জয়ঢাকের বিপুল ভূতের আড্ডা
দেশি ভূত
হরিদ্বারের সেই মহিলা
এ-গল্পটা হরিদ্বারের কোনো কোনো মহল্লায় এখনো শুনতে পাবে। এক রিকশাওয়ালার গল্প।
একদিন হরিদ্বারের কোনো এক মহল্লায় এক বয়স্ক মহিলা তার রিকশায় উঠে বলেন হর কি পৌরি চলো।
মহিলা বেশ মোটাসোটা, গোলগাল। পাহাড়ি পথে এঁকে নিয়ে চলতে তার একটু কষ্টই হবে বলে ভেবেছিল রিকশাওয়ালা। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, পেডালে চাপ দিতে সে দেখে, এ-যে একেবারে পালকের মত হালকা! শাঁ শাঁ করে রিকশা চালিয়ে সে হর কি পৌরি পৌঁছুতে বেশি সময় নিল না তাই।
ঘাটের কাছে এসে মহিলা রিকশা থেকে নামলেন। তারপর রিকশাওলাকে বললেন, “একটু দাঁড়া, আমি একটা ডুব দিয়ে আসি। আর ততক্ষণ এইটে তুই রাখ বাবা।” এই বলে রিকশাওয়ালার হাতে একটা ন্যাকড়ার ছোটোখাটো, ভারী পুঁটুলি দিয়ে তিনি স্নানে গেলেন।
সেখানে প্রায় ঘন্টাখানেক দাঁড়িয়ে থেকেও মহিলা যখন ফিরলেন না তখন রিকশাওয়ালা সন্দেহ হতে ঘাটে গিয়ে দেখে জলে তখনো তাঁর পোশাকগুলো ভাসছে। মহিলা কোথাও নেই। স্নান করতে আসা লোকজন অবশ্য বলল, তারা অমন চেহারার কাউকে জলে নামতে বা ডুবে যেতে দেখেনি।
রিকশাওয়ালা এবার যেখান থেকে মহিলাকে রিকশায় তুলেছিল সেখানে ফিরে এসে খোঁজখবর নিল। মহিলার চেহারার বর্ণনা শুনে সেখানকার পুরোনো লোকজন বলল, এমন একজন সেখানে থাকতেন কিছুদিন আগে। মারা যাবার আগে একটাই দুঃখ ছিল তাঁর গঙ্গায় শেষবারের মত একটা ডুব দিয়ে নেয়া। সে ইচ্ছে নাকি তাঁর পূরণ হয়নি।
রিকশাওলা ফিরে এসে সেই ন্যাকড়ার পুঁটুলিটা খুলে তার মধ্যে বেশ ক’টা দামি রত্ন পেয়েছিল।
বিদেশী ভূত
ছোটো ছোটো দুটি হাত
(এক প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ থেকে)
আমি কখনো ভূতের বাড়িতে থাকিনি। আমার মা থেকেছেন। যে পাড়ায় তাঁর বাপের বাড়ি, সেখানে আরো অনেক বাড়িতেই ভূতপ্রেতের উপদ্রব ছিল খানিক খানিক। সে পাড়ার এক বাড়িতে একটা লোক থাকত তার বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে। একদিন তাদের এক মেয়ে রাতে খুব মাথাব্যথা নিয়ে শুতে গেল। পরদিন দেখা গেল সে বিছানায় মরে পড়ে আছে।
তার পারলৌকিক কাজকর্ম সেরে পরিবারটা কোথাও ঘুরতে গেল। বোধ হয় মনখারাপ কমাবার জন্য। যাবার আগে ভদ্রলোক আমার মামাকে এসে বললেন বাড়ির পুষ্যিদের দিকে যাতে তিনি একটু খেয়াল রাখেন।
আমার বাবাও সেকি এলাকাতেই থাকতেন তখন। তিনি তখন পশুচিকিৎসক হবার জন্য পড়াশোনা করছেন। পরিবারটা ঘুরতে চলে যাবার কিছুদিন বাদে আমার মা, মামা আর বাবা মিলে একদিন সে বাড়িতে গেলেন।
বাড়িতে গিয়ে বাবা আর মামা মিলে চললেন বেসমেন্টে রাখা পুষ্যি প্রাণীদের দেখাশোনা করতে। মা রইলেন একা। সে-বাড়ির একতলাতে একটা গ্র্যান্ড পিয়ানো ছিল। দেখে মায়ের শখ হল সেটা বাজাবেন। তা যেই না বাজানো শুরু করা অমনি মায়ের মনে হল তাঁর গোড়ালিতে কীসের ছোঁয়া লাগল। মা ভাবলেন বেড়ালটেড়াল কিছু হবে। বেসমেন্ট থেকে দরজা খোলা পেয়ে বেরিয়ে এসেছে। তাই সেদিকে খেয়াল না দিয়ে ফের পিয়ানোর চাবি টিপতে লাগলেন। তারপর হঠাৎ ফের তাঁর গোড়ালিতে কে যেন ছুঁল। এইবার মা কৌতুহলী হয়ে পিয়ানোর তলায় উঁকি মারলেন। কিন্তু সেখানে তখন কিচ্ছু নেই। এইবার যেই উঁচু হয়ে ফের পিয়ানোর চাবিতে হাত দেয়া অমনি কে যেন তলা থেকে তাঁর পা দুটোকে চেপে ধরল। মা কোনমতে লাফ দিয়ে উঠে বেসমেন্টের দরজায় গিয়ে বাবা আর মামাকে প্রাণপণে ডাকতে শুরু করলেন।
খানিক বাদে বেরিয়ে এসে মায়ের অবস্থা দেখে মামা জিজ্ঞাসা করলেন, “কী হয়েছে?”
কী হয়েছে তা বলতে মামার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। বললেন, “ও-বাড়ির যে মেয়েটা মারা গেছে সে তার বাবার সঙ্গে একটা মজার খেলা খেলত। বাবা পিয়ানো বাজাতে বসলেই সে হামাগুড়ি দিয়ে পিয়ানোর তলায় ঢুকে বাবার গোড়ালি দুটো চেপে ধরত আর পিয়ানোর পেডালের ওপর সেগুলো ওঠানামা করাত।
জয়ঢাকের বিপুল ভূতের আড্ডা