প্রতিবেশী গাছ আগের এপিসোডগুলো
তু ল সী
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
আমাদের গ্রামের বাড়িতে গৃহদেবতা রঘুনাথ রয়েছেন। তাঁর নিত্যপূজা হয়। তুলসীপাতা ছাড়া নারায়ণের পূজা হয় না। গ্রামের বাড়ি গেলে ঠাকুর পুজোর চরণামৃতর সঙ্গে তুলসী পাতাটি আমার জন্য বরাদ্দ থাকে।
সাম্প্রতিক কালের একটি গবেষণাপত্রে দেখেছিলাম তুলসী পাতা মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। আমাদের দেশে শত শত বছর ধরে এই তুলসী পাতার ব্যবহার চলে আসছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলসী পাতার ব্যবহারকে সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মাথা নত হয়ে আসে সেকালের অসাধারণ মেধাবী মুনি ঋষিদের জন্য যাঁরা সর্বজনহিতার্থে এই প্রথা চালু করেছিলেন।
মনে পড়ছে আর একটি ঘটনা। স্থান দেওঘর। রয়েছি রামকৃষ্ণ মিশন গেস্ট হাউসে। সকালে সুখেন মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে গেছি। উনি একজনকে বললেন আমাকে চা দিতে। চা’য়ে অনীহা রয়েছে আমার। বললেন, ‘চা খান, কোন অসুবিধা হবে না।’ চা পান করতে করতে মনে হল, এই চায়ের স্বাদ এবং গন্ধ আলাদা। আর চা পান করে পরে কোন অসুবিধা বোধ করিনি আমি। তাই একটু অবাকই হয়েছিলাম। পরে জানতে পেরেছিলাম, এটি তুলসী পাতার চা। এর সুগন্ধটি আজও ভুলতে পারিনি।
তুলসী একটি ঔষধী গাছ। এটি একটি ঘন শাখা বিশিষ্ট ২-৩ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট চিরহরিৎ গুল্ম। এর কাণ্ডটি কাষ্ঠল, শক্ত এবং চতুষ্কোণাকার। কাণ্ড থেকে শাখা বের হয়। শাখাগুলি পত্র বিশিষ্ট। পাতা ১-২ ইঞ্চি লম্বা, কিনারা খাঁজকাটা। পত্র রোঁয়া বিশিষ্ট। শাখা প্রশাখার অগ্রভাগহতে পুষ্পদণ্ড বের হয়। পুষ্পদণ্ডের চারদিক (আবর্ত আকারে) থেকে ফুলগুলি বের হয় এবং বিভিন্ন স্তরে ফুলগুলি সজ্জিত থাকে। পাতা ও ফুলগুলি একটি বিশেষ গন্ধযুক্ত।
ভারতবর্ষের প্রায় সর্বত্র এই গাছ দেখা যায়। পূজা এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তুলসী পাতা ব্যবহার হয়। সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে তুলসী নারায়ণের প্রতীক। হিন্দুদের বিভিন্ন ধর্মীয় কাজে তুলসীব্যবহার হয় বলে বাড়িতে, মন্দিরে এই গাছ লাগানো হয়। এদেশে কয়েক ধরণের তুলসী গাছ দেখা যায় যেমন, রাম তুলসী, বন তুলসী, কর্পূর তুলসী, বাবুই তুলসী, রক্ত তুলসী, ভূতুলসী,কৃষ্ণ তুলসী ইত্যাদি। এক গাছের বিজ্ঞান সম্মত নাম Ocimum sanctum । সর্দি কাশির ঔষধ হিসাবে সর্বত্র এটির ব্যবহার রয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের আদা মধু এবং তুলসী পাতা বেটে খাওয়ানোর প্রচলন রয়েছে।
এই গাছের বহুল প্রচলন এবং ব্যবহার রয়েছে। সেগুলির কয়েকটি উল্লেখিত হল –
- জ্বরে – তুলসী পাতা গোল মরিচ এবং মিছরি জলে ফুটিয়ে খাওয়ানোর নিদান রয়েছে।
- পেট খারাপ – তুলসী পাতা এবং জিরা বেটে রসটি খাওয়ালে এই রোগ ভাল হয়।
- ঘা – তুলসী পাতা এবং ফটকিরি মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়।
- পোড়াতে – তুলসী পাতার রস এবং নারিকেল তেলের মিশ্রণ পোড়া জায়গায় দিলে উপকার পাওয়া যায়।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে – তুলসী পাতার রস উপকারী।
- বুদ্ধি ও স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিতে – ৫-৭টি তুলসী পাতা প্রতিদিন খাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে – তুলসী পাতা এবং পুদিনা পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধী।
- এই গাছ ক্রিমিনাশক, বায়ুনাশক, হজমকারক এবং রুচিবর্ধক।
- চর্ম রোগে – তুলসী পাতা এবং দূর্বা ঘাসের ডগা একসঙ্গে বেঁটে লাগালে চর্ম রোগ ভালো হয়। তিলের তেলের মধ্যে তুলসী পাতা ফেলে হাল্কা গরম করে সেই তেল ত্বকে লাগালে ত্বকের যে কোন সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।
- তুলসী পাতায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে।
- নার্ভ টনিক – তুলসী পাতার রস মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- তুলসী পাতার চা সুস্বাদু এবং সুগন্ধযুক্ত।