মাথে মে ট্রিকস সব পর্ব একত্রে
ছবিতে সময়-দূরত্ব (৩)
সূর্যনাথ ভট্টাচার্য
আগের দুই সংখ্যায় সময়-দূরত্বের দুটি কঠিন প্রশ্নের সহজ সমাধান দেখানো হয়েছে গ্রাফের সাহায্যে। কিন্তু এমন যদি মনে করা হয় যে গ্রাফ এঁকে যে কোনও প্রশ্নের সহজে উত্তর বার করা যাবে, তা কিন্তু নয়। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাফ না ব্যবহার করে অনেক সহজে প্রশ্নের সমাধান করা যায়। যেমন এই প্রশ্নটা—
প্রশ্নঃ দুটি গাড়ি একই রাস্তায় পরস্পরের অভিমুখে যথাক্রমে ৬০ মাইল ও ৫০ মাইল প্রতি ঘন্টা গতিতে আসছে। একে অপরকে অতিক্রম করে যাবার দেড় ঘন্টা আগে তাদের মধ্যে দূরত্ব কত ছিল?
সমাধানঃ চিত্রে দেখান গ্রাফটিতে দেখানো হয়েছে গাড়িদুটির গতির চলরেখা, অপেক্ষাকৃত ধীরগতির গাড়িটির জন্য লাল রেখা ও দ্রুতগতির গাড়িটির জন্য নীল রেখা। অনুভূমিক অক্ষের সঙ্গে তারা যে ত্রিভুজ গঠন করেছে, তাঁর শীর্ষবিন্দু ‘গ’ নির্দেশ করছে তাদের মিলিত হবার স্থানাঙ্ক। লক্ষ করবার বিষয়, যাত্রা শুরুর সময়ে তাদের মধ্যে দূরত্ব প্রশ্নে বলা নেই। অতএব প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই এর ওপর নির্ভর করবে না। তাই একটা যে কোনও অনির্দিষ্ট দূরত্ব ধরে গ্রাফ অঙ্কন করা হয়েছে।
সময় অক্ষে শীর্ষ থেকে এক ঘন্টা আগে দুই চলরেখার মধ্যে দূরত্ব ‘কখ’, এই দূরত্বই নির্ণয় করতে হবে। গাড়ী দুটির চলরেখার নতির সাহায্যে এই দূরত্ব বার করে নেওয়া সম্ভব, কিন্তু গ্রাফ দেখেই এই দূরত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতির সাহায্য নিতে হবে।
সহজ বিকল্প সমাধানঃ এখানে গ্রাফের সাহায্য ছাড়াই দেখা যাচ্ছে, গাড়ী দুটির মাঝে আপেক্ষিক বেগ = ৬০ + ৫০ = ১১০ মাইল প্রতি ঘণ্টা। অতএব মিলিত হবার দেড় ঘণ্টা আগে মিলনবিন্দু থেকে গাড়ী দুটির দূরত্ব উক্ত আপেক্ষিক বেগে দেড় ঘণ্টায় অতিক্রান্ত দুরত্বের সমান, অর্থাৎ ১.৫ × ১১০ = ১৬০ মাইল।
এটা ছিল সহজ। আর একটা একটু জটিল সমস্যা, কিন্তু সমস্যাটি বিখ্যাত।–
প্রশ্নঃ দুটি ট্রেন মুখোমুখি যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ মাইল প্রতি ঘন্টা গতিতে পরস্পরের দিকে আসছে। যখন তারা ১৩ মাইল তফাতে আছে সেই সময় একটা মাছি একটি ট্রেনের সম্মুখ থেকে রওনা হয়ে দ্বিতীয় ট্রেনের সম্মুখ স্পর্শ করল ও তৎক্ষণাৎ মুড়ে আবার প্রথম ট্রেনের দিকে রওনা হল। এ রকম দুই ট্রেনের মধ্যে সে যাওয়া আশা করতেই থাকল যতক্ষণ না দুটি ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। মাছিটি ৯০ মাইল প্রতি ঘণ্টায় একটানা উড়তে থাকলে ট্রেন দুটি মখোমুখি মিলিত হওয়া পর্যন্ত মাছিটি কতোটা রাস্তা অতিক্রম করেছে?
কোনও মাছিই ঐ গতিতে অতক্ষণ উড়তে পারে না, এখানে ধরে নেওয়া হচ্ছে ‘অঙ্কের মাছি’ পারে। দিক পরিবর্তন করতেও তার কোনও সময় নষ্ট হয়নি।
সমাধানঃ আগের প্রশ্নের মত লাল ও নীল রেখা দ্বারা দুটি ট্রেনের সম্মুখের চলরেখা দেখানো হয়েছে। ‘গ’ বন্দুতে তারা মিলিত হচ্ছে। ধূসর রঙের সরু সরলরেখা দিয়ে মাছির গতির চলরেখা দেখানো হল। এটি আঁকাবাঁকা পথে যথাক্রমে লাল ও নীল রেখাদ্বয়কে স্পর্শ করে ক্রমশ ‘গ’ বন্দুর দিকে অগ্রসর হয়েছে। অঙ্কের আদর্শ নিয়ম অনুযায়ী মাছিটি অসীম সংখ্যক বার দিক পরিবর্তন করতে থাকবে, যদিও প্রতিবার তার চলার দৈর্ঘ কম হতে থাকবে। এই অসীমসংখ্যক দুরত্বগুলির সমষ্টি অবশ্যই সসীম, কেননা মাছি অবশেষে ‘গ’ বিন্দুকে অতিক্রম করতে পারছে না।
অতএব দেখা যাচ্ছে একটা অসীম শ্রেণীর জটিল সমষ্টি গণনা করে প্রশ্নের উত্তর বার করতে হবে। উত্তর পাওয়া যাবে, তবে গ্রাফ এক্ষেত্রে কোনও বিশেষ সুবিধে দিচ্ছে না।
সহজ বিকল্প সমাধানঃ আগের প্রশ্নের মতোই এখানেও দুটি ট্রেনের আপেক্ষিক বেগ নির্ণয় করে দেখা যাচ্ছে দুটি ট্রেনের মধ্যে দূরত্ব হ্রাস পাচ্ছে (৬০+৭০) = ১৩০ মাইল প্রতি ঘন্টায়। এই হারে ১৩ মাইল অতিক্রম করতে ১/১০ ঘন্টা সময় লাগবে। এই সময় ধরেই মাছিটি উড়েছে। অতএব সে মোট ৯০´(১/১০) = ৯ মাইল পথ উড়েছে।
সত্যিই সহজ সমাধান, তাই না?
***
শেষ করার আগে এই সমস্যাটা নিয়ে যে মজার গল্পটা প্রচলিত আছে, সেটাও বলে নেওয়া যাক।
হাঙ্গেরিয়ান পদার্থবিদ-গণিতজ্ঞ জন ভন নিউম্যানের প্রখর মানসিক গণনাশক্তির প্রসিদ্ধি ছিল। এই বিজ্ঞানীর কাছে আগের প্রশ্নটা করা হলে তিনি মনে মনে একটু ভেবেই সঠিক উত্তরটি বলে দেন। এত অল্প সময়ে উত্তর পেয়ে প্রশ্নকর্তা বলেন, আপনি ঐ সহজ পদ্ধতিটাই ব্যবহার করেছেন নিশ্চই?
তাতে নিউম্যান জানতে চান, কোন সহজ পদ্ধতি। ওপরের সহজ বিকল্প সমাধানটি তাঁকে বলাতে তিনি আশ্চর্য হয়ে বললেন, আরে তাই তো! এটা তো আমার মাথাতেই আসেনি। অনর্থক একটা ইনফাইনাইট সাম ক্যালকুলেট করতে গেলাম!
প্রশ্নকর্তার সঙ্গে আমরাও হতবাক। কী বল?