আগের পর্বে= ভূতের বাড়ি-বেল উইচ গুহা
এ বাড়ির জাত আলাদা। পুর্ণ চেহারার ভূতেরা হেঁটে বেড়ায়, জিনিসপত্র হাওয়ায় উড়ে যায়, এক জায়গা থেকে হারিয়ে গিয়ে ফের ফেরত আসে আরেক জায়গায়। শোনা যায় অদৃশ্য আসবাবপত্র টানাটানি করবার শব্দ, জন্তুজানোয়ারের চিৎকার, অশরীরি মানুষের গলার স্বর।
তবে শুধু চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন করেই ক্ষান্ত নন এখানকার তেনারা। ভূত খোঁজারুদের অনেকেই এখান থেকে অদৃশ্য হাতের খিমচি, কিলচড়, ছ্যাঁকা খেয়েছেন। তবে এসব আক্রমণ সবচেয়ে বেশি ঘটেছে টোনি পিকম্যানের ওপরে। তাঁর ওপরেই সবচেয়ে বেশি রাগ ছিল এ বাড়ির তেনাদের।
১৯৯৩ সাল নাগাদ বউ আর ছোটো এক বাচ্চাকে নিয়ে টোনির, অ্যাচিসন কানসাস-এর ৫০৮ নর্থ সেকেন্ড স্ট্রিট-এর এ বাড়িতে প্রবেশ আর তার সঙ্গেসঙ্গেই ভূতেদের রোষদৃষ্টিতে পড়া। খবর ছড়াতে সে সময়ের সেরা দুই ভূত খোঁজারু, পিটার জেমস ও বারবারা কোনর এসেছিলেন তাঁকে সাহায্য করতে। ফল হয়নি। সেই থেকে এখনও এ বাড়ির ভূতদের নিয়ে গবেষণা চলছে। প্রথম প্রথম ভাবা হয়েছিল টোনি নিজেই বুঝি কোন কায়দাকানুন করছেন সস্তায় বিখ্যাত হবার জন্য। কিন্তু ১৯৯৪ সালের অক্টোবরে ভূতের ভয়ে সপরিবারে বাড়ি ছাড়বার পরও ভূতশিকারীরা তাঁদের যন্ত্রমন্ত্র নিয়ে এ বাড়িতে ঢুকে মহা আশ্চর্য সব শব্দবাদ্য রেকর্ড করে ফেলেছেন। অনেকে বলেন, ভূতটুত নয়, এই বাড়িটারই একটা অশুভ চেতনা আছে। অনেকের মতে, এখানে কিছু দুঃখী ভূতের বাস, যারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছে প্রাণপণে।
এ বাড়িতে এখন নিয়মিত ভূত গবেষকদের যাতায়াত। ডিজিটাল ভয়েস রেকর্ডার, অবলোহিত ও তাপ সংবেদি ভিডিও ক্যামেরা, তড়িচ্চুম্বকীয় মিটার এমন সব যন্ত্রপাতি নিয়ে নিয়মিত এ বাড়িতে চলে অশরীরি উপস্থিতি খোঁজবার কাজ। কেউ কেউ তো এ বাড়িতে প্ল্যানচেট করে তার অলৌকিক বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপচারী করবার চেষ্টাও করে চলেছেন।
বাড়িটার নাম অবশ্য হয়েছে টোনির নামে নয়। ১৯০৫ সালে এ বাড়িতে স্যালি ইজাবেল হল নামে এক মহিলা মারা যান। লোকজনের ধারণা সে-ই এ বাড়ির ভূত সমাজের আদি বাসিন্দা। টোনি একবার তাকে দেখতে পেয়ে তার একটা স্কেচও করেছিলেন। সে স্কেচ একটা বাচ্চা মেয়ের। সঙ্গে সে স্কেচ রইল। ইতিহাসের স্যালি ছিলেন রীতিমতন একজন মহিলা। এইটেও একটা রহস্য এ বাড়ির। একই মানুষ জীবন্তে একরকম, আর মারা যাবার পর অন্য রূপ। সে যাই হোক, এই স্যালির কথাটাই বিখ্যাত হয়ে গিয়ে বাড়ির নামই হয়ে গেছে স্যালি হাউস। তবে পরবর্তী সময়ে নতুন নতুন উপদ্রবের লিস্টি ক্রমাগত বেড়ে চলায় অনেকেরই ধারণা এ বাড়িতে নিত্যনতুন অশরীরি বাসিন্দাদের হাজিরা বেড়ে চলেছে।
টোনি আর ডেবরা অবশ্য এ বাড়ির মায়া কাটাতে পারেননি। এখানকার তেনাদের নিয়ে গবেষণায় তাঁরা এখনো জড়িত। তৈরি করে ফেলেছেন একটা সংস্থাই, যার কাজ এ বাড়ির ভূতগবেষণায় মদত জোগানো। তা সেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এ বাড়ির ভূতদের যা কথাবার্তা রেকর্ড হয়েছে তার মধ্যে থেকে অশরীরি বাসিন্দাদের একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেটা এইরকমঃ
অ্যাগনেস ফিনিঃ এ বাড়ির আদি মালিকের কন্যার পেত্নী।
ব্র্যান্ডনঃ ভারিক্কি গলা। রসিক। আচ্চাদের ভালোবাসেন। ভৌতিক কার্যকলাপের লক্ষ থাকে বাচ্চাদের মজা দেয়া।
চার্লস ফিনিঃ বুড়োটে গলা। মেয়েদের পোশাক পরে ঘুরতে ভালোবাসেন। পেশায় ডাক্তার। শ দেড়েক বছর আগে জ্যান্ত দশায় তিনি একবার এলাকার মেয়র হয়েছিলেন, কিন্তু মদ সংক্রান্ত আইন ভাঙায় তাঁর চাকরি যায়। এখনো তাই নিয়ে তিনি রেগে আছেন।
এডিথঃ বুড়ি থুত্থুরি ভূত। কানে কম শোনে। এক কোণে পড়ে আছে নিরীহ আত্মা।
এথেলঃ এ বাড়ির আরেক প্রাক্তন মালিক।
ফ্র্যাংক জুনিয়রঃ কানসাস শহরের বাসিন্দা ফ্র্যাংক ১৯০৬ সালে মারা যায়। তার মা জোয়ানা ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ঘরের গ্যাস কানেকশানের ছিপি খুলে দিয়েছজিলেন। সে এখন স্যালি হাউসে এসে জুটেছে।
ফ্র্যাংক সিনিয়রঃ মাঝেমধ্যে জোয়ানা বাড়িতে বেজায় ঝামেলা জুড়লে সে ঝামেলা মেটাবার জন্য উদয় হন। ভূত ভালো তবে কিনা জোয়ানার সাথে বেজায় খটাখটি তাই বেশিক্ষণ টিকতে পারেন না।
জোয়ানা বার্নস্- এ বাড়ির ভূতসমাজের সবচেয়ে শক্তিময়ী সদস্যা। ১৯০৬ সাল অবধি এ বাড়ির কাছাকাছিই তার বাস ছিল। তারপর ফ্র্যাংক সিনিয়ারকে বিয়ে করে কানসাস সিটিতে চলে গেলেও সেখানে সেই গ্যাস দুর্ঘটনায় ছেলের সঙ্গে নিজেও মারা যায়। এখন সে স্যালি হাউসের দণ্ডমুণ্ডের কর্তাপেত্নী। তবে তেজি হলেও জোয়ানা লোক মন্দ নয়।
পলঃ এ ছিল এক ক্রীতদাস ছেলে। গণোধোলাইতে মৃত্যু হয়। এ বাড়িতে আগুণের যেসব ভূতুড়ে খেল দেখা যায় সেগুলো এই পল-এর কীর্তি। জোয়ানা পলকেচোখের আড়াল করেন না। কখনো নিজে ব্যস্ত থাকলে অন্য কোন বয়স্ক ভূতের ওপর দায়িত্ব পড়ে পলকে নজরে রাখবার।
রায়ানঃ স্যালি্র ভাই।
স্যালিঃ ভারী মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে। পিকম্যানের বাচ্চাটিকে বড়ই ভালোবাসত। তবে যেহেতু তার ভাই ও বাবা এ বাড়িতেই থাকেন তাই পিকম্যানরা বাড়ি ছাড়বার পরেও সে এখানেই রয়ে গেছে।
টম বার্নস্- ১৮৮৫ সালে জন্ম। মিসৌরি রেলরোডের ট্রেনচালক ছিলেন। পরে সেলসম্যান হন। এখনো ট্রেনচালকের উর্দি পরেই ঘুরতে দেখা যায় তাঁকে। অনেকে তাঁকে সিভিল ওয়ারের সৈনিক বলেও মনে করেন।
টম বার্ন্স (২) ১৯৫৯ সালে মৃত্যু। স্যালি হাউসের খানিক দূরে বাড়ি ছিল। ওষুধের দোকানের মালিক ছিলেন।
এই দুই বার্নসই ক্যাথলিক ছিলেন। একই কবরখানায় দুজনের কবর আছে। দুজনেই ফিনির বিশেষ পরিচিত। ফিনি ডাক্তারের বার্নস(২) এর ওষুধের দোকানে যাতায়াত ছিল, আর তিনি মিসৌরি রেল কোম্পানিতে ডাক্তারের চাকরি করায় বার্ন্স,(১) কেও চিনতেন। মরবার পর তাই দুই বার্ন্স এসে ফিনির বারিতে ঘাঁটি গেড়েছেন।
ওয়ান্ডাঃ জোয়ানার সখী। ডাকলে দিব্যি সাড়া দেন।
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, স্যালি হাউসে ভূতেদের এহেন মেসবাড়ি আসলে কোন ভয়ানক অশুভ অস্তিত্বের মালিকানায় তার অঙ্গুলীহেলনে চালানো হয়। সেই অশুভ অস্তিত্বের উপস্থিতি টের পাওয়া গেলেও সে মহাপ্রভুর প্রত্যক্ষ দর্শন এখনো মেলেনি।
জয়ঢাকি ভূতের আড্ডা