নচিকেতা হাজির হলেন যমালয়ে। তখন যম সেখানে অনুপস্থিত। যম ফিরতে তাঁর পরিচারকদের একজন জানালেন, “আগুনের মতো তেজি এক ব্রাহ্মণ এসেছেন। তাঁকে কিছু অর্ঘ্য দিলে তবে তিনি তুষ্ট হবেন। তাঁকে জল দিন।”
বৈদিক অনুশাসনে অতিথি ঈশ্বরের অংশ। তাই অতিথি সেবা দেবসেবার তুল্য বলে মনে করা হত। তার ওপর অতিথি ব্রাহ্মণ বা সন্ন্যাসী হলে তাঁর সাথে ঈশ্বরের যোগাযোগ খুবই দৃঢ় বলে মনে করা হত। তাই যমালয়ে যমরাজ ফিরলে তাঁকে তাঁর অনুচরেরা বললেন, “নচিকেতার পায়ে জল দিন।” এটাই ছিল অতিথির আপ্যায়নের রীতিতে প্রথম ধাপ।
যম বললেন নচিকেতাকে, “হে ব্রাহ্মণ, মান্য অতিথিবর, আমার অভিবাদন গ্রহণ করুন। আমার বাড়িতে যেহেতু তিনরাত আপনাকে অভুক্ত থাকতে হয়েছে, সেহেতু আপনি তিনটি বর বেছে নিন।”
নচিকেতা বললেন, “আমার বাবা, গৌতম, যেন আমাকে নিয়ে তাঁর যত দুশ্চিন্তা সে সবের থেকে মুক্তি পান। যেন আমার ওপর তাঁর যত রাগ সব চলে যায়। যখন আপনি আমাকে তাঁর কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেবেন, তখন তিনি যেন আমাকে সহজে গ্রহণ করতে পারেন । এসবই আমার চাই প্রথম বরে।”
উত্তরে যম বললেন, “ঔদ্দালকি আরুণি, তোমার বাবা। তিনি আমার ইচ্ছেতে তোমার মনোভাব জানবেন। আর তোমার প্রতি তাঁর আগের মনোভাব, আগেকার আচরণ ফিরে আসবে। তাঁর সমস্ত ক্রোধ অবলুপ্ত হবে যখন তিনি দেখবেন যে তুমি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে গেছ।”
নচিকেতা বললেন, “স্বর্গের চৌহদ্দিতে কোন কিছুরই ভয় নেই। সেখানে আপনার বাস নয়। তাই সেখানে বার্ধক্যের ভয় নেই। খিদে, তেষ্টা, দুঃখকে অতিক্রম করে সেখানকার বাসিন্দারা কেবলই জীবনের উৎসব করেন।”
নচিকেতা আরও বললেন, “হে মৃত্যু, স্বর্গগামী যজ্ঞাগ্নির সব কথাই আপনি জানেন। সেসব কথা আমাকে বলুন। আমি যজ্ঞাগ্নির ভক্ত। স্বর্গলোকের অধিবাসীরা মরণশীলতা থেকে মুক্ত। দ্বিতীয় বরে আপনি আমাকেও অমর করে দিন।”
যম উত্তরে জানালেন, “স্বর্গগামী যজ্ঞাগ্নির ব্যাপারে সব কথাই আমি জানি বটে। সেসব কথা বলব তোমাকে নিশ্চয়ই। শোনো তবে। শুধু মনে রেখো যে, এই জ্ঞান চরাচরের তাবৎ জ্ঞান আর তার শক্তি। সমগ্র অস্তিত্বের প্রাণের গভীরে থাকে এই জ্ঞান।”
তারপর যম নচিকেতাকে বললেন, “যজ্ঞাগ্নি ত্রিলোকের প্রবেশপথ।” আরও বললেন তাকে যে কী ধরণের কটা ইট কেমন করে সাজিয়ে যজ্ঞবেদি তৈরি করতে হয়। সেসব কথা নচিকেতা হুবহু আওড়ে নিলেন একবার করে। তাতে খুশি হয়ে যম নচিকেতাকে বললেন, “তোমাকে আর একটা বর দিলাম। এই যজ্ঞাগ্নিকে ডাকা হবে তোমার নামেই। এখন এই রংবেরঙের মালাটা পরে নাও।”
তিনি আরও বললেন যে, “যে নচিকেতা যজ্ঞ তিনবার করে সে মাতা, পিতা ও গুরুর সাথে একাত্ম হতে পারে। আর যে বেদপাঠ করে, যজ্ঞাহুতি দিয়ে, দান করে ত্রিকর্তব্য পালন করে সে জন্ম ও মৃত্যুর চক্র অতিক্রম করে। যে এই শ্রদ্ধেয় জ্যোতির্ময় যজ্ঞাগ্নিকে যথাযথ জেনে, ব্রাহ্মণ থেকে জন্মলাভ করে ও ব্রাহ্মণকে উপলব্ধি করে সে চিরশান্তি অর্জন করে।”
তিনি আরও বললেন যে, “যে জানে কী করে তিন পর্যায়ের নচিকেতা যজ্ঞ করতে হয় অর্থাৎ কী করে সে যজ্ঞের বেদি গড়তে হয়, যূপকাষ্ঠ সাজাতে হয়, আহুতি দিতে হয়, সে জীবন থেকে মৃত্যু এবং আবার জীবনে ফেরার চক্রাকার পরিণতি থেকে মুক্তি পায়। তার ঠাঁই হয় স্বর্গে।”
তারপর তিনি জানালেন নচিকেতাকে, “এই তোমার যজ্ঞাগ্নি। এই যজ্ঞাগ্নিই নিয়ে যায় স্বর্গে। এই তোমার দ্বিতীয় বর। এবার বলো তৃতীয় বরে কী চাও।”
…… চলবে
পিংব্যাকঃ জয়ঢাক(নতুন) বর্ষা ২০১৫-সম্পূর্ণ সূচিপত্র | এসো পড়ি। মজা করি
বাকী পর্ব কোথায়?
LikeLike
সাইটে “জয়ঢাকের সমস্ত লেখার লাইব্রেরি” ট্যাবে গিয়ে ওর মধ্যে “জয়ঢাকের বাকি সমস্ত ফিচার” ক্লিক করলে যে পাতায় পৌঁছোবেন সেইখানে পুরাণ কথার কালেকশন পাবেন। খুঁজে পেতে সক্ষম না হলে নীচের লিংক ক্লিক করলেই হবেঃ https://joydhakweb.com/%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A3-%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%BE/
LikeLike