অচেনা ঈশান আগের পর্ব মহিলা দিবস
(পর্ব ৩ – পাংসাও পাস)
সকালে উঠেই কাগজে প্রথম পাতায় চোখ রাখতেই বেশ লাগল – মিষ্টি চেহারার Duchess of Cambridge (Kate)- এর “স্নেহের পরশ” এর ছবি দেখে। কাজিরাঙাতে পশু উদ্ধার ও পুণর্বাসন কেন্দ্রে একটি গন্ডার শাবককে ফিডিং বোতলে দুধ খাওয়াবার ছবি! হাতি ক্লিনিকে গিয়ে সেখানেও নাকি হাতির বাচ্চাকে আদর করে তার মুখে দুধের বোতল ধরেন কেট্। আমরা আসলে কদিন আগেই কাজিরাঙা ঘুরে এসেছি বলে খুব কৌতূহল নিয়ে পড়ছিলাম কেট-উইলিয়ামের সফরের বৃত্তান্ত।
কিন্তু দিনের শুরুটা যেরকম ছিল, শেষটা সেরকম হল না। কারণ প্রাক্-নববর্ষের সন্ধ্যায় “মায়ান্মারী ঝট্কা” বেশ কাঁপিয়ে দিল আমাদের। তখন খালি মাথা ঘুরে গেলেও পরে জানলাম যে ভূকম্পের কেন্দ্র মায়ান্মারের রাজধানী “নেপিদওয়ের” ৩৬০ কিমি দূরে ও মাটির ১৩৫ কিমি নিচে অবস্থিত। সেটি নাকি খুবই অস্থির এলাকা। মনটা একটু উদাস হল, কারণ কদিন আগেই একটা ছোট্ট সুযোগ হয়েছিল মায়ান্মারী মাটি ছোঁয়ার। সেই গল্পই আজ সবাইকে শোনাব।
বন্ধুর অনুরোধে গিয়েছিলাম আপার আসামের তিনসুকিয়া-ডিগবয় এলাকাতে – চা বাগানে ওদের সাথে কিছু অবসর কাটাতে। সেখানে ‘সবুজ’ দেখে চোখের যে কী দারুণ আরাম হয়েছে, তা অনুমেয়। ডিগবয় থেকে কয়েকঘন্টার পথ পেরিয়ে আসামের ‘লেডো’ হয়ে অরুণাচল সীমান্তে ‘জয়রামপুরে’র কাছে এক ঐতিহাসিক সমাধিক্ষেত্র দেখার সুযোগ হল। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত হাজারখানেক সৈনিকদের সমাধিস্ত করা হয়। ইট ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি এই সমাধিগুলোর খোঁজ ১৯৯৮-এ পাওয়া যায়। এর ডানদিকে অবস্থিত ‘Stilwel Road (1736 km)’, যা তৈরি হয়েছিল (১৯৪২-১৯৪৫) তখনকার South East Asia Axis Forces দ্বারা । এই পথ আসামের লেডো থেকে অরুণাচলের জয়রামপুর স্পর্শ করে চলে গেছে Nampong-Pangsau Pass (Arunachal Pradesh – Myanman border)এ। সেখান থেকে অধুনা মায়ানমার (পূর্বে বর্মা) হয়ে চীনের Kunming প্রান্তরে।
পরেরদিন বন্ধু টেনে নিয়ে গেল এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার জন্য – গন্তব্য – সীমান্তের ওই Pangsau Pass Market। জয়রামপুরে পৌঁছোনর আগে ছুঁয়ে গেলাম লেডো, মার্গারিটা নামক জায়গাগুলো। নামগুলো বেশ অদ্ভুত ও অচেনা বলে ছোট্ট অপুর মতন অপার অচেনার আনন্দ অনুভব করছিলাম। অতঃপর জয়রামপুর থেকে খানিক এগিয়ে পৌঁছলাম নাম্পং-এ, যেখানে S.D.Oর অফিস থেকে পাস বানাতে হল মূল গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। তবে মজার কথা যা ঐ চেকগেটে গিয়ে শুনলাম যে ভারতীয়রা গেটের ওপারে মায়ানপমার মাটিতে পা রাখতে পারবেন প্রত্যেক মাসের কেবল ১০, ২০ ও ৩০ তারিখে। ভাগ্যক্রমে আমরাও ঐ নির্ধারিত তারিখেই হাজির ছিলাম। যদিও বাকিদের জন্য রোজই খোলা। সেখানে আমাদের আঙুলের ছাপ নেওয়া হল ও ছবি তোলা হল। এর পরে হাতে পেলাম একটি রূপোর মুদ্রা, যার মাধ্যমে আমরা ঐ দেশে পা রাখতে পারব। তবে এও বলা হল যে বিকেল ৪-৩০ এর মধ্যে আমাদের ঐ মুদ্রা ফেরত দিতে ফিরে আসতে হবে এই প্রবেশদ্বারে। বেশ কঠিন ব্যবস্থা।
গুটিগুটি পায়ে এক উত্তেজনা নিয়ে ‘Aung San Su ki’র মিষ্টি চেহারাটা মনে ধরে নিয়ে পোঁছলাম ওপারে। ভারত-মায়ানমার সীমান্তে অবস্থিত এই Pangsau Pass Market ছোট্ট, তবে মন-কাড়া। মূলত ত্রিপলের উপর সাজানো রয়েছে খেলনা, মনোহারী দ্রব্য, স্থানীয় পোশাক, বিভিন্ন ধরনের টুপি ও ন্যাচারাল কস্মেটিক্স্। ভাষাটা যেহেতু একটা সমস্যা, তাই বেশি সময় নষ্ট না করে সংগ্রহ করলাম একটি স্থানীয় টুপি ও কিছু টুকিটাকি। এদিকে তো পেটে ছুঁচোর কেত্তন শুরু তাই খোঁজ-খোঁজ খাবারের। মোটামুটি বাছাই করে একটি দোকানে তো ঢুকলাম। কিন্তু আবার বিপত্তি। যা চাই তা বোঝাতে পারি না, আর যা পাই তা খেতে পারি না! অনেক কষ্টে পাওয়া গেল সবজি সমেত এক বাটি সুপি নুডলস আর মেয়ের জন্য একটি চেনা চিকেনের পদ, সেও আবার চপ-স্টিক সমেত। ক্ষিদে মহাশয়ের কল্যাণে মন্দ লাগেনি হালকা খাবারটা।
ভরাপেটে খানিক এদিক ওদিক ঘুরলাম বটে তবে ফেরার তাড়ায় মন ভরল না। নতুন দেশের মাটির স্বাদটা ঠিক পেলাম না। ক্ষিদেটা বেড়ে গেল। তখনই মনে মনে একটা সংকল্প করলাম যে পরে সময় নিয়ে অবশ্যই আসব।