জয়ঢাকের বিপুল ভূতের আড্ডা
ভূতের বাড়ি
অ্যামিটিভিলের ভূতের বাড়ি
ন্যু ইয়র্ক থেকে মাইল ত্রিশেক দূরে লং আইল্যাণ্ডের অ্যামিটিভিল শহরে কখনো গেলে এই বাড়িটার খবর পাবে।
১৯৭৪ সালে এই বাড়িতে রোনাল্ড ডিফো জুনিয়র নামে এক তেইশ বছরের যুবক একটা পয়েন্ট থ্রি ফাইভ মার্লিন রাইফেলের গুলিতে তার বাপ, মা, আর চার ভাইবোনকে খুন করেছিল।
হত্যাকাণ্ডের তেরো মাস বাদে বাড়িটাকে জলের দরে কিনে নেয় স্থানীয় লুত্জ্ পরিবার। তবে ঠিক চার সপ্তাহ বাদে তারা বাড়িটা ছেড়ে পালায়। তাদের মুখে শোনা রক্তজল করা গল্পগুলো থেকে সে-বাড়ির ভূতের বাড়ি হিসেবে জগতজোড়া কুখ্যাতির শুরু হয়।
পরিবারের মাথা জর্জ লুত্জ্-এর তন্ত্রমন্ত্রের চর্চায় বেশ উৎসাহ ছিল। এ-বাড়িতে আসবার পর থেকে রোজ ভোর সোয়া তিনটেয় তার ঘুম ভেঙে যেত। সময়টা গুরুত্বপূর্ণ কারণ ঠিক ওই সময়েই রোনাল্ডের গুলিতে তার পরিবারের প্রাণ গিয়েছিল। এরপর রান্নাঘর থেকে ভেসে আসত শানের ওপর ছুরি ধার দেবার শব্দ। জানালায় ভেসে উঠত কোনো অজানা জন্তুর মুখ। আগুণে চোখে তা তাকিয়ে দেখত লুত্জ-এর দিকে। অবশেষে একদিন ভোররাতে ঘুম ভেঙে লুত্জ্ যখন দেখেন তাঁর স্ত্রী আর দুই ছেলে বিছানা ছেড়ে বাতাসে খানিক ভেসে উঠে স্থির হয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে সেদিনই তিনি স্থির করেন কিছু একটা করা দরকার। এক পাদ্রিকে ডাকা হয় এরপর। ভদ্রলোক বাড়ির ভেতরে পা দিতে পারেননি। তার আগেই কেউ বাড়ির ভেতর কোনো অদৃশ্য জায়গা থেকে বিকট গলায় একটা শব্দ করে উঠেছিল। ভয় পেয়েছিলেন পাদ্রিসাহেব। বলেছিলেন, শব্দ নয়, তিনি পরিষ্কার মানুষের গলা শুনেছেন। তাঁকে বাড়ির ভেতর পা রাখতে নিষেধ করেছে তা।
তবুও এত ভালো একটা সস্তায় পাওয়া সম্পত্তি ছেড়ে যেতে তৈরি ছিলেন না লুত্জ্। কিন্তু এরপর দুটো ঘটনা ঘটে। প্রথমটা হল, তাঁদের ছোটো মেয়ে মিসি হঠাৎ করেই দ্রুত বদলে যেতে থাকে। বদলে যেতে থাকে তার আচরণ। যেন সে অন্য কেউ। খবর পাওয়া যায় তার সঙ্গে নাকি বাড়ির ভেতর কাউকে একটা দেখা যাচ্ছে প্রায়শ। মিসিকে প্রশ্ন করতে জানা যায় তার নাম জোডি। অন্য কেউ তাকে কখনো দেখতে পেত না। আর দ্বিতীয় খবরটা আরো বিপজ্জনক। খুনে রোনাল্ড তখন জেল-এ। সেখানে তার জবানবন্দি থেকে জানা যায় তার সঙ্গেও নাকি ও-বাড়ির ভেতর কারো একটা আলাপ হয়েছিল। নাকি তার আদেশেই সে তার গোটা পরিবারকে খুন করেছে।
রোনাল্ডের জবানবন্দি , আর মিসির অদেখা বন্ধুর আবির্ভাব এই দুই মিলে লুত্জ্রা এর পরে আর সে-বাড়িতে থাকতে সাহস করেননি।
এরপর বেশ কয়েকবার হাতবদল হয়েছে ওই বাড়ি। কোন মালিকই সেখানে টিকতে পারেননি। বাড়িটার কুখ্যাতি তাকেপ্রবাদে পরিণত করেছে ধীরে ধীরে। তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে বিখ্যাত চলচ্চিত্র। লেখা হয়েছে বই। উপস্থিত এ বাড়িটা কোন একজন ফের জলের দরে কিনেছেন। অবশ্য বেনামে। দেখা যাক থাকতে এলে তাঁর কী পরিণাম হয়!