ভারত ও বিশ্বের বৈজ্ঞানিক-সব লেখা একত্রে
বাগ্মী হকিং– পর্ব ১, পর্ব ২ , পর্ব ৩, পর্ব ৪ পর্ব ৫
বাগ্মী হকিং – পর্ব ৬
চলো বানাই টাইম মেশিন
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়
আমি স্টিফেন হকিং বলছি। হ্যাঁ, আমি নড়াচড়া করতে পারি না ঠিকই, তবে আমার এই চেয়ারটা আমাকে নিয়ে চলেফিরে বেড়ায়। কথা বলতে গেলে যদিও আমার কম্পিউটারের সাহায্য নিতে হয়, কিন্তু আমার চিন্তার জগতে আমি মুক্ত। মুক্ত চিন্তা করতে করতে নিজেকে একটা কঠিন প্রশ্নও করে ফেলতে পারি—টাইম ট্র্যাভেল কি আদৌ সম্ভব? আমরা কি অতীতের দুনিয়ায় একটা দিগন্ত খুলে দিতে পারি কিম্বা খুঁজে নিতে পারি ভবিষ্যতে চলে যাওয়ার কোনও শর্টকাট? প্রাকৃতিক নিয়মের সূত্র ব্যবহার করে নিজের ভবিষ্যতের উপর খবরদারি করার কোনও উপায় আদৌ আছে কি?
আগে ধারণা ছিল টাইম ট্র্যাভেল হচ্ছে কল্পবিজ্ঞান। আমি এই নিয়ে বেশি আলোচনা করা পছন্দ করতাম না, পাছে লোকে আমাকে পাগল ভাবে! এখন কে কী বলল তাতে আমার বয়েই গেল। আমি নিজেকে ওই লোকগুলোর সমগোত্রীয় ভাবি, যারা স্টোনহেঞ্জ বানিয়ে গেছে। সময় নিয়ে ভাবনা চিন্তা আমার কাছে একটা বাতিকে দাঁড়িয়ে গেছে। যদি একটা টাইম মেশিন পেতাম, স্বচ্ছন্দে তাতে চেপে বয়সকালের মেরিলিন মনরোর সঙ্গে দেখা করে আসতাম; নাহয় গ্যালিলিও যখন তাঁর টেলিস্কোপ স্বর্গের দিকে তাক করছিলেন, সেই দৃশ্য দেখতে যেতাম। হয়তো একবারে ব্রহ্মাণ্ডের কিনারায় গিয়ে দেখে আসতাম কোথায় গিয়ে মহাকাশের গল্প শেষ হয়েছে।
টাইম ট্র্যাভেল কী করে সম্ভব জানতে হলে সময়কে পদার্থবিদ্যার রাস্তায় গিয়ে চতুর্থ মাত্রা হিসাবে বুঝে নিতে হবে। ব্যাপারটা শুনতে যত কঠিন লাগছে, আসলে তা একেবারে সোজা। এই যে আমি হুইলচেয়ারে বসে আছি, সেটা কিন্তু তিন মাত্রায়। সব বস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা আছে, যাকে তিন মাত্রা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু আরও একটা দৈর্ঘ্য আছে, যেটা হল সময়ের দৈর্ঘ্য। যেমন ধরো, ওই যে স্টোনহেঞ্জের কথা বলেছি, সেটা কিন্তু কয়েক হাজার বছর ধরে দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে, মানুষ যদিও মেরেকেটে আশি বছর মতো বাঁচে। আবার এই যে সৌরজগত, সেটা বেশ কয়েক কোটি বছর টিকে থাকবে। সবকিছুই এই চার মাত্রায় বাস করে, স্থান ও কালে।
কল্পবিজ্ঞানের সিনেমায় দেখা যায়, একটা ভয়ংকর দর্শন যন্ত্রের মধ্যে একটা সাহসী লোক হঠাৎ ঢুকে পড়ল কোন দুঃখে কে জানে। সেই মূর্খ আবার সময়ের সুড়ঙ্গ খুঁড়ে চলতে থাকা যন্ত্র থেকে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়ল কোন কুক্ষণে কে জানে। এই দৃশ্যগুলো অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয় ঠিকই, কিন্তু ব্যাপারটা একাবারে যে পাগলামির পর্যায়ে পড়ে, এমনটাও বলা যায় না।
আসলে পদার্থবিদেরা অনেকদিন ধরেই সময়ের সুড়ঙ্গ তৈরি করার ফিকিরে আছেন। ভুলটা আমাদের যে, আমরা ভুল দিক থেকে এর মীমাংসা দাবি করি। ভাবি, শুধুমাত্র প্রথাগত প্রাকৃতিক নিয়ম মেনেই বুঝি সেই সুড়ঙ্গ খুঁজে পাওয়া যাবে। ও হ্যাঁ, এই সুড়ঙ্গের গালভরা একটা নাম দেওয়া হয়েছে, ‘ওয়ার্মহোল’। সত্যি বলতে কী, এমন ওয়ার্মহোল চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে, তবে তারা এত সূক্ষ্ম যে খালি চোখে খুঁজে পাওয়া দায়। বুঝতে অসুবিধা হতেই পারে, তবে শেষটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে রোমাঞ্চকর সেই গল্প শুনতে হলে।
এই বিশ্বে সমতল বা ঘন বস্তু কিছুই নেই। যদি শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপ দিয়ে একটা মসৃণ বস্তু ভালো করে লক্ষ করি, তবে দেখতে পাব তাতে আছে অসংখ্য কুঁচকানো তল, অনেক ছ্যাঁদা। এইটা সময়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সময়ের ধারাতেও আছে কুঁচকে যাওয়া, আছে শূন্যস্থান, এবড়ো খেবড়ো তল। যদি আমরা ক্রমশ ছোটো হতে হতে অণু থেকে পরমাণু, তারপর পরমাণুরও ভিতরে চলে যাই, তবে এমন একটা জায়গায় পৌঁছব, যাকে বলা হয় ‘কোয়ান্টাম ফোম’। এইখানেই পাব ওয়ার্মহোল। এই কোয়ান্টাম দুনিয়ায় প্রতিনিয়ত এমন অসংখ্য ওয়ার্মহোল তৈরি হচ্ছে, আবার বিলীনও হয়ে যাচ্ছে। তারা সত্যি সত্যি দুটো স্থানকে বিভিন্ন সময়ে মিলিয়ে দেয়। অসুবিধা হল, এমন সূক্ষ্ম ওয়ার্মহোলের মধ্যে তো আর মানুষের পক্ষে ঢুকে পড়া সম্ভব নয়! তাই একটা বড়সড় ওয়ার্মহোল খুঁজে বার করতে হবে যার ভিতর মানুষ কেন, একটা আস্ত টাইম মেশিন ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে। বিজ্ঞানীরা ভাবছেন সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ওয়ার্মহোল কোনোরকমে যদি একবার ধরে ফেলা যায়, তাহলে সেটার আকার বাড়িয়ে নিয়ে মানুষ বা মেশিন, যা খুশি ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে। প্রচুর শক্তি খরচ করে আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে মহাকাশে এমন দানবাকৃতি ওয়ার্মহোল বানাতে পারলে দুর্দান্ত একটা ব্যাপার হবে। এর একদিক থাকবে পৃথিবীর দিকে, আর একটা দিকে থাকবে কাছাকাছির একটা অন্য সৌরমণ্ডলের গ্রহ। আবার যদি সময়ের এই সুরঙ্গের দুটো মুখই পৃথিবীর একই জায়গায় থাকে, তবে টাইম মেশিনে চেপে চলে যাওয়া যাবে অতীতের এক সময়ে। হয়তো ডাইনোসরেরা হাঁ করে দেখবে আকাশ থেকে নেমে আসা সেই বিরাট মেশিনকে।
এবার একটা সহজ পরীক্ষা করে নেওয়া যাক। অবশ্যই হাতেকলমে নয়, কেবল মাথায়। ধরা যাক আমি একটা পার্টি দেব, আর সেই পার্টিতে নেমন্তন্ন করব শুধু ভবিষ্যতের মানুষকে। এই পার্টির ব্যাপারে গোপনীয়তা রেখে নেমন্তন্নের কার্ডে বলে দেব কখন আর কোথায় আয়োজন করব পার্টি। এবার এই কার্ডের অনেকগুলো প্রতিলিপি আগামী কয়েক হাজার বছরে ছড়িয়ে দিয়ে দেখি কেউ আমার পার্টিতে আসে কি না। দেখা যাবে, আমি হয়তো আশা করেছিলাম আমার আয়োজিত পার্টিতে ভবিষ্যতের মিস ইউনিভার্স নেমে আসবে টাইম মেশিনের দরজা খুলে, কিন্তু বহু প্রতীক্ষার পরও দেখলাম কেউ এল না। পার্টিটা জলে গেল।
এই যে পার্টিটা একবারেই সফল হল না, এর কারণ হচ্ছে আমরা একটা প্যারাডক্সের শিকার। আমি সেই প্যারাডক্সের নাম দিয়েছি ‘ম্যাড সাইন্টিস্ট প্যারাডক্স’। কল্পবিজ্ঞানের সিনেমাতে বিজ্ঞানীদের পাগল বলে দেখানো হয়। তাতে আমার খুবই রাগ হয় ঠিকই, কিন্তু এই প্যারাডক্সটা কিন্তু সত্যি। পাগল বিজ্ঞানী ঠিক করল, এখন থেকে ঠিক এক মিনিট আগের সময়ে পৌঁছানোর জন্য সে একটা ওয়ার্মহোল বানিয়ে ফেলবে। বানিয়েও ফেলল। তারপর টাইম মেশিনে চড়ে ঠিক এক মিনিট পিছনে চলে গিয়ে সে পিস্তল ছুড়ে নিজেকে মেরে ফেলল। যদি সেটা সম্ভব হয়, তবে বর্তমানে তার বেঁচে থাকার কোনও কথাই নয়। তাহলে এমন ওয়ার্মহোল বানানোই যাবে না। এইটাই হচ্ছে প্যারাডক্সের গোড়ার কথা। ভুলটা কোথায় হল? আসলে যেই একটা ছোট্ট ওয়ার্মহোল ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড়ো করতে যাব, অমনি সেটা গড়তে গিয়ে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে যে, ওয়ার্মহোল তৈরি করাই যাবে না। তাই দুঃখজনক ঘটনা হল, কোনও টাইম মেশিনে চড়ে অতীতের কোনও সময়ে যাওয়া একেবারেই সম্ভব নয়। লাভের মধ্যে হল এই যে, ইতিহাস বদলে দেওয়ার সম্ভাবনা উধাও হয়ে যেতে ইতিহাস লিখিয়েরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
গল্পটার কিন্তু এখানেই ইতি হবে না। ভবিষ্যতের সময়ে টাইম ট্র্যাভেল করা যাবে বলেই মনে হয়। সময় একটা বহতা নদীর মতো, কোথাও তার গতি বেশি, কোথাও কম। এটা আইনস্টাইন বলে গিয়েছিলেন। ঘটনাটি সত্যি। মহাকাশেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ওই যে আকাশে উপগ্রহগুলো বনবন করে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাদের জিপিএস স্যাটেলাইট বলা হয়, তারা পৃথিবীর একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ঠিক মাথার উপর থাকছে কী করে? প্রত্যেকটা উপগ্রহের ভিতরে একটা করে সময় মাপার ঘড়ি আছে। সময়ের গতি সেখানে বেড়ে যায়। এক সেকেন্ডের দশ কোটি ভাগের এক তৃতীয়াংশ সময় বাড়ে সেখানে। তাই যন্ত্রপাতিতে পরিবর্তন না ঘটাতে পারলে প্রতি ঘণ্টায় ছয় মাইল সরে যাওয়ার কথা একটা উপগ্রহের।
এসবের মূলে আছে পৃথিবীর ভর। আইনস্টাইন বুঝেছিলেন, ভর সময়ের গতিকে কমিয়ে দেয়। যত বেশি ভর, তত ধীর গতি সময়ের। এই অদ্ভুত আবিষ্কারটাই কিন্তু ভরসা যোগায়, ভবিষ্যতের সময়ে টাইম মেশিনে চেপে চলে যাবার স্বপ্ন দেখায়। এখান থেকে ২৬০০০ আলোকবর্ষ দূরে ছায়াপথের ঠিক মাঝখানটায় আছে সবচাইতে ভারী বস্তু—একটা অতিকায়ের চাইতেও অতিকায় ব্ল্যাকহোল, যার মধ্যে ৪০ লক্ষ সূর্যের সমান বস্তু চেপেচুপে ঠাসা আছে। যত এর কাছাকাছি আসবে, ততই বেড়ে যাবে মাধ্যাকর্ষণ। আলোও এখান থেকে বেরোতে পারবে না। ছায়াপথের অন্য যেকোনও জায়গার চাইতে এখানে সময়ের গতি অনেক অনেক কম। এটা তখন একটা প্রাকৃতিক টাইম মেশিন হয়ে উঠবে। ধরা যাক, পৃথিবী থেকে পাঠানো একটা মহাকাশযান এই ব্ল্যাকহোলের চারদিকে ঘুরছে। পৃথিবীতে বসে সেই যানের নিয়ন্ত্রকরা দেখল ষোলো মিনিটে সেই মহাকাশ যানটা এক চক্কর দিয়ে আসছে ব্ল্যাকহোলের চারপাশে। মহাকাশযাত্রী সাহসী লোকটা কিন্তু নিজের ঘড়িতে দেখবে মাত্র আট মিনিট সময় লাগল একপাক ঘুরতে। এখন পৃথিবীর সময়ের হিসাবে দশ বছর ধরে যদি এই মহাকাশ যানটা ঘোরে, মহাকাশযাত্রীর বয়স বাড়বে মাত্র পাঁচ বছর। হঠাৎ যদি সে পৃথিবীতে ফিরে আসে, তবে সে অবাক হয়ে দেখবে পৃথিবীতে সব মানুষের বয়স তার থেকে পাঁচ বছর বেড়ে গেছে।
তবে এই টাইম মেশিনে চেপে পরীক্ষা করার ঝুঁকি অনেক, আর এত দূরে চলে যাওয়াও সম্ভব নয়। ব্ল্যাকহোল টাইম মেশিন ওয়ার্মহোল টাইম মেশিনের তুলনায় কম জটিল আর প্যারাডক্সের ঘুরপাক খাওয়ার মতো ঝামেলাও এতে নেই। কিন্তু এটা একেবারেই অব্যবহারিক। তাই অন্য উপায় দেখতে হবে। ধরা যাক, পৃথিবীর চারদিক জুড়ে একটা রেললাইন পাতা হল। তারপর একটা ট্রেনে মানুষজনকে চাপিয়ে ট্রেন ছেড়ে দেওয়া হল সেই বৃত্তাকার পথে। ট্রেনটা গতি বাড়াতে বাড়াতে প্রায় আলোর গতিবেগের কাছাকাছি পৌঁছে গেল। এর চাইতে বেশি জোরে ঘোরা সম্ভব নয়, আইনস্টাইনের বারণ আছে। সেটা সত্যিও, পদার্থবিদ্যা এটা প্রমাণ করেছে। পৃথিবী থেকে যদি আমরা ট্রেনটাকে ১০০ বছর ধরে ঘুরতে দেখি, ওই ট্রেনের মানুষগুলোর কাছে সময় কিন্তু ১০০ বছর মনে হবে না, তারা দেখবে মাত্র এক সপ্তাহ সময় কাটিয়েছে তারা। কারণ হল, প্রায় আলোর গতিতে ঘুরতে থাকা ট্রেনে সময় ছোটো হয়ে যাবে, ঘড়ি আস্তে চলবে। ধরো লোকগুলো ১০০ বছর পাক খেয়ে পৃথিবীতে ফিরে এল। এবার তাদের বয়স না বাড়লেও পৃথিবীতে থেকে যাওয়া মানুষদের বয়স বেড়ে গিয়ে তারা ততদিনে পরপারে চলে গেছে। তাই ট্রেন থেকে নেমে মানুষেরা দেখবে তারা ভবিষ্যতের পৃথিবীতে পৌঁছে গেছে। এখন কথা হচ্ছে, এমন জোরে পাক খাওয়া ট্রেন ১০০ বছর ধরে চালিয়ে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু এই ব্যাপারটা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের সার্ন ল্যাবরেটরিতে এমনই একটা বিরাট ট্রেন বানানো হয়েছে। সেই মেশিনটার নাম ‘লার্জ হাইড্রন কোলাইডার’, যার ভিতরে অতি ক্ষুদ্র কণা ঘোরানোর এমনই একটা ব্যবস্থা করে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। মাটির নিচে ১৬ কিলোমিটার লম্বা বৃত্তাকার একটা সুড়ঙ্গ বানানো হয়েছে। সেকেন্ডের মাত্র ছোট্ট এক ভাগ সময়ে ০ থেকে ৬০০০০ মাইল প্রতি ঘণ্টায় সেখানে কণার গতিবেগ বাড়ানোর ব্যবস্থা করা আছে। সেকেন্ডে ১১০০০ বার পাক খায় একটি কণা। তার বেগ প্রায় আলোর বেগের কাছাকাছি। সাধারণ অবস্থায় এক সেকন্ডের ২৫০ কোটি ভাগের একভাগ সময়ে একটা কণা যেখানে বিলীন হয়ে যায়, সেখানে এই হাইড্রন কোলাইডারে আলোর প্রায় সমান গতিবেগে ঘুরতে থাকা কণাটি প্রায় তিরিশ গুণ বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, যদি আমরা ভবিষ্যতের কোনও সময়ে পৌঁছতে চাই, তবে আমাদের অনেক জোরে ছুটতে হবে। সবচাইতে দ্রুতগামী রকেট এপোলো ১০-এর চাইতে ২০০০ গুণ বেশি গতি দরকার। সেটি করতে গেলে লাগবে একটা প্রকাণ্ড মেশিন, কারণ তাতে অনেক অনেক জ্বালানী ভরে নেওয়া যাবে। হিসেব করলে দেখা যাবে, আলোর গতির ৫০ শতাংশ গতিবেগ নিতে সেই রকেটের সময় লাগবে দু’বছর। আরও দু’বছর পর গতিবেগ হবে আলোর বেগের ৯০ শতাংশ। তাই পৃথিবীর মাটি থেকে রওনা দেবার চার বছর পর রকেটটি সময়ের সঙ্গে সমানতালে চলতে শুরু করবে। তখন রকেটের ভিতর একঘণ্টা সময় পৃথিবীর দুই ঘণ্টা সময়ের সমান সমান হবে। আরও দুই বছর রকেট একইভাবে চলতে থাকলে তার গতিবেগ আলোর গতির ৯৯ শতাংশ হয়ে যাবে। তখন রকেটের ভিতর একঘণ্টা পার হলেও, পৃথিবীর বুকে সময় কাটবে এক বছর। এইবার কিন্তু আমাদের রকেট সময়কে পিছনে ফেলে দেবে, শুরু হবে তার ভবিষ্যৎ যাত্রা।
এতক্ষণ যে মনে মনে রকেট পাড়ি দিলাম, তাতে লাভ হল এই যে, আমরা বুঝতে পারলাম ব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় সময় বিভিন্ন গতিতে প্রবহমান।
(ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত ‘মেইল অনলাইন’ সংবাদপত্রে ২০১০ সালে প্রকাশিত প্রবন্ধে প্রফেসর হকিং বক্তৃতা দেওয়ার ঢঙে টাইম মেশিন নিয়ে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন। এই লেখাটি সেই প্রবন্ধ অবলম্বনে রচিত)