আঙ্কল স্যাম পর্ব ১, পর্ব (২) পর্ব ৩
পর্ব ৪
এই অবধি ইউনাইটেড স্টেটসের আবর্জনা আর শৌচাগার নিয়ে অনেক কথা বলেছি। এই প্রসঙ্গে একটা কথা আরও বলি যে সমস্ত ময়লা ফেলার পাত্রে সাধারণত প্লাস্টিকের থলি লাগানো থাকে। বড়ো ভ্যাটে প্লাস্টিক থলি থাকে না। কারণ হয়তো এই যে এইসব ভ্যাটে আলাদা আলাদা থলিতে বন্দি করে ময়লা ফেলেন সবাই, তাই। প্লাস্টিকের থলি থাকায় ময়লা ফেলার কোনো পাত্র থেকেই হাতে করে ময়লা পরিস্কার করতে হয় না। থলি সুদ্ধ ময়লা তুলে নিয়ে, থলিটাকে আবর্জনা সংগ্রাহক গাড়িতে ফেলে দিলেই হয়। এই থলি সংগ্রহের কাজটা যাঁরা করেন তাঁরাও আবার হাতে প্লাস্টিকের গ্লাভ্স পরে থাকেন। কারণ কোনো কারণে থলি ফুটো হয়ে গেলে যাতে তাঁদের খালি হাতে আবর্জনা পরিস্কার করতে না হয়। আবর্জনায় চামড়ার পক্ষে ক্ষতিকারক কোনো রাসায়নিক থাকলে সেই রাসায়নিকে আবর্জনা সংগ্রহ করার কাজটা যাঁরা করেন তাঁদের হাতের ত্বকের ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যায় গ্লাভ্স পরার কারণে।
এরকম সমস্ত ব্যাপারে মানুষের প্রতি, জীবনের প্রতি যত্ন নজর কাড়ে এই দেশে। প্রত্যেক পদে জানানো আছে সুরক্ষিত জীবন যাপণের উপায়। ড্রাইভিং কিংবা রাস্তা পেরোনো কিংবা কফির গ্লাসে হাত দেওয়া সব কিছুতে ছাপানো সতর্ক বাণী থেকে একটাই বোধ স্পষ্ট হয় যে মানুষের জীবন ভীষণ মূল্যবান, মানুষের সুরক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইউনাইটেড স্টেটসের বড়ো শহর যেমন লস এঞ্জেলস বা ছোট্টো কসবা যেমন বেন্টনভিল যেখানেই গেছি সেখানেই মুগ্ধ হয়েছি লাইব্রেরি দেখে। একটা সচিত্র পরিচয় পত্র আর বাসস্থানের ঠিকানার একটা প্রমাণ সঙ্গে থাকলেই বিনামূল্যে বিনা অপেক্ষায়, লাইব্রেরির সভ্য হওয়া যায়। মানে লাইব্রেরির কার্ড পাওয়া যায়। সেই কার্ডে একসাথে তিরিশটা বই আর সাতটা ডিভিডি ধার পাওয়া যায়। প্রত্যেক ডিভিডি রাখা যায় এক সপ্তাহ। অন্য সভ্য ডিমান্ড না দিয়ে রাখলে প্রত্যেক ডিভিডি এক সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে রি-ইস্যু করানো যায়। সব থেকে বেশি তিনবার রি-ইস্যু করা যায় একেকটা ডিভিডি। আর বই একবার ইস্যু হলে রাখা যায় তিন সপ্তাহ। অন্য সভ্য ডিমান্ড না দিয়ে রাখলে প্রত্যেক বই তিন সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে রি-ইস্যু করানো যায়। একেকটা বই সব থেকে বেশি তিনবার রি-ইস্যু করা যায়।
লাইব্রেরি থাকতে পারে শহর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে যেমন বেন্টনভিল সিটি লাইব্রেরি, আরইউনডেল সিটি লাইব্রেরি, অ্যাজুসা সিটি লাইব্রেরি। অথবা কাউন্টি কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানেও লাইব্রেরি থাকে। সিটি লাইব্রেরির সংগ্রহ কাউন্টি লাইব্রেরির তুলনায় ছোটো মাপের হয়। সিটি লাইব্রেরি হোক বা কাউন্টি লাইব্রেরি সবই সভ্যকে লাইব্রেরির ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে দেয় বিনামূল্যে। তাছাড়াও লাইব্রেরির কম্পিউটার ব্যবহার করা যায় সীমিত সময়ের জন্য। যেমন একটানা দুঘন্টা। আবার পনের মিনিট বিরতি নিয়ে, আবার দুঘন্টা। সভ্যদের মধ্যে লাইব্রেরির কম্পিউটার ব্যবহার করার চাহিদার ওপর নির্ভর করে স্থির হয় যে একদিনে একেকজন সভ্য সর্বাধিক কতবার লাইব্রেরির কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন।
সমস্ত লাইব্রেরিতেই নিজের বাড়ির থেকে সভ্য লগ-ইন ব্যবহার করে ক্যাটালগ দেখার ব্যবস্থা আছে। লাইব্রেরির কম্পিউটার ব্যবহার করার জন্যও সেই লগ-ইন লাগে। কিন্তু লাইব্রেরির ওয়াই-ফাই ব্যবহার করার জন্য কাস্টমার সার্ভিস ডেস্ক থেকে পাসওয়ার্ড জেনে নিতে হয়, সভ্য পদের প্রমাণ মানে মেম্বারশিপ কার্ড দেখিয়ে। মেম্বারশিপ কার্ড বার কোড দেওয়া হয়। ফলে বারকোড স্ক্যান করে কম্পিউটারেই লাইব্রেরির কাস্টমার সার্ভিস কর্মী দেখে নিতে পারেন যে ঠিকঠাক সভ্যকেই ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড দেওয়া হচ্ছে কিনা।
সিটি লাইব্রেরি আর কাউন্টি লাইব্রেরির সংগ্রহের পার্থক্য মূলত তাদের ব্যবস্থাপণার গুণে। যেমন কাউন্টি লাইব্রেরি মাত্রেই বই সাজানো থাকে আমেরিকান লাইব্রেরি কংগ্রেসের বই সাজানোর রীতি অনুযায়ী। কিন্তু সিটি লাইব্রেরি অন্যান্য পদ্ধতি অনুসরণ করে। সেই কারণেই তারা কাউন্টি লাইব্রেরি নেটওয়ার্কের বাইরে থাকে কিনা তা জানি না। আবার কাউন্টি লাইব্রেরিগুলো আলাদা আলাদা শহরে হলেও, তাদের সংগ্রহ সামগ্রিকভাবে দেখানো হয় কাউন্টি লাইব্রেরির সংগ্রহ হিসেবে। এর ফলে সভ্যরা তাঁদের সুবিধে মতো লাইব্রেরি থেকে পছন্দের বই সংগ্রহ করতে পারেন। যেমন ধরা যাক কেউ নিয়মিত যাতায়াত করেন জনসন কাউন্টির ওভারল্যান্ড পার্ক লাইব্রেরিতে। তিনি অনলাইন ক্যাটালগে দেখলেন যে তাঁর পছন্দের “উইজার্ড অফ দি আজ” বইটা আছে অ্যান্টিয়ক লাইব্রেরিতে। তিনি নিজের বাড়িতে বসে জনসন কাউন্টি লাইব্রেরি ওয়েবসাইটে লগ ইন করে “উইজার্ড অফ দি আজ” বইটার ডিমান্ড জানালেন, আর জানালেন যে তিনি বইটা ওভারল্যান্ড পার্ক লাইব্রেরি থেকেই সংগ্রহ করতে চান। বইটা যদি ডিমান্ড দেওয়ার সময় অন্য কোনো সভ্যের সংগ্রহে থাকে তো ডিমান্ড যিনি দিলেন তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে বইটা লাইব্রেরিতে ফেরত হওয়া পর্যন্ত। এবার বইটা যিনি ফেরত দেবেন তিনি অ্যান্টিয়ক লাইব্রেরিতে বইটা ফেরত না দিয়ে দিলেন জনসন কাউন্টি নেটওয়ার্কের অন্য আরেক লাইব্রেরি, স্-অনি লাইব্রেরিতে। তাহলে স্-অনি লাইব্রেরি থেকে বইটা অ্যান্টিয়ক লাইব্রেরিতে না পাঠিয়ে পাঠানো হবে ওভারল্যান্ড পার্কের লাইব্রেরিতে।
সারাদিনে কাউন্টি লাইব্রেরিগুলোর ট্রাকে করে বইয়ের যাতায়াত চলে ডিমান্ড অনুসারে বইগুলোকে যথাস্থাণে সরবরাহ করার জন্য। তাছাড়াও যে লাইব্রেরির নিজস্ব সংগ্রহের বই অন্য লাইব্রেরিতে জমা হয় সেই বইও জমা হওয়ার জায়গা থেকে তার নিজস্ব জায়গায় যায় অমন ট্রাকে চেপে। একটু আগে যে উদাহরণটা দিলাম সেটার সাহায্যেই বলি যে যদি অ্যান্টিয়ক লাইব্রেরির “উইজার্ড অফ দি আজ” বইটার জন্য কেউ ডিমান্ড না দিতেন, কিন্তু বইটা যিনি নিয়েছেন তিনি ফেরত দিলেন স্-অনি লাইব্রেরিতে, তাহলে স্-অনি লাইব্রেরি থেকে বই ফেরত যেত অ্যান্টিয়ক লাইব্রেরিতে। কিংবা ধরা যাক যে কেউ ওক পার্ক লাইব্রেরিতে ঘুরতে ঘুরতে তাক থেকে তুলেছিলেন অ্যাব্রাহাম লিঙ্কনের জীবনী। সেটা ফেরত দেওয়ার সময় তিনি জমা দিলেন ওভারল্যান্ড পার্কের লাইব্রেরিতে। সেই বইটা কেউ ডিমান্ড দিয়ে ওভারল্যান্ড পার্ক লাইব্রেরি বা জনসন কাউন্টি লাইব্রেরি নেটওয়ার্কের অন্য কোনো লাইব্রেরি থেকে নিতে না চাইলে বইটা ফেরত যাবে ওক পার্ক লাইব্রেরিতে, ট্রাকে চেপে।
বই ফেরত দেওয়ার সময় ড্রপ বক্সে ফেলে দিলেও চলে। লাইব্রেরি কাউন্টারে জমা না দিলেও চলে। লাইব্রেরির কর্মীরা ড্রপ বক্স থেকে দিনের শুরুতে আর দিনের শেষে সব বই তুলে নিয়ে গিয়ে, বইউয়ের গায়ে আঁটা লাইব্রেরির বারকোড স্ক্যান করে বই-ফেরত হওয়ার ঘটনাটা নথিবদ্ধ করেন। এর ফলে যে সভ্যর নামে বইটা ইস্যু করা হয়েছিল তাঁর ধারের ফর্দ থেকে বই বা ডিভিডিটা বেরিয়ে যায়। যদি নির্দিষ্ট সময়ের পরে ফেরত দেওয়া হয় তাহলে সভ্যের ফাইনের খাতায় ফাইন ধার্য হয়। সেটাও সভ্য অনলাইন দেখতে পান। ফাইন অধিকাংশ লাইব্রেরিতেই, বিশেষত কাউন্টি লাইব্রেরিতে, অনলাইন জমা করা যার।
বই নেওয়ার সময়ও সব সময় লাইব্রেরির কাউন্টারে যাওয়ার দরকার পড়ে না। সেলফ চেক আউট কাউন্টারে চেক আউট করে নেওয়া যায়। বই বা ডিভিডি অনির্দিষ্টকাল ফেরত না দেওয়াটা বা ফাইন বাকি রাখাটা একটা সময়ের পর সভ্যের ব্যক্তিগত তথ্যের অংশ হয়ে যায়।
কাউন্টি লাইব্রেরি মাত্রেই প্রযুক্তিগতভাবে সিটি লাইব্রেরির থেকে উন্নত হয় এমন নয়। বেন্টনভিল সিটি লাইব্রেরিতে ড্রাইভ থ্রু বা ড্রপ বক্সের ব্যবস্থা এমন যে বইটা সভ্য ফেরত দিলেই লেজার স্ক্যানারে স্ক্যান হয়ে যায় বইয়ের মলাটে আঁটা বারকোড। ফলে বই ফেরত হওয়ার ঘটনাটা অনলাইন নথিবদ্ধ হয়ে যায় স্ক্যানিং হওয়া মাত্রই। এমনটা অন্যান্য দু-তিনটে কাউন্টি লাইব্রেরিতেও দেখি নি।
ড্রপ বক্সের বই ও সমস্ত বই বাছাই হয়ে চলে যায় বিভিন্ন লাইব্রেরির নির্দিষ্ট ট্রাকে, ডিমান্ড অনুসারে আর তাদের আদত ঠাঁই-এর ঠিকানা অনুসারে। এবং যেখানকার বই সেখানকার ড্রপ বক্সে জমা পড়লে অবশ্যই সেই লাইব্রেরির নির্ধারিত তাকে।
শুধু লেখকদের নামের আদ্যক্ষর বা বইয়ের বিষয় হিসেবে বইয়ের তাক নির্ধারিত হয় না। ডিমান্ডের বই ও ডিভিডি রাখা থাকে সভ্যদের নামের আদ্যক্ষর অনুসারে সাজিয়ে, ডিমান্ডে থাকা সিডি, ডিভিডি, বই রাখার নির্দিষ্ট তাকে। সভ্যরা নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে তাদের ডিমান্ডের জিনিস সংগ্রহ করে নেন। শুধু বই নয়, কোনো কোনো লাইব্রেরি থেকে কিন্ডল্ পেপার হোয়াইটও সীমিত সময়ের জন্য ধার নিয়ে ব্যবহার করা যায়। ছাত্ররা ধার নিতে পারে আই প্যাডও।
তবে যে কোনো সিটি লাইব্রেরি বা কাউন্টি লাইব্রেরির পাতায় গেলেই দেখা যাবে যে লাইব্রেরি তৈরি করেছিলেন কয়েকজন পাঠানুরাগী মানুষ। তারপর সভ্যসংখ্যা বাড়িয়ে, পৃষ্ঠপোষক জুটিয়ে,বছরের পর বছর টিকে থেকে, আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করে পোক্ত হলে তবে লাইব্রেরি সিটি কাউন্সিলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আরও পরে হয়ত জায়গা করে নিয়েছে কাউন্টি লাইব্রেরির নেটওয়ার্কে। কোনোটাই একদিনে দুম করে প্রশাসন বা প্রশাসকের ইচ্ছেয় তৈরি হয় নি। তৈরি হয়েছে তিলে তিলে, এলাকার বাসিন্দাদের উৎসাহে ।
লাইব্রেরির টেবিল চেয়ার বই আর ঘর ব্যবহার করে ইস্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করতে পারে একলা বা দল বেধে। টিউটরের সাথে বা টিউটর ছাড়াই। তাই এইসব ঘর গুলোতে হোয়াইট বোর্ড, মার্কার আর ইরেসার থাকে। তাছাড়া খুব কম খরচে ব্যবহার করা যায় লাইব্রেরির প্রিন্টার আর কপিয়ার। ইস্কুলের ছাত্ররা প্রজেক্টের পুরো কাজ কখনও কখনও পুরোটাই লাইব্রেরিতে বসে করতে পারে। ইস্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা গরমের ছুটিতে লাইব্রেরিতে ভলান্টিয়ার হিসাবেও কাজ করতে পারে। আবার কোনো কোনো কাউন্টি লাইব্রেরি বয়স্ক মানুষদের চাহিদা মতো বই, ডিভিডি, ইলেকট্রনিক বুক রিডার তাঁদের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
২০০৯-১০ সালে লস এঞ্জেলস কাউন্টি লাইব্রেরি নেটওয়ার্কের জুলিয়ান ডিক্সন লাইব্রেরিতে যাতায়াত করতাম। সেটা কালভার সিটিতে। কালভার সিটিতেই সোনি এন্টারটেইনমেন্ট স্টুডিয়ো। তার মধ্যে কলম্বিয়া ট্রাইস্টারের মতো বড়ো বড়ো ছায়াছবি নির্মাতা, প্রযোজক, প্রচারকদের ঘাঁটি। জুলিয়ান ডিক্সন লাইব্রেরিতে সোনি এন্টারটেইনমেন্ট স্টুডিয়ো ইস্কুলের ছাত্রদের জন্য হোমওয়ার্ক হেল্প সেন্টার চালাত। ২০০৮ সালে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দার প্রকোপে লসএঞ্জেলস কাউন্টির অধিকাংশ লাইব্রেরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল চিরতরে। তার মানে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিনামূল্যের হোমওয়ার্ক হেল্পও। কিন্তু ২০১৪-১৫ সালে লাইব্রেরিগুলো আবার খোলা হয় একে একে। এলাকার আবাসিকদের বৌদ্ধিক বিকাশে এই লাইব্রেরিগুলো আবার সক্রিয় পীঠস্থাণ হয়ে উঠেছে।
আরও একটা বিষয় হলো সব কিছু খুব সিধে সরল করে বোঝানো থাকে। যেমন স্যান্টা মনিকা শহরে যে কোম্পানির বাস চলে সেই কোম্পানির নাম বিগ ব্লু বাস। কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় যে বাসগুলো সত্যিই বড়ো বাস আর নীল রঙের!
ছোটো বড়ো সমস্ত বাসেই থাকে প্রতিবন্ধীদের বসার নির্দিষ্ট জায়গা। বাসে ওঠার সিঁড়িটাই ভাঁজ খুলে হুইল চেয়ার নিয়ে বাসে ওঠার পাটাতন হয়ে যায়। আবার হুইল চেয়ার নিয়ে আরোহী বাসে ওঠার পর পাটাতন গুটিয়ে সিঁড়ি হয়ে যায়। তারপর ড্রাইভার সিট বেল্ট খুলে সিট থেকে নেমে এসে হুইল চেয়ার এঁটে দেন নির্দিষ্ট বেল্টের সাহায্যে। তারপর আবার নিজের সিটে ফিরে গিয়ে বসেন। বেল্ট বেঁধে নেন। আর অন্যান্য আরহীরা একে কে বাসে ওঠেন। কোনো স্টপেজের আরোহীরা ঝাঁপিয়ে বাসে উঠে পড়েন না। আগে স্টপজের অবতরনকারীরা নামেন। আবার অবতরনকারীদের মধ্যে হুইল চেয়ারে বসা কেউ থাকলে তাঁকে নামানোর পর বাকিরা স্টপেজে নামেন। তারপর আরোহীরদের ওঠার পালা। বাসে বসার জায়গা না পাওয়া গেলেও কেউ হুড়োহুড়ি মারামারি করেন না।
সব কিছু সিধে সরল করে বোঝানোর উপায়ের মধ্যে আছে রেখাচিত্রের মাধ্যমেও বোঝানো। যেমন সাধারণের ব্যবহারের জন্য শৌচালয়। পুরুষদের জন্য, মহিলাদের জন্য এবং পরিবারের জন্য শৌচালয় চিনে নেওয়া যায় ছবি দেখেই। তাছাড়াও রাস্তার অনেক নির্দেশ রেখাচিত্রের মাধ্যমেই বোঝানো থাকে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা এমন যে নিরক্ষর মানুষেও পরীক্ষা দিতে পারবেন। পরীক্ষার প্রস্তুতি পর্বে পরীক্ষার্থী স্বাক্ষর কারুর সাহায্যে ড্রাইভিং-এর নিয়ম কানুন পড়িয়ে শুনে নিতে পারেন, বুঝে নিতে পারেন। তারপর পরীক্ষার সময় হেডফোন লাগিয়ে কানে প্রশ্ন শুনে, উত্তরের অপশনগুলো শুনে নিয়ে উত্তর দিতে পারেন মাউস ক্লিক করে। তাই নিরক্ষর লোকেও ড্রাইভিং-এর পরীক্ষা পাশ করতে পারেন, যদি তিনি কানে শুনেই নিয়ম-কানুন মনে রাখতে পারেন।
ক্রমশ