চেন্নাইতে গেলে সেখানে গাড়িঘোড়া ঠাসা সেন্ট মেরিজ রোডের কাছাকাছি একটা বিশেষ গলিতে ঢুকে পড়ে যদি দেখ রাস্তাটা বেজায় ফাঁকা তাহলে সেখানে না দাঁড়িয়ে বড়োরাস্তায় ফিরে এস তক্ষুণি। সেখানে সন্ধের পরে ট্যাক্সি ঢোকে না। এমনকি কাগজকুড়ুণির দলও অন্ধকারে জায়গাটাকে এড়িয়ে যায়।
দিনের বেলা সেখানে ফিরে গেলে দেখবে রাস্তায় কাছাকাছি প্রায় একরকম দেখতে দশখানা বাড়ি আছে। ও সেগুলো সবই ফাঁকা। অত ব্যস্ত শহরের মাঝখানে অমন একখানা জায়গা! অথচ সেখানে কেউ থাকে না। এই হল দে মন্টে কলোনি। শোনো তার গল্প বলি।
এ কলোনি বহুকালের পুরোনো। উনিশ শতকের শেষের দিকে তৈরি। তখন এর মালিক ছিলেন পণ্ডিচেরির এক পর্তুগিজ সাহেব। তাঁর নাম দে মন্ট। এই কলোনিরই এক বাড়িতে স্ত্রীপুত্র নিয়ে সুখের সংসার ছিল। আরবুথনট দে মন্টে অ্যান্ড কোম্পানির মালিক ছিলেন তিনি। আমেরিকায় মাদ্রাজি লাল রেশমের রুমাল রফতানি করতেন।
কিন্তু তারপর হঠাৎ দুর্যোগের দিন এল তাঁর জীবনে। দুর্ভাগা মানুষটার কোম্পানি ফেল করল ১৯০৬ সালে। তবুও সামলে উঠছিলেন তাঁরা, কিন্তু তারপর এল দ্বিতীয় আঘাত। একদিন ফ্রান্স থেকে ভারতে আসবার পথে সমুদ্রের বুকে জাহাজের ভেতর রহস্যজনকভাবে মারা গেল তাঁর একমাত্র ছেলেটা। দুঃখেশোকে পাগলের মত হয়ে গেলেন দে মন্ট। শোকেদুঃখে তাঁর স্ত্রী হয়ে উঠলেন মানসিক রোগি। রাতদিন বলতেন, কোন অশুভ আত্মা অনুসরণ করছে তাঁদের। পরিবারের কাউকে সে ছাড়বে না। তারপর, ১৯২১ সালে একদিন সত্যিই দেখা গেল তাঁরাও মরে পড়ে আছেন তাঁদের কলোনিতে।
মৃত্যুর আগে দে মন্ট কলোনি সহ তাঁর সমস্ত সম্পত্তি সম্পত্তিটা স্থানীয় গির্জার নামে উইল করে গিয়েছিলেন দে মন্ট। কিন্তু মারা গেলেও তাঁর আত্মার সম্ভবত মুক্তি হয়নি। কলোনির মায়া ছাড়তে পারেননি তিনি।
মৃত্যুর কিছুদিন পর থেকেই এলাকার লোকজন রাতের আলো আঁধারিতে কলোনির ফুটপাথে তাঁদের দেখা পেতে শুরু করে। কখনো কখনো কোন ঘরের তালাবন্ধ দরজা নিজে থেকেই খুলে যায় রাত্রে। তারপর অদৃশ্য অতিথিকে ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়েই যেন, বন্ধ হয়ে যায় ফের। চার্চ অনেক চেষ্টা করেও মানবকল্যানের কোন কাজে লাগাতে পারেনি জায়গাটাকে। দে মন্ট তাঁর অধিকার ছাড়তে নারাজ। হতাশ হয়ে চার্চ সে সম্পত্তি, হাউজিং বানাবার জন্য লিজ দেয় এসুন কোম্পানিকে। সে লিজ শেষও হয়ে গেছে। এখানে আর কেউ কখনো থাকতে পারেনি।
মালিকহীন নির্জন বাড়িগুলোকে নিয়ে পড়ে রয়েছে দে মন্ট কলোনি।
আশপাশের মানুষজন অনেক গল্প বলে এ কলোনিকে নিয়ে। কিছুকাল আগে এক পাহারাদার বসানো হয়েছিল সেখানে। তিনরাত্রিও যায়নি তার। তার আগেই তাকে মরে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল কলোনির দুখানা রাস্তার মধ্যে একটার ওপরে। পুলিশ বলেছিল, কেউ তাকে খুন করেনি। রাস্তাদুটোয় বারে বারে আলো বসাবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে লাগাবার দুচারদিন পরেই সেগুলো নিজেনিজেই খারাপ হয়ে যায়। কয়েকবার তেমন হবার পর সে চেষ্টাও ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
জয়ঢাকের ভূতের আড্ডার সব লেখা