প্রতিবেশী গাছ সব পর্ব একত্রে
এসে গেল সোঁদালের দিনঃ সোনাঝুরি,অমলতাস, সোনালু, বাঁদরলাঠি (Cassia fistula)
পিয়ালী বন্দ্যোপাধ্যায়
চীনদেশে এক উৎসব হয় যার নাম মুন ফেস্টিভ্যাল। হেমন্ত পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে বাড়ির সকলে একজোট হয়, ছোটোরা ঘনিয়ে বসে বড়োদের কাছে গল্প শুনতে। আসলে এই সময়টা ফসল ঘরে তোলার সময়, পরিবারের সকলকে নিয়ে উৎসব।
এই দিন চাঁদ মস্ত বড়ো আর উজ্জ্বল হলুদ দেখায়, কেন জান? চাঁদের ক্রেটারে বা গর্তে( যা কিনা আমাদের বাঙালি বিজ্ঞানী শিশিরকুমার মিত্র র নামে,নাম”মিত্র”) রয়েছে হলুদ ফুলে ফুলে ছয়লাপ এক বিশাল সোঁদাল গাছ, প্রায় পাঁচ হাজার ফুট উঁচু।এই গাছের গুঁড়িতে লাগাতার কুড়ুল মেরেই চলেছে উ-ক্যান বা উ-গান,এক অভিশপ্ত কাঠুরে।খুব আলসে ছিল সে, কিন্ত অমর হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। রাজা বিরক্ত হয়ে তাই তাকে বলেছিলেন, চাঁদের গর্তের ওই গাছটা কেটে ফেললেই সে অমরতা পাবে।
এই শুনে সে দৌড় লাগায় চাঁদে,আর কোপ লাগায় গাছে। কিন্ত আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যায়, যতবার সে কুড়ুল তোলে ততবার গাছের গুঁড়ি আগের মত হয়ে যায়। তাকে কিছুতেই কেটে ফেলা যায় না। কিন্ত অমরত্বের লোভে উ-ক্যান কোপের পর কোপ বসিয়েই চলেছে যুগ যুগ ধরে। এদিকে গাছ তো মরেই না, বরং সারাবছর চাঁদের বুকে সোনালি ফুলে ফুলে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়।
ফিশ্চুলা মানে পাইপ। ক্যাসিয়া ফিশ্চুলার ফলগুলো লাঠির মত ঝুলতে দেখা যায়। তাই একে বাঁদরলাঠি গাছ ও বলে। আমাদের এই এশিয়ায় এর আদি দেশ। সমতলে, আবার নীচু পাহাড়ের কোলে খুব জন্মায়। শীতে সব পাতা ঝরে যায় আর গরমের মাঝামাঝি থরে থরে হলুদ ফুলের ঝারি ঝুলতে থাকে, প্রায় পাতাহীন গাছে। সে এক অপরূপ সুন্দর ব্যাপার। ফল পাকতে একবছর লাগে, সবুজ থেকে কালো হয়।
গরুছাগলে খুব একটা খায় না বলে সর্বত্র এ গাছ লাগানো যায়। ‘কার্পেন্টার বি’ মৌমাছি আসে, প্রজাপতিও। গোল্ডেন জ্যাকল এর ফল খায় আর বীজ ছড়াতে সাহায্য করে।
এ গাছ বেশি উঁচু নয়, খুব জোর ৮-১০মিটার হয়। ভারতে কেরালার জাতীয় ফুল, বিষ্ণু ফেস্টিভ্যালে এই ফুল লাগে। কেরালা তো হার্বাল মেডিসিনের জন্যে বিখ্যাত, এই ফলের শাঁস ওষুধ তৈরিতে লাগে।
ওদিকে থাইল্যান্ডে এই গাছের সোনালি ফুল রাজকীয় জমকের পরিচয়। এ গাছ ওদের জাতীয় গাছ।
পুডিং পাইপ ট্রি, ড্রামস্টিক ট্রি, গোল্ডেন শাওয়ার (ফুলভরা গাছ দেখে এরকমই লাগে) কত নাম এর। গ্রামেগঞ্জে আদরের নাম সোনালু। বাঁকুড়ার ওদিকে গেলে এই সোনালু আর গলগলি(অন্য গাছ) বন হলুদ করে রাখে। কোথাও এর পাপড়ি সব্জির মত রান্না করে খাওয়া হয়।
অলঙ্করণঃ লেখক