিদিকে তখন জোরে জোরে ঢাক বাজতে লাগল। অপ্সরা কন্যারা তাঁর পালঙ্কটি নিয়ে সেই সোনার অট্টালিকায় প্রবেশ করলেন। এরপর হাতিটি তিনবার তাঁর পালঙ্কের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে দক্ষিণ দিক থেকে যেন তাঁর শরীরের ভেতর প্রবেশ করল। রানি তক্ষুণি পেটের ভেতর একটা তীব্র ব্যথা অনুভব করলেন এবং ঠিক সেইসময় ব্যথা পেয়ে মায়াদেবীর ঘুম ভেঙে গেল। সেদিন ছিল আষাঢ় মাসের উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্র।
রানি ঘুম ভেঙে অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন, এমন অদ্ভুত স্পষ্ট অনুভূতি কি স্বপ্ন? না বাস্তব? তাঁর সব যেন কেমন গোলমাল হয়ে যেতে লাগল। তবে তাঁর দেহ মনে এক অপূর্ব আনন্দ জেগে উঠল। তখনও রাত অবশিষ্ট থাকলেও রানির আর ঘুম এল না। তিনি আনন্দিত মনে রাজপুরীর অলিন্দে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন।
সহসা তাঁর অনুভব হল তিনি আর একা নন। কারা যেন তাঁর সঙ্গে নিঃশব্দে পদচারণা করছেন এবং তারা তাঁকে চারপাশ থেকে যেন ঘিরে রেখেছেন। তিনি চারপাশে তাকালেন, তবে কিছুই দেখতে পেলেন না। এই অদৃশ্য ব্যক্তিরা কারা? কেনই বা তাঁকে ঘিরে রেখেছেন এঁরা? রানি ভয় পেলেন। নিশুতি রাত, তাঁর গা ছমছম করে উঠল। হঠাৎ এক অপূর্ব সুগন্ধী বাতাস বয়ে এল তাঁর কাছে। কারা যেন ফিসফিস করে তাঁকে বলল, “ভয় পাবেন না মাতা! আজ থেকে সর্বক্ষণ আমরা চারজন দেবপুরুষ আপনাকে চারিদিক থেকে সুরক্ষা দিতে উর্ধ্বলোকের দেবতাদের দ্বারা নিযুক্ত হয়েছি। মহাপুরুষ তথাগতের আবির্ভাব হতে চলেছে। আমরা তাই যতদিন না তিনি আসছেন, ততদিন আপনাকে রক্ষা করতে এখানে উপস্থিত হয়েছি। আমরা আপনার আজ্ঞাবাহী সেবক। আপনি নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে থাকুন।”
রানি তাকিয়ে ছায়াময় দেহের চারটি মূর্তি তাঁর চারপাশে দেখতে পেলেন। তারপর রানি জ্যোৎস্না রাতে সেই অপূর্ব সৌরভে আমোদিত হয়ে পরম আনন্দে বিচরণ করতে লাগলেন। তাঁর মন থেকে সকল ভয় ও আশঙ্কা দূর হয়ে গেল।
পরদিন ভোর হতেই রানি মায়াদেবী তাঁর দেখা অদ্ভুত স্বপ্নের কথা রাজা শুদ্ধোদনকে জানালেন। রাজা সে কথা শুনে সেদিনই চৌষট্টিজন পণ্ডিত এবং বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণদের রাজপুরীতে ডেকে পাঠালেন। তাঁদের মধু ও ঘি মেশানো সুগন্ধী চালের পায়েস খাওয়ালেন এবং অনেক সোনা ও রূপো দান করলেন। এরপর তাঁদের কাছে রানির স্বপ্নের ফল কী হবে তা জানতে চাইলেন।
গণনা করে তাঁরা বললেন, রানি এখন সন্তানসম্ভবা। তাঁর গর্ভে কন্যা নয় একজন খুব ভাগ্যবান পুত্র আছেন। তিনি যদি গৃহবাসী হন, তাহলে সারা পৃথিবীর রাজা হবেন, আর যদি সন্ন্যাস নেন তাহলে একজন পূর্ণজ্ঞানী সন্ন্যাসী হবেন তিনি।
ব্রাহ্মণদের ভবিষ্যৎবাণী শুদ্ধোধনের মনে একই সঙ্গে আনন্দ ও আশঙ্কার সৃষ্টি করল। তিনি ঠিক করলেন, ছেলে জন্মানোর পর সবসময় তাঁকে ভোগবিলাসে নিযুক্ত রাখবেন, যাতে সে কখনোই সন্ন্যাস নিতে আগ্রহী না হয়।
এর কিছুদিন পর সন্তানসম্ভবা মায়াদেবীকে তাঁর পিতা নিজের রাজ্য দেবদহে কিছুদিনের জন্য এনে রাখতে চাইলেন। তিনি শুদ্ধোধনকে দূত মারফত তাঁর এই ইচ্ছা জানিয়ে একটি লিপি পাঠালেন। রাজা সম্মত হলেন, কিন্তু রানির যাতে যাত্রাপথে কোনও কষ্ট না হয়, এইজন্য কপিলাবস্তু থেকে দেবদহ পর্যন্ত পথ তৈরির পরেই মায়াদেবীকে তাঁর পিতৃগৃহে পাঠাবেন বলে জানিয়ে দিলেন। এরপর তিনি পালকিতে যাতায়াতের সুবিধার জন্য সুদীর্ঘ, সমতল রাস্তা বানালেন। যে পথ দিয়ে রানি যাবেন তার স্থানে স্থানে মঙ্গল ঘট বসালেন। তারপর বসন্তের দ্বিতীয় মাসে অষ্টমী তিথিতে শুভ নক্ষত্র যোগ পাওয়ায় সেদিন রানি যাত্রা করলেন।
৪
আবির্ভাব
এতদিন পথ তৈরি ছিল না বলে, মায়াদেবীর দেবদহ যেতে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। প্রায় দশমাস কেটে গেছে। রানিকে নিতে অবশেষে দেবদহের মন্ত্রীকন্যা স্বয়ং এসেছেন। তিনি একদা রানির প্রিয় সহচরী ছিলেন। তাঁকে দেখে মায়াদেবীর আনন্দ আর ধরে না। রানি চলেছেন সোনার কারুকার্য করা পালকিতে চড়ে। আজ তাঁর মনে বড় আনন্দ। রানির সঙ্গে আরও অনেক পালকি চলেছে তাতে আছেন, রানির আরও অনেক দাসী ও সহচরীরা। তিনি পালকির জানলা দিয়ে তাকিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছেন। শরীরে তাঁর কোনও ক্লান্তি নেই। সামনে এক বিশাল শালের বন তাঁর চোখে পড়ল। তিনি পালকি থেকে নেমে এখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে চাইলেন।
শাল ফুল ফুটেছে গাছে গাছে। বাতাসে তার মৃদু গন্ধ। দূরে তুষারাবৃত হিমালয় পর্বতশ্রেণী চোখে পড়ছে। চারিদিকে এক অপার শান্তির বাতাবরণ। জায়গাটি কপিলাবস্তু ও দেবদহের মধ্যবর্তী স্থান লুম্বিনী উদ্যান। এই উদ্যানের নামকরণ করা হয়েছিল মায়াদেবীর পিতামহী রানি লুম্বিনীর নামানুসারে।
এই উদ্যানটির শোভা অতি মনোহর। এখানে একটি মঙ্গল শালবন আছে। এছাড়া আছে নানারকম ফুলের গাছ। রানি পালকি থেকে নেমে মাটিতে এসে দাঁড়ালেন। তিনি পাখির কলধ্বনি ও ফুটন্ত শাল ফুলে মৌমাছিদের গুঞ্জন প্রাণভরে শুনলেন। এরপর তিনি একটি প্রকাণ্ড শালগাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালেন। গাছটি ছিল ফুলে ফলে শোভিত। তিনি পুষ্পিত শাল গাছের একটি ডাল ধরার জন্য হাত বাড়ালেন। গাছটির একটি নীচের দিকের ডাল রানির হাতে অনায়াসে এসে যেন ধরা দিল। ফুলে ফলে ও পাতায় ভরা শাল গাছের সেই ডালটি ধরে রানি যখন দাঁড়ালেন, সেইসময় তাঁর একটি পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হল অথচ তিনি এতটুকু যন্ত্রণা অনুভব করলেন না।
শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে চার দিব্য পুরুষকে দেখতে পেলেন মায়াদেবী। তারা তাঁকে বললেন, “দেবী প্রসন্ন হন। আপনার একটি মহাশক্তিধর পুত্র হয়েছে। পৃথিবীতে আপনার কাজ এখন শেষ হয়েছে। আর কোনও কাজ অবশিষ্ট নেই।”
মায়াদেবী চমকে উঠলেন। তবে কি তিনি আর পৃথিবীতে বেঁচে থাকবেন না? এমন সোনার টুকরো প্রাণের ধনকে ফেলে পরপারে চলে যেতে হবে তাঁকে? তাঁর বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠল।
“আহা রে! বাছা আমার অকালে মাতৃহারা হয়ে যাবে!”
মায়াদেবীর দু চোখ বেয়ে জলধারা নেমে এল। তিনি প্রাণ ধারণের জন্য এতটুকু উতলা নন, তবে এই সন্তানটি তাঁকে মায়ার বাঁধনে বেঁধে ফেলেছে। তিনি তাঁর সোনার মতো উজ্জ্বল আর সুন্দর শিশুটির দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলেন।
সময় অনন্ত হোক। এই শিশুমুখ রানি প্রাণ ভরে দেখতে চান। আর হয়ত এ সুযোগ তাঁর জীবনে কখনও ফিরে আসবে না। মায়াদেবী উপলব্ধি করলেন, এবার তাঁর শ্বাসের পুঁজি ফুরিয়ে এসেছে। তিনি এই পৃথিবীতে আর ক্ষণকালমাত্রই আছেন। এক দুঃসহ বেদনা তাঁর বুকের ভেতরটা ভেঙেচুরে দিতে লাগল। হায়! বিদায় নিতে হবে তাঁকে। আর মাত্র কয়েকটি দিন! হঠাৎ মায়াদেবীর শরীর মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তাঁর চেতনা যেন লুপ্ত হয়ে গেল।
এমন সময় সখীরা খবর পেয়ে ছুটে এসে তাঁকে ঘিরে ধরলেন। তাঁরা একটি রেশম বস্ত্র দিয়ে শিশুটিকে জড়িয়ে নিলেন। শিশুটি ভারী অদ্ভুত। শিশুটি জন্মক্ষণেই ছিল সুগঠিত দন্তপংক্তি বিশিষ্ট। জন্মের পরেই সবাইকে চমকে দিয়ে সে মাটিতে কিছুক্ষণের জন্য পা রেখে দাঁড়াল। সে সামনের দিকে কয়েক পা এগিয়ে যেতেই দাসীরা তাকে কোলে তুলে নিল। শিশুটি মায়াদেবীর দিকে চেয়ে হঠাৎ কী যেন বলে উঠল। সকলে শুনল, শিশুটি যেন বলে উঠল, “আমিই জ্যেষ্ঠ! আমিই শ্রেষ্ঠ! এই আমার অন্তিম জন্ম। আমার পৃথিবীতে আর পূণর্জন্ম নেই।”
এ কী আশ্চর্য ঘটনা! এই অলৌকিক ঘটনা দেখে সখী সহচরীরা বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গেল। দিনটি ছিল শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথি, খ্রিস্টপূর্ব ৬২৪ অথবা ৪৬৩ অব্দ।
এরপর একত্রে দেবদহ ও কপিলাবস্তুর শত শত মানুষ মঙ্গল কলস ও কদলী বৃক্ষ নিয়ে শোভাযাত্রা করে সেই আশ্চর্য শিশুটিকে নিয়ে কপিলাবস্তু নগরে এসে পৌঁছাল। তবে অসুস্থ মায়াদেবীর কপিলাবস্তুতে ফেরা হল না। তিনি দেবদহের পিতৃগৃহেই থেকে গেলেন। তাঁর শরীর জ্ঞানশূন্য। দেবদহের শ্রেষ্ঠ ভিষগাচার্যগণ তাঁর হাতের নাড়ী গণনা করে হতাশায় মাথা নাড়তে লাগলেন।
ক্রমশ
অলঙ্করণঃ শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য
পরিশ্রমএর ছাপ লেখার ছত্রে ছত্রে
LikeLike