অরিন্দম দেবনাথ এর সমস্ত লেখা
জল-বাতাস ছাড়াও কি প্রাণ বাঁচতে পারে?
ডেভিড লাটিমের নামক এক প্রকৃতিপ্রেমী এক বিশাল মুখ বন্ধ কাচের পাত্রে বীজ পুঁতেছিলেন। ১৯৭৬ সালের পর আর জল দেননি বীজ থেকে অঙ্কুরিত সেই গাছে। খোলেননি সেই বোতলের মুখ। ২০১৬ সালে দেখা গেল এক অসাধারণ ফলাফল। লিখেছেন অরিন্দম দেবনাথ।
১৯৬০ সালের ইস্টার রবিবার। ছাত্র জীবনে কিছুটা গবেষণার ছলেই কাচের বোতলে একটা বীজ পুঁতেছিলেন ডেভিড লাটিমের। কিন্তু তিনি কল্পনাও করতে পারেননি বোতলজাত ওই বীজ একদিন পরিপূর্ণতা পাবে, প্রমাণ করবে জল-হাওয়া ছাড়া সূর্যালোককে সাথী করে বোতলবন্দী হয়েও নিজেই নিজের বাস্তুতন্ত্র গড়ে বেঁচে থাকা যায়।
বীজবপনের প্রায় ষাট বছর পরেও সেই গাছ দিব্যি বেঁচে রয়েছে বিশাল কাঁচের জারের ভেতরে বন্ধ অবস্থায়। শুধু তাই নয়, ১৯৭২ সালে শেষ জল পেয়ে বেঁচে রয়েছে শক্তপোক্ত ঝাড়ের আকারে।
লাটিমার এক দশ গ্যালন আয়তনের গোলাকৃতি বোতলে খানিক সারমাটি ও জল দিয়ে স্পাইডারওর্টস নামে এক বুনো ঝোপের বীজ একটি তারে বেঁধে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন ওই পাত্রে। তারপর বোতলের মুখ ভালো করে বন্ধ করে জানালা থেকে ছয় ফুট দূরত্বে এমন একটা জায়গায় রেখেছিলেন যেখানে ওই পাত্রটি অল্প সূর্যালোক পায় ও অঙ্কুরিত বীজ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া চালাতে সক্ষম হয়।
১৯৭২ সালে লাটিমার মাত্র একবারের জন্য বোতলের মুখটি খুলেছিলেন সামান্য জল দেবার জন্য। তারপর থেকে আর খোলা হয়নি বোতলের ঢাকনা। গাছ সালোকসংশ্লেস প্রক্রিয়ায় তার বাস্তুতন্ত্র গড়ে নিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে। গাছটি সূর্যালোক থেকে বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত শক্তি গ্রহণ করে তার সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে চালিয়ে গেল।
সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন তৈরি হয়ে বাতাসে আর্দ্রতা ছড়িয়ে দিল। সেই আর্দ্রতা আবার বৃষ্টির আকারে ঝরে পড়ল বোতলের ভেতর। যেহেতু বোতলটি বন্ধ, তাই ভেতরের সঙ্গে বাইরের কোনও সংযোগ রইল না। গাছের ঝরা পাতা পচে তৈরি হল সার ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড যা গাছের বৃদ্ধির এক অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠল। ঠিক যেভাবে ধরিত্রীর বুকে বেঁচে থাকে প্রাণ।
২৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে লাটিমারের ইংল্যান্ডের লাঙ্কশায়ারের বাড়ির সিঁড়ির নীচে আছে এই বোতলবন্দী সবুজ অরণ্যের ছোটো সংস্করণ। তার আগে এটা ছিল তাঁর ক্রানলের বাড়িতে।
লাটিমার প্রথম তাঁর পরীক্ষা তথা বোতলবন্দী হয়ে গাছের বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার কথা প্রকাশ করেন বিবিসি রেডিওর ‘গার্ডেনার্স কোশ্চেন’ অনুষ্ঠানে। উদ্যান বিশেষজ্ঞ তথা টেলিভিশন উপস্থাপক ক্রিস ব্রাডশ ওঁর এই পরীক্ষার কথা শুনে বলেছিলেন, “এটা হল গাছের পুনঃচক্রের এক প্রমাণ। এভাবেই জীবনচক্র টিকে থাকে।”
ক্রিস ব্রাডশ আরও জানিয়েছিলেন, “গাছের এই লড়াই করে বেঁচে থাকার জন্যই নাসা মহাকাশে গাছ নিয়ে যেতে এত উৎসাহী। গাছের মতো বাতাসকে পরিশুদ্ধ করার ক্ষমতা আর কারও নেই। এরা বাতাসের বিষাক্ত কণা শোধন করে, অক্সিজেন তৈরি করে। মহাকাশ স্টেশনে গাছ বাঁচাতে পারলে সেখানে মানুষকে টিকে থাকতে অত কষ্ট করতে হবে না।”
অবশ্য অনেকেই এই বোতলবন্দী হয়ে গাছের বেঁচে থাকাটা সদর্থকভাবে নেননি। যেমন বব ফ্লাউয়ারডিউ নামের এক উদ্যান বিশেষজ্ঞ, “নিশ্চয়ই এটা একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কিন্তু আমি যদি গাছের গন্ধ না নিতে পারি, তা খেতে না পারি, তার থেকে কোনও উপকার না পাই তাহলে সেই গাছ গজিয়ে লাভ কী?” এই কথাগুলো সম্ভবত মজা করে বললেও তিনি যোগ করতে ভোলেননি, “বোতলবন্দী হয়ে গাছ কতদিন বাঁচে এটা জানা দরকার।”
তোমরাও যদি এরকম কোনও গবেষণা চালাও, আমাদের জানাতে ভুলো না। তোমাদের খবর জানাতে পারো এখানে মেল করে joydhak@gmail.com
তথ্যসূত্রঃ দ্যা ভিন্টেজ নিউজ (তিমেরা মিডিয়া, ইউনাইটেড স্টেটস)
বিচিত্র দুনিয়া সমস্ত লেখা একত্রে
তথ্য সমৃদ্ধ লিখা, অসাধারণ
LikeLike