গতবছর পশ্চিমবঙ্গের টংলুতে তিনদিনের পাহাড়ে হাঁটার অভিজ্ঞতার পর এবারে জয়ঢাক ছোটোয় বড়োয় মিলে গিয়েছিল উত্তরাখণ্ডে। ২৫ মে কলকাতা থেকে বেরিয়ে ২ জুন ফিরে আসা। উদ্দেশ্য মূলত তুঙ্গনাথ ও চন্দ্রশিলায় হেঁটে ওঠা। রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় তুঙ্গনাথজির মন্দির পাঁচ কেদারের অন্যতম এবং তৃতীয় উচ্চতম (৩৪৬০ মি; প্রথম রুদ্রনাথ ৩৬১০ মি, দ্বিতীয় কেদারনাথ ৩৫৬২ মি, চতুর্থ মদমহেশ্বর ৩২৯০ মি, পঞ্চম কল্পেশ্বর ২১৩৪ মি)। চন্দ্রশিলা আরও দুশো মিটার উঁচুতে। এবারের যাত্রা ছিল হরিদ্বার হয়ে উখিমঠ। সেখান থেকে চোপতা হয়ে তুঙ্গনাথ-চন্দ্রশিলা, ফিরতি পথে মণ্ডলে একদিন কাটিয়ে ফের হরিদ্বার নেমে আসা। দলে ছিল সাতটি ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে এবং সাতজন বড়ো। এছাড়া আমাদের উত্তরাখণ্ডের এক গাড়োয়ালি বন্ধু বীরেন্দর সিং বিষত। দলের সবচেয়ে ছোটো সদস্যের বয়েস ছিল ১১ আর বয়োজ্যেষ্ঠের বয়েস ছিল ৫৭। চোদ্দজন জয়ঢাকি দলে দশজন ছেলে এবং চারজন মেয়ে। হিমালয় পাহাড়ের কোলে এই ছোটো ছোটো পায়ে হাঁটা আয়োজন করার মূল উদ্দেশ্য প্রকৃতি তথা হিমালয়ের নিকট সান্নিধ্যে ছেলেমেয়েদের পৌঁছে দেওয়া এবং ইট-কাঠ-কংক্রিটের বাইরের দুনিয়ার অফুরান আনন্দ ও ম্যাজিক দু’চোখ ভরে দেখে নেওয়া। জয়ঢাক-এর এই আয়োজন আরেকরকম ফুর্তির ঠিকানা। ফিরে এসে দলের লোকেরা কে কী বলল পড়ুন।
দলের সদস্যরা ছিলেনঃ ঈশান নাগভেঙ্কর, অগ্নীশ রায়চৌধুরী, ঋত্বিক প্রিয়দর্শী, স্টিভ রায়, অনমিত্র পাল, প্রজ্ঞা মণ্ডল, সৌমি মণ্ডল, অলোক গাঙ্গুলি, পৌষালী রায়চৌধুরী, মণীষা বিশ্বাস মণ্ডল, দেবেন্দ্র নাগভেঙ্কর, স্বপন মণ্ডল, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়।
গোটা ট্রেকটার ওপরে তোলা একটা তথ্যচিত্র এইসঙ্গে রইল।
জয়ঢাকের পক্ষে
শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়
ট্রেক কো-অর্ডিনেটর
ঈশান নাগভেঙ্কর
গরমের ছুটি। জয়ঢাকের সাথে ট্রেকিংয়ে এসেছি। এই বেড়ানোটা এত মজার যে আমি বহুদিন মনে রাখব। অনেক নতুন নতুন অভিজ্ঞতা। জীবনে প্রথমবার এত কাছ থেকে হিমালয় পাহাড়কে দেখলাম। সবচেয়ে মনে রাখার মতো আমাদের বেড়ানোর দ্বিতীয় দিনের হাঁটাটা। আমরা উখিমঠে পৌঁছলাম। এখানে একটা মন্দির আছে। হিমালয়ের বরফচূড়া দেখা যাচ্ছিল উখিমঠ থেকে। আমাদের সঙ্গে ছিল বীরু ভাইয়া। খুব ভালোমানুষ আর বন্ধুর মতো। আমাদের সবারই খুব যত্ন করছিল ও। সন্ধেবেলা মন্দির দেখতে গেলাম। খুব সুন্দর মন্দির। অনেকগুলো বাঁদর ঘুরে বেড়াচ্ছিল মন্দিরের ছাতে। ফিরে আসার সময় একটা দোকানে চা-পকোড়া খাওয়া হল। তারপর ছমছমে অন্ধকার রাস্তা দিয়ে আমাদের হোটেলে ফিরে এলাম। ফিরে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম পরদিনের জন্য আর তারপর চটপট ঘুমিয়ে পড়লাম সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখতে দেখতে। (অনুদিত)
অলোক গাঙ্গুলি
বোধহয় আলাদা করে মনে রাখার মতো কোনও একটা দিন, উঁহু, বলা মুশকিল। সত্যি বলতে কী, দেবভূমিতে এই প্রথম হৃষিকেশ ছাড়িয়ে ওপরে উঠলাম। দেবপ্রয়াগ আর রুদ্রপ্রয়াগের দুই নদীর সঙ্গম দেখে আমি যারপরনাই আপ্লুত বলা যায়। তবে হ্যাঁ, বলতেই যদি হয়, চোপতা থেকে তুঙ্গনাথ আর তারপর চন্দ্রশিলা যাবার দিনটাই সবচেয়ে বেশি মনে রাখার মতো। মানে দু’হাজার উনিশের আঠাশ থেকে উনত্রিশ মে সকাল অবধি। উখিমঠে ভোরবেলা উঠে দেখি কেদারনাথ আর তার পাশাপাশি চূড়াগুলি দেখা যাচ্ছে, বরফে ঢাকা। তুঙ্গনাথের পথে বেশ চড়াই কিন্তু চারপাশের দৃশ্য, রোডোডেনড্রনের নানান রঙ সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। গোড়া থেকেই আমার খুব ইচ্ছে এখানে যদি মোনালের দেখা পাই। মোনাল হিমালয়ের এ-অঞ্চলের খুব জনপ্রিয় পাখি। শুনে এসেছি চোপতা-তুঙ্গনাথ-চন্দ্রশিলার পথে এদের দেখা মেলে। যেহেতু পাখি-দেখা আমার খুবই পছন্দের, ফলে মোনাল দেখার টানই চড়াইপথে যাবার যাবতীয় শক্তি যুগিয়েছিল। পঞ্চকেদারের এক কেদার-দর্শনে যাচ্ছি, এটাও বেশ উদ্দীপনা বৈকি! ক্যামেরার লেন্সে আমার যাবতীয় ভালো লাগা ধরা রইল।
আরেকটা চনমনে ব্যাপার হল তুঙ্গনাথে, বিকেলবেলায়। আমাদের দলের লোকেরা থর দেখতে পেল। থর একধরনের পাহাড়ি ছাগল। তখন সেখানে আমি ছিলাম না। আমাদের দলের দেবজ্যোতি এসে আমাকে নিয়ে গেল। পাহাড়ি পথে খানিকটা এগোলাম, যদি থর দেখা যায়! যেখানে দেখা গেছিল সেখান থেকে ততক্ষণে দলটা কেটে পড়েছে। খানিক অপেক্ষা করে ফিরব ফিরব ভাবছি, তখনই আশ্চর্য! অবাক হয়ে দেখলাম উত্তরাখণ্ডের স্টেট-বার্ড, হিমালয়ের মোনাল। আমার স্বপ্ন সার্থক। আমার সমস্ত প্রাণমন জুড়িয়ে গেল। এই অসামান্য অভিজ্ঞতা আমি আমার মনের মণিকোঠায় আজীবন যত্ন করে রাখব।
পরদিন সকালে যখন চন্দ্রশিলা থেকে ফিরছি, আবার ওই অসামান্য সুন্দর পাখিটাকে দেখলাম। চোপতা থেকে শুরু করে আবার চোপতায় ফিরে আসার এই ২৪ ঘন্টা আমার চিরস্মরণীয় হয়ে রইল। আগে পরে অনেক পাখি আমার ক্যামেরায় বন্দী করেছি, কিন্তু ২৪ ঘন্টার মধ্যে দেখা এই একটি পাখিই আমার বেড়ানোর স্মৃতিতে সারা জীবনের সম্পদ হয়ে রইল। (অনুদিত)
সৌমি মণ্ডল
চন্দ্রশিলা থেকে তুঙ্গনাথ নেমে এসেছি প্রায়। রোডোডেনড্রন ফুল ফুটে আছে চারদিকে। দেখে ভীষণ ভালো লাগল। পরিষ্কার বাতাস, বরফ-ঢাকা পাহাড়চূড়া (দূর থেকে ডার্ক ফরেস্ট কেক-এর মতো দেখাচ্ছিল), রঙবেরঙের প্রজাপতি, সবকিছুই বেশ সুন্দর। জয়ঢাকের সাথে আমার দাদুর গ্রামের বাড়িতে যাবার অপেক্ষায় রইলাম। ওখানে কিন্তু তাঁবুতে থাকব! আরেকটা দাবি, পরেরবার থেকে সকালের ব্রেকফাস্টে রোজই ম্যাগি খেলে হয় না! (অনুদিত)
প্রজ্ঞা মণ্ডল
লেখালেখিটা কোনওকালেই আমার আসে না। আমি কিছু লিখব আর অন্যেরা পড়বে, ভাবলেই জ্বর আসে। পুরো বেড়ানোটা যদিও ভীষণ মজার আর মনে রাখার মতো। ফলে তার থেকে আলাদা করে ২৪ ঘণ্টা বার করা খুবই শক্ত ব্যাপার। তবে শেষ অংশটাই বোধহয় সবচেয়ে মনে রাখার মতো যখন আমাদের একটা করে সাদা পাতা ধরিয়ে দিয়ে বলা হল, এবারে তোমার স্মরণীয় ঘটনাটা লিখে ফেলো। (অনুদিত)
সাগর (স্টিভ রায়)
চন্দ্রশিলা যাবার সময়টাই সবচেয়ে স্মরণীয় ২৪ ঘণ্টা, অন্তত আমার কাছে। সক্কালে উঠে অতটা হেঁটে যাবার নাম শুনে আমি প্রথমে একটু আপত্তিই করেছিলাম। সকালে ওঠাটা আমার একেবারে না-পসন্দ, কিন্তু পাহাড়ের পেছন থেকে সূর্য ওঠার সাথে সাথে যেই সকলে মিলে হাঁটা শুরু করলাম, সত্যিই খুব আনন্দ হল, ভালোও লাগছিল। চন্দ্রশিলা ওঠাটা তুঙ্গনাথে ওঠার মতো অতটা হ্যাঙ্গাম নয়। কাঁধে মালপত্র নেই, চারপাশটা অনেক বেশি সুন্দর। আর চন্দ্রশিলার ওপরটা সত্যিই অসাধারণ। বন্ধুদের সাথে, পরিবারের সাথে সেখানে পৌঁছে যাওয়াটা সত্যিই মনে রাখার মতো।
ট্রেকের পাশাপাশি দলের সবার সাথে থেকেও বেশ মজা পেয়েছি। সকলেই বন্ধুর মতো, এর ওর খেয়াল রাখছে। অথচ কয়েকদিন আগেও এরা একেবারেই অপরিচিত ছিল, তবুও।
সবমিলিয়ে অভিজ্ঞতাটা দারুণ! কোনও অভিযোগই নেই, শুধু টয়লেটটা নিয়ে একটু ইয়ে, মানে পরের বার থেকে আরেকটু ভালো বাথরুম হলে… অবশ্য এটাও আরেকটা অভিজ্ঞতা তো বটে। (অনুদিত)
অনমিত্র পাল (টিপু)
প্রথমেই বলি এই দলে যাবার সুযোগ পেয়ে আমি খুব খুশি। একঘেয়ে জীবনের মাঝে একটা সপ্তাহ জয়ঢাকের সঙ্গে তুঙ্গনাথ-চন্দ্রশিলায় বেড়াতে যাওয়া বেশ মনে থাকবে। ২৫ তারিখ হরিদ্বারে সন্ধ্যাবেলায় গঙ্গার ঘাটে আরতি দেখলাম। হরিদ্বারে গেলে যা অবশ্যই দেখা দরকার।
পরদিন গাড়িতে করে বেশ কয়েক ঘণ্টা লাগল উখিমঠ পৌঁছতে। সেদিন সন্ধ্যায় উখিমঠের মন্দির দেখতে গেলাম। দর্শনীয় ধর্মীয় স্থান। উখিমঠের রাত্তিরটা বেশ মনোরম। আমাদের গেস্ট হাউসের ঘরের পাশে একটা সুন্দর বারান্দা ছিল। অনেকক্ষণ গল্প হল ওখানে বসে।
পরদিন সকালে গাড়িতে চেপে চোপতার দিকে চললাম। তুঙ্গনাথ ট্রেক করার শুরুটা হল চোপতা। ওখানে ব্রেকফাস্ট করে আমরা পঞ্চকেদারের এক কেদার তুঙ্গনাথের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। পথের দৈর্ঘ্য ৩.৫ কিলোমিটার। যাবার পথেই মনোরম পাহাড়ের দৃশ্য। সবাই মিলে খুব মজা করতে করতে শেষে তুঙ্গনাথ পৌঁছোলাম। সেদিন রাতে তুঙ্গনাথে থাকা। রাতের আকাশ পরিষ্কার, অগুনতি তারা। সত্যি অসাধারণ রাত।
পরদিন ভোর সাড়ে চারটেয় উঠে চন্দ্রশিলা রওনা দিলাম। চন্দ্রশিলা হল তুঙ্গনাথ পাহাড়ের সর্বোচ্চ বিন্দু। মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে। চন্দ্রশিলার মাথায় উঠে দারুণ দৃশ্য দেখলাম। তারপর নেমে আসা, প্রথমে তুঙ্গনাথ, তারপর আরও নীচে মণ্ডলের দিকে। মণ্ডল কেদারনাথ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের লাগোয়া একটা ছোট্টো গ্রাম। চারদিকে সবুজে ঢাকা, নানারকমের পাখি।
তার পরদিন আমরা হরিদ্বার ফিরে এলাম। কেনাকাটা হল, হরিদ্বারের বিখ্যাত লস্যি খাওয়া হল, আর সত্যি সত্যিই লস্যিটা অপূর্ব! ওটাই শেষদিন, তাই অনেক রাত অবধি গল্প করলাম আমরা। আমার চিরদিন মনে থাকবে এদিনটা।
পরদিন বাড়ি ফেরা। পাহাড়ে হাঁটার একটা চমৎকার ও স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হল আমার। (অনুদিত)
ঋত্বিক প্রিয়দর্শী
২৯ মে, ২০১৯
সকাল সাড়ে চারটে বাজতেই শান্তনুকাকুর ডাকে উঠে যাই। সেদিন সূর্যোদয় দেখতে উঠব চন্দ্রশিলায়। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় হাফ-হাতা জামা পড়ে কম্বল ছেড়ে বেরোতেই গায়ে কেমন যেন একটা ছোট্ট শক লেগে গেল। তিনটে জামা এবং একটা জ্যাকেট পরে কুড়ি মিনিট পরে বেরোলাম ঘর থেকে।
বাইরের আলো-আঁধারির মধ্যে দেখতে পেলাম ঘুমন্ত কয়েকটি পাহাড় আর আকাশে খানিকটা মেঘে ঢাকা এক সুবিশাল জ্বলজ্বলে চাঁদ। ঘণ্টা খানেক পর হাঁফাতে হাঁফাতে উঠলাম চন্দ্রশিলার মাথায়। ভাবলাম, নাহ্! এতক্ষণ পরিশ্রমের পর বেশ ভালোই লাগছে। মেঘে ঢাকা চূড়ার ওপরে তখন এসে পড়েছে সূর্যের কমলা-সোনালি আলো। পাহাড়ের চূড়ায় তখন মৃত্যুহেন নিস্তব্ধতা। কানে ইয়ার-ফোন গুঁজে, ধ্যানের ভঙ্গীতে বসে যখন ‘ইন্টারস্টেলার’ সিনেমার গান শুনছিলাম, মনে হল যেন আন্তর্নক্ষত্র মহাকাশে বসে আছি। আমার কাছে এক অনন্য স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
অগ্নীশ রায়চৌধুরী
জয়ঢাকের সাথে আমার এই দ্বিতীয়বার পাহাড়-ভ্রমণ। এবারে একাই আসার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু কেন জানি না, মায়ের মনে হয়েছে, উত্তরাখণ্ড প্রচণ্ড দূরে, আর তাই তাকে সঙ্গে নিতে বাধ্য করেছে। ট্রেন জার্নির পর হরিদ্বারে এক ধর্মশালায় উঠলাম। তারপর গাড়িতে উখিমঠ; সেখানে একদিন থেকে পরদিন তুঙ্গনাথ ও চন্দ্রশিলা।
সেদিন ভোরে ডেকে দিল শান্তনুদা। বাঘাদা (ঋত্বিক) আর ছোড়দা (সাগর) তখনও ঘুমোচ্ছিল। ‘ফলে চা বানাইবার জন্য আমাকেই শান্তনুদাকে সাহায্য করিতে হইল।’ দলের চারজনকে তাদের ইচ্ছানুসারে বিছানাতেই রেখে আমরা রওনা হলাম চন্দ্রশিলায়। সূর্যোদয় দেখব বলে। সে কী সাংঘাতিক অসাধারণ পথ! পাহাড়ের সরু এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে এক অদ্ভুত আতঙ্ক লাগছিল; অথচ অনুভব করছিলাম অভূতপূর্ব রোমাঞ্চ। ক্যামেরা হাতে আমাদের টিপু সুলতান (অনমিত্র) এবং অলোকদা এদিক ওদিক তাক করে কত না ছবি তুলল! শেষে উপরে উঠে দেখলাম শিবমন্দির ও দূরবর্তী বরফের পাহাড়। তবে এ-দৃশ্যের থেকেও শুধুমাত্র পাহাড়-চড়া থেকেই যেন মন ভরে গেল। মন্দিরের সামনে জয়ঢাকের ব্যানার নিয়ে ছবি তোলা হল। পাহাড় থেকে নেমে আসাটা ছিল আরও গা ছমছমে। সাবধানে পথের ওপর চোখ রেখে নামছিলাম। ছোড়দা যদি না বলত, “ওটা কী পাখি?” তাহলে এযাত্রায় মোনালের দেখা পেতাম না।
পৌষালী রায়চৌধুরী
উত্তরাখণ্ডে জয়ঢাকের সাথে আমার প্রথম আসা। এই গোটা জার্নিটাই আমার কাছে ‘মারাত্মক’ শিক্ষণীয়। নিয়মের মধ্যে, প্রকৃতির মাঝে, তার বিভিন্ন খামখেয়ালিপনার মাঝে নিজেকে খুবই তুচ্ছ মনে হয়েছে এই ট্রিপটাতে। একেক সময় ভেবেছি, উফ্, বড্ড ব্যথা হচ্ছে পায়ে, শরীরে—কিন্তু পরক্ষণেই এমন একটা কিছু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে ব্যথা ভুলতে বাধ্য হয়েছি। প্রত্যেকটা ট্রেকিং-এর শেষে ভেবেছি কাল বা পরের দিন রেস্ট করব, কিন্তু দল চলে যাচ্ছে, যদি কিছু মিস হয়ে যায় জীবনে, আর যদি দেখা না হয়! এই লোভে আবার বেরিয়ে পড়েছি। এর জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা জয়ঢাকের প্রতিটা নেতৃত্বের কাছে। এ তো গেল ভূমিকা। আসি প্রসঙ্গে।
সবচেয়ে ভালোলাগা ২৪ ঘণ্টা আলাদা করে বলা খুব কঠিন কাজ। কারণ, সমস্ত ঘণ্টা জয়ঢাকের কাছে এই উত্তরাখণ্ডে এসে পাওয়ায়াটা আমার জীবনে অনেকখানি। তবুও যে ২৪ ঘণ্টা আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে সেটা তুঙ্গনাথ থেকে চন্দ্রশিলায় ট্রেক করে ওঠা। অদ্ভুত ভয় আর ভালোলাগা নিয়ে এই ২ কিমি পাহাড়ের চড়াইপথ বেয়ে ওঠা, সরু রাস্তা, কোথাও আছে, কোথাও নেই – কখনও একা, কখনও বীরজির (বীরেন্দর সিং বিষত) হাত ধরে সঙ্কীর্ণ পথ নির্দ্বিধায় পেরিয়ে যাওয়া। অদ্ভুত এক ভরসার হাত বাড়িয়ে বীরজি নিশ্চিন্তে পৌঁছে দিল আমায় চন্দ্রশিলার চূড়ায়। ভাবছিলাম এতটা পথ উঠে এসেছি! সোনালি বরফশৃঙ্গের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে কী তুচ্ছ লাগছিল! খুব ভালো লেগেছে। ভাবিনি পারব, কিন্ত পেরে, মানে, সাহস যুগিয়ে পৌঁছতে ভালোই লেগেছে। ফিরে এসে মনখারাপ, কারণ সেদিনই সমতলে নামতে হবে। আরও একটা দিন যদি ওই উচ্চতার সামনে থাকতে পারতাম! তবুও ওইটুকুই স্মৃতি আমার মনের মণিকোঠায় থেকে যাবে চিরকাল। ধন্যবাদ জয়ঢাক।
মণীষা বিশ্বাস মণ্ডল
পারব না, পারব না করেও উঠে পড়লাম উচ্চতম শিবমন্দিরে। পিঠে ব্যাগ নিয়ে প্রায় পঞ্চাশেও খুব পিছিয়ে না পড়ে উঠে পড়তে পারলাম তার প্রধান কারণ দাদাদের উৎসাহ। বিশেষ করে দেবজ্যোতিদার অনবরত সাহস যোগানো। তুঙ্গনাথ পৌঁছে কষ্টগুলো সব কোথায় হারিয়ে গেল। চন্দ্রশিলা, প্রথমে তো মনে হয়েছিল শেষপর্যন্ত না গেলেও চলবে। কিন্তু ওপরে পৌঁছে মনে হল, সার্থক এ যাত্রা। কিন্তু ফিরে এসে হরিদ্বারে চণ্ডীমাতার পাহাড় চড়ার ছিল অন্য স্বাদ, গল্প, আড্ডা, পাখি দেখা। কখন চণ্ডীদেবীর দর্শন সেরে যে নেমে এলাম কে জানে! চড়াই-উৎরাই পথ, অথচ প্রতিদিনের তাড়া নেই, ভালোই কাটল ক’টা দিন। সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
আচ্ছা, বাচ্চাদের যদি এই ধরনের ভ্রমণ বাংলার গ্রামে করানো যায়, তাহলে কেমন হয়?
জয়ঢাকের গত বছরের দুই ট্রেকের খবর