জয়ঢাকের সমস্ত বুক রিভিউ একত্রে
“আমার দিদি কিংবা বোন দরকার ছাড়া মোটেই বাইরে বের হত না। কিন্তু আমি জঙ্গলে, পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে খুব ভালোবাসতাম।”
এইযে একটা কথা—দরকার—এটা জীবনে খুব জরুরি। কেউ দরকারে কাজ করে। কেউ অদরকারে করে। আর তার জন্য, দরকারে কাজ করা লোকগুলো অদরকারে করাদের স্পিরিটটাকে কোনদিনই ধরতে পারে না। রাগ করে, নয়ত হাসাহাসি করে, বা অবাক হয়ে পাগল ভাবে। কিন্তু পাগলামি ছাড়া কীসের জীবন?
এইসব কথা বলতে বসেছি পাহাড় চড়া নিয়ে। যে সে পাহাড় নয়।পৃথিবীর সেরা পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। কে প্রথম চড়েছিলেন? তেনজিং। আর “এবং অবশেষে ২ মে ১৯৮৪ বেলা একটা বেজে সাত মিনিটে আমি বাচেন্দ্রি পাল প্রথম মহিলা হিসেবে এভারেস্ট শীর্ষ স্পর্শ করলাম।”
বইট আগাগোড়া এই শৃঙ্গ ছোঁয়ার স্বপ্ন, জেদ, কঠিন অনুশীলন, একরোখা মনোযোগ, প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আস্রগল্পে টানটান উত্তেজনায় ভরা।
বইয়ের নাম “এভারেস্ট- আমার শিখর যাত্রা।” লেখক বাচেন্দ্রি পাল। বাংলা অনুবাদ তপতী ভট্টাচার্য। প্রথম প্রকাশ ১৯৯৩। প্রকাশক ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট। গাঢ়োয়ালি কন্যার স্বভাবের মতই ঋজু লেখার ভঙ্গী। অনুবাদও অনবদ্য। একবার হাতে নিলে তরতরিয়ে চলবে।
সুখি পরিবারের পাঁচ সন্তানের তৃতীয় ছিলেন বাচেন্দ্রি। দাদা পাহাড়ে চড়া শিখেছিল আর সারাক্ষণ ভাইকে উৎসাহ দিত বলে “আমার খুব অভিমান হত। –সংসারে মেয়েদের চাইতে ছেলেদের বেশি আধিপত্য” দেখে বাচেন্দ্রির প্রতিজ্ঞা ছিল, “ছেলেদের চাইতেও বেশি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হব।”
বাবা সংসারের সর্বেসর্বা। আর বাচেন্দ্রি দামাল। ঝরনার মত তার কথা, প্রশ্ন। একদিন বাবা রেগে “হঠাৎ আমাকে দু হাত দিয়ে মাথার ওপর তুলে বারান্দার প্রান্ত থেকে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন।” বাচেন্দ্রি পড়তে পড়তে কোনমতে একটা ডাল ধরে ঝুলে রইলেন। সে যে এভারেস্টে উঠবেই! বাবা মা তাকে ফেলে গেছেন তো কী? সে চলল লুকিয়ে পেছন পেছন। আকাশচুম্বী যার লক্ষ্য, সে দুর্বলের মত কাঁদে না। তার কল্পনার বিচরণ সে সফল করেছিল।
কয়েকটা পরিচ্ছদে ভাগ করে লেখা গল্প। এমন একটা বই স্কুলে সহায়ক পাঠ হিসেবে চালু হলে বেশ হত। এককেকটা পাতার পর ‘তারপর’ প্রশ্নটা আসবেই।
অনুশীলন পর্বে কেমন করে গ্রামের লোক হাসি-টিটকিরি দিত, এমনকি নিজের বাবাও, আর ততই জেদ বাড়ত বাচেন্দ্রির। তারপর কেমন করে কর্নেল খুল্লারের নেতৃত্ব, শেরপাদের আগলে রাখা তৎপরতায় নানান বিপদ কাটিয়ে এল সেই মুহূর্ত, “আর মাত্র দু মিটার, তারপর আর ওপরে ওঠার ব্যাপার নেই। এখান থেকেই খাড়া ঢাল নেমেছে নিচে। আমার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে এল।”
আজ এবং আগামির যারা পাহাড় চড়ছ, শিখর ছুঁতে চাও, তাদের অবশ্যপাঠ্য এই রোমাঞ্চকর বইটি। প্রথম শিখর দর্শন, বাচেন্দ্রির ভাষায়
“এভারেস্টের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হল যেন বিশাল এক তুষার পেখম, চূড়া থেকে যেন উড়ে যেতে চাইছে—”
রিভিউঃ পিয়ালী বন্দ্যোপাধ্যায়
অপূর্ব লাগল!এইরকম আরো পুস্তক পরিচয়ের আশায় রইলাম।
LikeLike
অপূর্ব লাগল!এইরকম আরো পুস্তক পরিচয়ের আশায় রইলাম।
LikeLike