প্রতিবেশী গাছ সব পর্ব একত্রে
ছাতিম
শয়তানের ঝাড়? নাকি পন্ডিত -গাছ?
পিয়ালী বন্দ্যোপাধ্যায়
আজ যে মজার গাছের কথা বলব তার নাম ছাতিম। পশ্চিমবঙ্গের ‘স্টেট ট্রি’। ডঃ জেকিল এন্ড মিঃ হাইড নামে সেই যে একটা বিখ্যাত উপন্যাস আছে না! যে একটি মানুষ একাধারে ডাক্তার হয়ে উপকার করতেন এবং রাতে অপরাধী হয়ে দুষ্কর্ম।
ছাতিম গাছের নাম শুনেও তেমন মনে হয়। একে বহু জায়গায় স্থানীয় নামে ডাকা হয় ‘শয়তান কি ঝাড় নামে, আবার অন্যদিকে এর নাম “স্কলার ট্রি”। আসলে গাছটির ছালে আছে একরকম তেতো রস যাতে মুখ দিলে গরুছাগলের ঝিম লেগে যায়। তারা ভুলেও ঘেঁষে না এর ধারেপাশে। এই কারণেই হয়ত ওই শয়তানের ঝাড় নাম। এর ডালপাতা পোষা প্রাণীদের মানুষ খাওয়াতে পারে না। অথচ মজা এই যে এই ছালের রস হল বহু অসুখের মহৌষধ। ডায়েরিয়া, অ্যাজমা, জ্বর, ডিসেন্ট্রি, আলসারজাতীয় ক্ষত সারাতে।, এসন্ট্রিঞ্জেন্ট হিসেবেব্যপবহার করতে। এর দুধের মত তরুক্ষীর হল ওষধি গুণসম্পন্ন।
শোনা যায় দক্ষিণ ভারতে পশ্চিমঘাট পর্বতের দক্ষিণ কন্নড় আর উদুপীর মাঝে একসময় ছিল ছাতিমবন। সেখানে বর্ষায় জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাই এর মাঝমাঝি পর্যন্ত এক উৎসব হত। ওই ছাতিম গাছের ছাল নিয়ে নানান প্রক্রিয়ায় তাকে শুদ্ধ করে খাওয়া হত। ব্যাপারটা খুব শুদ্ধভাবে ভক্তিভরে করা হত। যেমন ছালটি ছুরি দিয়ে কাটা হবে না, হবে পাথর দিয়ে।
আবার এই গাছের হালকা,মসৃণ,সাদাটে কাঠ দিয়ে ব্ল্যাকবোর্ড তৈরির চল ছিল উত্তরভারতে। তাই এর নাম ব্ল্যাকবোর্ডট্রি বা স্কলার ট্রি।
কেরালার ওনাম উৎবের যে কাঠের মুখোশ নৃত্য হয় সেও যে সে কাঠে হয় না, একমাত্র পবিত্র ছাতিম কাঠে। একই নিয়ম ইন্দোনেশিয়ার বালিতেও। সেখানেও মুখোশ বানানোর জন্যে এই ছাতিম কাঠ।
ছাতিম গাছ একটু চেষ্টা করলেই চিনে ফেলতে পারো এর পাতা দেখে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর নাম দিয়েছিলেন সপ্তপর্ণী। একটি ডাঁটির ওপর সাতটি পাতা। সারাবছর সবুজ থাকে এবং লম্বায় গাছ টা ৩০ ফুট মত হয়। ফুল ফোটে অক্টোবর, নভেম্বরে। সবুজাভ গুচ্ছাকার তীব্র মশলাগন্ধযুক্ত ফুলের গন্ধ বহু দূরে ছড়িয়ে পড়ে। গাছের গুঁড়িতে বাদামীর ওপর ছোট্ট উঁচু উঁচু ডট দেখেও চেনা যায়।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের প্রিয় এই গাছ নিয়ে একটি গল্প আছে। জমিদারির দেখাশোনা করতে গিয়ে এই গাছের তলায় বিকেলে বিশ্রাম নিয়েছিলেন ও খুব শান্তি পেয়েছিলেন। তারপর ওইখানকার জমি কিনেই নেন,পরে যেখানে শান্তিনিকেতন স্থাপিত হয়। সেখানে বেড়াতে গেলে বিখ্যাত ছাতিমতলা দেখে নিও। বিশ্বভারতীর সমাবর্তন উৎসবে স্নাতকদের শংসাপত্রের সঙ্গে একটি ছাতিম পাতা দেওয়ার রীতি আছে।
গাছটি গরম দেশের মানে ক্রান্তীয় অঞ্চলের। এর অনেক নামের মধ্যে কয়েকটা হল মিল্কউড পাইন, ডিটাবার্ক ট্রি,হোয়াইট চিজউড।