প্রতিবেশী গাছ সব পর্ব একত্রে
বর্ধমান শহরের মধ্যে রয়েছে কয়েকটি খুব বড় পুষ্করিণী, তার একটা শ্যামসায়র। বর্ধমান রাজ ঘনশ্যাম রাই এটি প্রতিষ্ঠা করেন ১৬৮০ সাল নাগাদ, জনসাধারণের পানীয় জলের সুবিধার জন্য। শ্যামসায়রের পশ্চিমপাড়ে রয়েছে বর্ধমান রাজ কলেজ আর ঠিক তার পাশেই বর্ধমান জেলা সদর হাসপাতাল। পূর্ব পাড়ে হরিসভা, বর্ধমান শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম এবং ঈশ্বানেশ্বর শিব মন্দির। শোনা যায় শ্রীরামকৃষ্ণদেব একবার বেলুড় যাবার পথে ঈশ্বানেশ্বর শিব মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন। আর এই মন্দিরের পাশে এখন যেখানে শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম গড়ে উঠেছে এই জায়গায় অনেক ফুলের গাছ ছিল, এই ফুল নিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণদেব ঈশ্বানেশ্বরের পুজো দেন। এই স্থানটি তাই সকলের কাছে পুণ্যভূমি।
এই শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রমে রয়েছে একটি বিশাল বড় ফুলের গাছ – নাগলিঙ্গম। নাগলিঙ্গম ফুল গাছ বর্ধমান শহরে বোধহয় আর একটিও নেই। গাছের গোড়া থেকেই অজস্র ফুল ফোটে। সুগন্ধিযুক্ত এই ফুলে আশ্রমের পুজো হয়।
নাগলিঙ্গম গাছের ফুলগুলি দেখতে অতি সুন্দর। ফুলের পরাগচক্রের সঙ্গে সাপের ফণার হাল্কা সাদৃশ্য রয়েছে। ইংরেজিতে এই গাছের নাম Cannonball tree । এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Couroupita guianensis । এই গাছের আদি বাসস্থান মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকা বলে জানা যায়। তবে দীর্ঘকাল যাবৎ ভারতবর্ষে এই ফুলগাছ দেবস্থানে রোপণ করা হচ্ছে। এদেশে এই গাছকে পবিত্র বলে মানা হয়।
এই গাছ অনেক লম্বা হয়। গাছ তাড়াতাড়ি বাড়ে। ফুলের কদর রয়েছে সৌন্দর্যের জন্য। গ্রীষ্মকালে ফুল ফুটতে শুরু করে। গাছে দীর্ঘকাল ধরে ফুল আসে – শরৎ কাল অবধি। ফুলের রং কমলা, উজ্জ্বল লাল বা গোলাপী। কাণ্ড থেকে কয়েক ফুট লম্বা ডাঁটি বের হয় যার প্রান্তে ফুলগুলি ফোটে। ছয় পাপড়িযুক্ত ফুলগুলি সুগন্ধের জন্য খ্যাত। গাঢ় বাদামী বর্ণের বড় ফলগুলি গোলাকার, ঠিক যেন কামানের গোলার মত। তাই সম্ভবত ইংরেজরা একে Cannonball tree নাম দিয়েছে। ফলের মধ্যে অনেক বীজ থাকে। গাছে শতখানেক ফল ধরে। ফল পরিপক্ব হতে এক-দেড় বছর সময় লাগে। ফলগুলি পশুপাখীর আহার্য। ফল গাছ থেকে নীচে পড়ে। কিছুদিনের মধ্যেই পচন ধরে, বের হয় বদ গন্ধ।
সবুজ লম্বাটে পাতা এবং ফল ত্বকের রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। পেটের ব্যাথায় এই ফুলের ব্যবহার রয়েছে।
ছবিঃ লেখক
বৈজ্ঞানিকের দপ্তর সব পর্ব একত্রে