অংকের বিচিত্র জগত-আগের পর্বগুলো
পাস্কালের ত্রিভূজ
পাশের ছবিটার মত করে একটা ত্রিভূজ বানাও। সবার ওপরে ১।
তার তলায় দুটো ঘরে ১, ১
তার তলায় দুপাশে ১, ১ আর মাঝখানে, সে ঘরটার ঠিক মাথার ওপরের দুটো ঘরের সংখ্যার যোগফল, মানে ২
তার তলায় দুপাশে ১,১ আর মাঝখানের ঘরগুলোর প্রতিটায় সে ঘরের ঠিক মাথার ওপরের দুটো ঘরের সংখ্যার যোগফল।
এইভাবে যতখুশি বাড়িয়ে যেতে পার।
এবারে জাদু ত্রিভূজের মজাটা দেখ। ওর সবুজ রঙা সারিটা শুধু ১ দিয়ে তৈরি।
হলদে রঙা দ্বিতীয় সারিটা হল পূর্ণ সংখ্যার সার।
তৃতীয় সারিটা (নীল রঙ) হল ত্রিভূজ সংখ্যার সার।
ত্রিভূজ সংখ্যার সারিতে কারা থাকে?
খেয়াল করে দেখ, শূন্য আয়তনের একটা ত্রিভূজ মানে একটা বিন্দু (যেকোন শূন্য আয়তনের ক্ষেত্রই একটা বিন্দু)
ওর চেয়ে বড়ো ত্রিভূজ গড়তে সবচেয়ে কম কটা বিন্দু লাগবে? তিনটে।
ওর চেয়ে ঠিক বড়ো সাইজের ত্রিভূজ গড়তে? ছ’টা। তারপর ১০টা—-
এইখানে একটা কায়দা বলে দি। ত্রিভূজ সংখ্যা বানাবার কায়দা এইরকমঃ
ধরো, ‘ক’ যেকোন একটা সংখ্যা। তাহলে ক(ক+১)/২ এইটে সবসময় একটা ত্রিভূজ সংখ্যা হবে।
আরো আছে। পাস্কাল ত্রিভুজের চতুর্থ সারিটা টেট্রাহেড্রাল (চতুঃশির) সংখ্যার সার।(চারচুড়োওয়ালা ঘনবস্তু হল টেট্রাহেড্রন। পাশে তার ছবি)
টেট্রাহেড্রাল সংখ্যা বুঝতে এই চতুঃশিরটাকে দেখঃ
এইবারে কয়েকটা গোলক দিয়ে (মানে ধরো মার্বেল এই চতুঃশিরকে বানাতে হলে, তার চুড়োয় লাগবে একটা মার্বেল। দ্বিতীয় স্তরে লাগবে ৩টে, তৃতীয় স্তরে লাগবে ৬টা, চতুর্থ স্তরে ১০টা—
তার মানে কোন স্তরে কটা মার্বেল লাগছে সে সংখ্যাগুলো আসএ ত্রিভূজ সংখ্যা তাই তো?
এবারে যদি বলি, দুই স্তরের একটা চতুঃশির বানাও, তাহলে মোট কটা মার্বেল লাগবে? ১+৩=৪খানা।
যদি বলি তিন স্তরের একটা চতুঃশির বানাও তাহলে মোট কটা লাগবে? (১+৩+৬)=১০টা
চার স্তরের হলে মোট লাগবে (১+৩+৬+১০)=২০টা
এই মোট সংখ্যাগুলোর সার মানে ১,৪,১০,২০—– হল চতুঃশির সংখ্যা।
জাদু ত্রিভূজের আরেকটা মজা খেয়াল করেছ? ওর বাঁ ধারটা, ডান ধারটার প্রতিবিম্ব।(খেয়াল করে দেখ। বুঝিয়ে দিচ্ছি না।)
আরেকটা রহস্যময় বৈশিষ্ট্যঃ সঙ্গের ছবিটা দেখ। পাস্কালের ত্রিভূজের আনুভূমিক লাইনগুলোর প্রত্যেকটাতে সংখ্যাগুলোর যোগফলগুলো হল—
১, ১x২, ১ x২ x২, ১ x২ x২ x২, ১ x২ x২ x২ x২—
ত্রিভূজের প্রত্যেকটা লাইন আবার ১১কে বারবার ১১দিয়ে গুণ করলে যা পাবে তার সমান। এই দেখঃ
বললাম তো বটে, কিন্তু ১১কে ১১ দিয়ে পাঁচবার গুণ করে হচ্ছে ১৬১০৫১। অথচ ত্রিভূজ বলছে অন্য। উঁহু ওটা একটু ধাঁধালো। নিচের ছবিটা দেখঃ
তার পরের লাইনটা কীভাবে হবে তা তুমি নিজেই ভেবো, কেমন?
এইবারে আরেকটা মজার জিনিস দেখঃ
একটা পাস্কাল ত্রিভূজ নাও। এবারে তার সবার নীচের সারির সবচেয়ে বাঁপাশের সংখ্যাটা ধর। এবারে তার ওপরের সারের বাঁপাশের পরপর দুটো সংখ্যা ধর।
এবারে তার ওপরের সারের বাঁপাশের তিনটে সংখ্যা ধর। এইভাবে চলতে চলতে যে সারে এসে সারির সবকটা সংখ্যা ধরা হয়ে যাবে তার ওপরের সারগুলোড় সবগুলোকেই ধরে নাও। সঙ্গের পাস্কলা ত্রিভূজে এ কায়দা করলে ধরে নেয়া সংখ্যাগুলোকেমন দেখতে হবে সেইটে রঙ করে দিয়েছি।
এবারে, কোণাকুণিভাবে ত্রহাকা নির্বাচিত সংখ্যার সারদের যোগ কর (আলাদা আলাদা রঙের কালার কোড) যোগ করো।
তাতে যে সারটা পাবে সে এক আশ্চর্য সংখ্যার সার। ১,১,২,৩,৪,৮,১৩,২১—– একে বলে ফিবোনাচি সার।
এর বৈশিষ্ট্য হল, এর প্রত্যেকটা সংখ্যা তার ঠিক আগের দুটো সংখ্যার যোগফল।
ভারী আশ্চর্য, রহস্যময় সংখ্যার সার এই ফিবোনাচি সংখ্যারা। ত্রয়োদশ শতকে ফিবোনাচি তার কথা বলবার বহু আগে ভারতীয় গণিতশাস্ত্রে সে সার বীরহঙ্ক সংখ্যা নামে বহুল পরিচিত ছিল। তুচ্ছ শামুকের খোলের গড়ন থেকে অজস্র আলোবছর জুড়ে ছড়ানো বহু গ্যালাক্সির রূপ সে সংখ্যাদের শাসণ মেনে চলে। তাকে মেনে চলে প্রাচীন ভারতীয় কাব্যে অক্ষরবিন্যাস, কিংবা এক্স ক্রোমোজোমের উত্তরাধিকারের গভীর প্রাকৃতিক সূত্র।
কী, কৌতুহল হচ্ছে? তাহলে পরের সংখ্যায় ফিবোনাচির গল্প।
ক্রমশ
জয়ঢাকের বৈজ্ঞানিকের দপ্তর