বাংলাদেশের বই
রিভিউ করলেনঃ মীম নোশিন নাওয়াল খান
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। কথাটা শুনলেই রোমাঞ্চিত হতে হয়। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মানেই আকর্ষণীয় কোনো গল্প, যেখানে থাকে একটুখানি বিজ্ঞান আর একটুখানি কল্পকাহিনী। তবে সায়েন্স ফিকশনে নতুন ধারা তৈরি করেছে “রিবিট।”
রিবিট একটি উচ্চমাত্রার বুদ্ধিসম্পন্ন রোবট। বাংলাদেশের সেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর তৈরি করেছেন রিবিটকে। তার কাজ মানুষের কল্যাণ সাধন করা। রিবিটের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তার মধ্যে মানুষের মতোই আবেগ-অনুভূতি আছে। সবচেয়ে বেশি আছে যেই অনুভূতি সেটা হচ্ছে শিশুদের জন্য ভালোবাসা।
রিবিটকে প্রফেসর মুক্ত করে ছেড়ে দেন ঢাকার রাস্তায়। তার কাজ হবে সবসময় মানুষের উপকার করা। ঢাকার রাস্তায় নেমে নানা রকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় রিবিট। সে কুড়িয়ে পায় দুটি সংযুক্ত যমজ শিশুকে, যাদেরকে কেউ ফেলে রেখে গেছে। ক্ষুধায় কাতর ও অসুস্থ শিশু দুটিকে নিয়ে শুরু হয় তার ছোটাছুটি। অপারেশন না করলে তাদেরকে বাঁচানো যাবে না- ডাক্তারের এমন কথা শোনার পর অপারেশনের টাকা জোগাড় করতে নেমে পড়ে রিবিট। কী হল তারপর?
উঁহু। সেকথা তো আমি বলব না। সেটা জানতে হলে “রিবিট” বইটা পড়তে হবে। মোশতাক আহমেদের লেখা এই বইটা অন্যান্য বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর চেয়ে একদমই আলাদা। এখানে বিজ্ঞানের সঙ্গে আছে অনেকটা মানবতা আর বাস্তবতা। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীগুলো ভবিষ্যৎ সময় নিয়ে লেখা হলেও এই কাহিনীটা আবর্তিত হয়েছে বর্তমানের ঢাকার প্রেক্ষাপটে। ফলে বইটা অনেক বেশি বাস্তবধর্মী হয়ে উঠেছে। পড়তে পড়তে মনে হবে যেন তুমিও রিবিটের সঙ্গে দাপিয়ে বেড়াচ্ছ ঢাকার অলিগলি।
সায়েন্স ফিকশনের জগতে রিবিট অবশ্যই ভিন্ন ধারা তৈরি করেছে। আর সেজন্যই বইটা হয়ে উঠেছে অনেক বেশি প্রাণবন্ত ও উপভোগ্য। বইটা এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে যে লেখক রিবিটকে নিয়ে একটা-দুটো নয়, এখনও পর্যন্ত নয়টা বইয়ের একটা সিরিজ লিখে ফেলেছেন। প্রতিটা বই-ই খুব উপভোগ্য, গল্প বলার ঢং সহজ, সাবলীল ও প্রাণবন্ত। ফলে বই পড়তে পড়তে তুমিও হয়ে উঠবে বইয়েরই কোনো চরিত্র।
“রিবিট”-এর ধাতব শরীরের একটা চমৎকার ছবি এঁকে বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন বিপ্লব দেব। এই সিরিজের বইগুলো প্রকাশ করেছে অনিন্দ্য প্রকাশ। “রিবিট” বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ১৫০ টাকা।
লেখাপড়ার ফাঁকে ক্লান্তি দূর করতে যদি নতুন কোনো বই হাতে নেয়ার কথা ভাব, তবে তালিকায় রাখতে পার “রিবিট।” সিরিজের প্রথম বইটি পড়েই বাকিগুলো পড়ার জন্য তর সইবে না আর- এ কথা আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি।
বইপড়া-র সব পাতা একত্রে