লস এঞ্জেলসের কুকুরবেড়ালেরা বেশ রহস্যময় হয়ে উঠছে আজকাল। ফলে লোকজনের হয়েছে বিপত্তি। এত ঘনঘন এত অদ্ভুত সব জিনিসপত্তর ঘটে যাচ্ছে সেখানে যে পাবলিক সে খবর একে অন্যকে দিয়ে কূল পাচ্ছে না। কখনো কেউ ভাবেনি এমন সব উদ্ভুট্টি কাজকর্মও করতে বাধ্য হচ্ছে লোকজন। সব ওই কুকুরবেড়ালদের আচরণের জন্য।
যেমন ধরো, সে শহরের পশুক্লেশ নিবারণ সমিতির কথা। ফি বছর তারা ন্যাশনাল হিরো ডগ অ্যাওয়ার্ড নামে একখানা পুরস্কার দিয়ে থাকে, মানুষের সবচেয়ে ভালো কোন সেবা কিংবা উপকার করেছে তেমন একজন কুকুরকে।
তা এইবার তাদের মহাবিপত্তি। ট্রোফির গায়ে লেখা ‘ডগ’ শব্দটাকে কেটে ‘ক্যাট’ করে ফেলতে হয়েছে রাতারাতি। কারণ, এ বছর সে শহরে কুকুর হয়ে গেছে ভিলেন আর বেড়াল হয়েছে ভিলেন ঠেঙিয়ে মানুষের রক্ষাকর্তা হিরো।
ঘটনাটা যা জানা গেল তা এইরকমঃ
সেখানে এক ট্যাবি বেড়াল থাকে তার নাম ‘তারা’। তারার মালিকের নাম ত্রান্তাফিলো। ভদ্রলোকে বয়স চার বছর। তারা সবসময় তাঁর সঙ্গে সঙ্গে থাকে। একসঙ্গে খেলাধুলোও করে।ত্রান্তাফিলোর বয়েসি পাড়ার অন্য ভদ্রলোক ভদ্রমহিলাদের সঙ্গেও তার বেশ ভাবসাব আছে। ত্রান্তাফিলোর দুই যমজ ভাইবোনকেও সে ভালোই বাসে কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে সে ত্রান্তাফিলোকেই। দুজনে প্রায়শই সুখদুঃখের গল্পগুজবও হয়।বাড়ির কুকুর মায়ার সঙ্গেও তার দিব্যি ভাবসাব।
তা ত্রান্তাফিলোমশাই সেদিন তাঁর তিন চাকার সাইকেলটি নিয়ে বাড়ির সামনের গলিতে খুব জরুরি কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কাজটা নিঃসন্দেহে জরুরিই ছিল। তিন চাকার সাইকেলে নতুন শেখা কেরদানি দেখানো। সহজ কথা নয়। তা সেই কাজে ব্যস্ত ত্রান্তাফিলোমশাই খেয়াল করেন নি পাশের বাড়ির কুকুরটার নজর গেছে তাঁর সাইকেলের দিকে। সাইকেলটা তাঁর চাই। অতএব গুটিগুটি পেছন থেকে এসে কুকুর মেরেছে ত্রান্তাফিলোর ওপরে ঝাঁপ। তার পায়ে দাঁত বসিয়ে তাকে টেনে সাইকেল থেকে ফেলে দেবে এই তার মতলবখানা। কিন্তু সে কি আর জানত যে ত্রান্তাফিলোর রক্ষক বীর যোদ্ধা তারা আছেন তার সঙ্গে? তারা দৃশ্যটা দেখে একমুহূর্ত সময় নষ্ট করেনি। ঘাড়ের লোম ফুলিয়ে হাঁকার ছেড়ে এসে সে ঝাঁপ দিয়ে পড়েছে কুকুরের ওপরে। তারপর—অবিশ্বাস্য ব্যাপার, ধাক্কা মেরে কুকুরকে হঠিয়ে দিয়ে তাড়া করে তাকে পাড়াছাড়া করে দিয়ে এসেছে একেবারে। ভাবো একবার কারবারটা!
বিশ্বাস না হলে যুদ্ধের এই ভিডিওটা দেখে নাও শুধু।
পশুক্লেশ নিবারণ সমিতির পুরষ্কারটা এবার তাই কুকুরের বদলে বেড়াল তারার কপালেই গিয়েছে। সঙ্গে উপরি পুরষ্কার এক বছর ধরে খাবার মত বাজারের সেরা ক্যাটফুড।
সে নয় হল। কিন্তু বিপদে পড়লে আবার এ শহরে কুকুরই বেড়ালকে রক্ষা করে। গত শনিবার এক আপার্টমেন্ট হাউসে তেমন একটা ঘটনা ঘটে গেল। টোস্ট নামে একটা বেড়াল রাস্তায় সান্ধ্যভ্রমণ করছিল এমন সময় হঠাৎ বেজায় ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। কড় কড়াৎ করে বাজটাজ পড়তে আরম্ভ করল। টোস্ট তাতে বেজায় ঘাবড়ে গিয়ে সামনে একটা অ্যাপার্টমেন্ট দেখে সটান সেইখানে গিয়ে সেঁধিয়েছে। সেখানে ছিল দুশমনের মত দেখতে এক বিরাট কালো কুকুর। টোস্ট দিগ্বিদিকজ্ঞান হারিয়ে সটান গিয়ে কুকুরের কোলে ঝাঁপ, “এ বিপদে তুইই আমায় বাঁচা দাদা।”
কুকুর সঙ্গেসঙ্গে বেড়ালকে একেবারে তার কোলের ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে তাকে স্বান্তনাটান্তনা দিয়ে একেবারে চেপে বসল তার ওপরে। জানালা দিয়ে বিদ্যুৎ চমকায় আর সে-ও সঙ্গে সঙ্গে হাউমাউখাঁউ করে দাঁত দেখিয়ে গর্জন করে বিদ্যুতকে ভয় দেখায় বিল্লিকে কোলের কাছে লুকিয়ে রেখে। আজ সে কিছুতেই বিদ্যুতকে তার আশ্রিত টোস্টের কোন ক্ষতি করতে দেবে না।
কালু তাহলে ঐ বজ্জাত কুকুরের জন্য তাদের যে বদনামটা হয়েছিল তার খানিকটা উদ্ধার করে দেখাল।
তাই বলি, লস এঞ্জেলসের কুকুরবেড়ালদের কিছু একটা হয়েছে। নইলে এমন সব–